×

মুক্তচিন্তা

সহসম্পাদক নিয়ে আওয়ামী লীগে অনভিপ্রেত ঘটনা

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮, ০৮:৪৮ পিএম

নিঃসন্দেহে তরুণরা হচ্ছে রাজনৈতিক ময়দানে দলের প্রধান শক্তি। এই শক্তিকে এখন সংহত করে নির্বাচনী কাজে নামা ভিন্ন বিকল্প আর কিছু নেই। এটা ঠিক দলের জন্য নিঃস্বার্থভাব কাজ করলে দলে মূল্যায়ন পাওয়ার আকাক্সক্ষা জাগ্রত হয়। এই বিচারে কাজ করা ও পদ পাওয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। তবে পদ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে মান-অভিমান, বাদ-প্রতিবাদ করার সময় এখন নয়। কাজের মূল্যায়ন হবে, এই আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রেখে সবাই মিলে নির্বাচনী কাজে নেমে দলকে জেতানোটাই এখন বড় কথা।

চেতনায় প্রত্যাশা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারে নামছেন, পদ্মাসেতুর দ্বিতীয় স্প্যান উঠছে- এই দুই খবরে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী জনগণ যখন দারুণভাবে চাঙ্গা; ঠিক তখনই দুটো ঘটনা তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনাকে এমনভাবে আঘাত করল; যা একেবারেই অভিপ্রেত ছিল না। ঘটনা দুটো হলো- এক. নারায়ণগঞ্জে মেয়র আইভীর ওপর সশস্ত্র হামলা, দুই. দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসম্পাদক পদ নিয়ে কেলেঙ্কারি। দুটো ঘটনার ক্ষেত্র হলো সংগঠন। নির্বাচনী বছরের শুরুতে নির্বাচনের কাজে সংগঠন যেখানে প্রধান ভূমিকা রাখার কথা, সেই সংগঠনে এই দুই ঘটনা একেবারেই ভালো লক্ষণ যে নয়, তা বলার অপেক্ষা রখে না। বিসমিল্লায়ই গলদ দেখা দিল সংগঠনে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা শহরের সঙ্গেই নারায়ণগঞ্জ এবং মুখোমুখি দুই আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি সাংসদ ও মেয়র মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন, তাই ঘটনার যথেষ্ট গুরুত্ব এবং রাজনীতিকে প্রভাবিত করার যথেষ্ট ক্ষমতা থাকলেও এর সঙ্গে যুক্ত আছে নারায়ণগঞ্জবাসী। প্রসঙ্গত বলতেই হয়, মানুষ যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকে, তবে তা জটিল ও কঠিন হলেও সমাধানযোগ্য। কেননা মানুষই সমাধানের পথরেখা সৃষ্টিতে নেতৃত্বকে সহায়তা করে। তাই নারায়ণগঞ্জের অনভিপ্রেত ঘটনা আওয়ামী লীগ সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্বিগ্ন করলেও এবারে আরো ভালোভাবে পথরেখা যেন তারা দেখতে পাচ্ছেন। কেননা নারায়ণগঞ্জের মানুষ এবারেও দেখিয়ে দিচ্ছে, তারা কোন নেতার পক্ষে রয়েছেন।

কিন্তু দুর্ভাগের বিষয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক পদ নিয়ে যে কেলেঙ্কারি নাটক সংঘটিত হলো, এর ক্ষেত্র সাংগঠনিক হলেও এর সঙ্গে গণমানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা তো কারোই অজানা নয় যে, এই কেলেঙ্কারিটা হয়েছে আওয়ামী লীগ দলের সভাপতির অফিস থেকে। কেবল গঠনতন্ত্র বিবেচনায়ই নয়, আওয়ামী লীগে সভাপতি শেখ হাসিনার তুলনাহীন বিশেষ এক অবস্থান রয়েছে। সভাপতির অফিস সেই বিচারে আওয়ামী লীগ দলের প্রাণকেন্দ্র স্বরূপ। সভাপতির সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের সংযোগ স্থল হচ্ছে ওই অফিস। এই অফিসেই ঘটেছে জনসম্পৃক্তহীন ওই নাটক। শর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত প্রবাদ বা বেহুলার বাসরঘরে সাপ প্রবেশের গর্ত গল্পটাকেই কেবল এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। সর্বোপরি আরো দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিকে কান পাতলে শোনা যাবে বা সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশিত খবর অনুযায়ী, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অফিস সম্পাদককে এই অনভিপ্রেত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। গুরুত্ব বিচারে আওয়ামী লীগ সংগঠনে যত অনভিপ্রেত ও ক্ষতিকর কাজ সংঘটিত হচ্ছে বা হয়েছে, এর মধ্যে এই কাজটিকে প্রথমে রাখা যেতে পারে।

লক্ষ করার মতো বিষয় এই যে, আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। ইতোমধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু গঠনতন্ত্রের নিয়ম মোতাবেক সহসম্পাদক পদ পূরণ করা হয়নি। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষত আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা প্রচার রয়েছে, নির্বাচনের আগে দলের তরুণ নেতাদের চাঙ্গা করতে সহসম্পাদক পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। এমন প্রচার হওয়ার কারণ হচ্ছে, গত ২০১২ সালে গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রথমে ৬৬ জন সহসম্পাদক মনোনয়ন দেয়া হয়। পরে আরো প্রায় ৪৫০ জনকে এবং ২০১৩ সালে অগণিত জনকে নাকি নানাভাবে সহসম্পাদক করা হয়। এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, কতজন সহসম্পাদক তখন ছিল, তা নাকি কেউ জানত না। সহসম্পাদকদের সংখ্যা কত, এত সদস্য হলো কীভাবে, তাদের কাজ কী, সহসম্পাদকদের ভিড়ে হাঁটা যায় না, গঠনতন্ত্রের এমন দশা কেন প্রভৃতি নিয়ে পরবর্তী সময়ে রাজনীতির অঙ্গনে নানা ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। সহসম্পাদক যারা তখন হয়েছিলেন, তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে হয়, এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক পদ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।

সহসম্পাদক নির্বাচন, যা ছিল গতবার খেলো ও হাস্যরসের বিষয়, তা এবারে দলের জন্য শঙ্কা ও ভয়ের বিষয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, পাকিস্তান আমলের শুরুতে ১৯৪৮ সালে জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলটিকে জটিল-কঠিন বিপদসংকুল ও রক্তরঞ্জিত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়সহ বড়ছোট বহু জতীয় অর্জনের সঙ্গে তাই জড়িত হয়ে আছে দলটির নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগ, জীবনদান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ বহু নেতার রক্তের বিনিময়ে দলটি আজ বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে এবং দেশ ও জনগণের ভাগ্য এই দলটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে বিধিলিপির মতো জড়িয়ে গেছে।

একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, পাকিস্তান আমল থেকে এই দলের রাজনীতি ও সংগঠনের যে শত্রু ছিল, সেই শত্রুর এখন নাম পরিবর্তিত হলেও একই রয়েছে এবং ওই শত্রু নৃশংস ও ভয়াবহ। সুদীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা এটাই বলে, আওয়ামী লীগ দলের ভেতরে সহজেই এই শত্রু যেমন অবস্থান নিতে পারে, তেমনি সময় ও সুযোগ পেলে যথাস্থানে ছোবল দিতে ওই শত্রু কুণ্ঠিত হয় না। উগ্র জঙ্গিদের গোপন ও নাশকতামূলক কাজের ভেতর দিয়ে ওই শত্রু ক্রমেই আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।

এই বাস্তবতায় খোদ সভাপতির অফিসেই যদি থাকে এমন ফাঁক-ফোকর, তবে তা কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, তা কি কল্পনা করা চলে। ফাঁক-ফোকর কোন বিপদ সৃষ্টি করে দিচ্ছে, তা বিবেচনায় নিলে সবটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। এবারের ফাঁক-ফোকর দিয়ে প্রণীত ও প্রকাশিত হওয়া তালিকায় সহসম্পাদক পদে শত্রুপক্ষের লোক দলে প্রবেশ করেছে। নামসহ পরিচয় যেহেতু প্রকাশিত হয়েছে, তাই এর প্রমাণও রয়েছে। কারা, কীভাবে, কিসের বিনিময়ে, কী জন্য এই নামগুলো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল প্রশ্নটা এ ক্ষেত্রে তাই ওঠাটাই স্বাভাবিক। প্রসঙ্গত দলের গঠনতন্ত্রে সাংগঠনিক উপকমিটি গঠনের কোনো বিধান নেই। আর সাংগঠনিক বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হলেও তা গঠন করা হয়েছে এবং পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক উপকমিটিতে এক বা একাধিক ছাত্র দলের নেতা বা ক্যাডাররা স্থান পেতে সক্ষম হয়েছে। নিঃসন্দেহে যে কোনো দলের জন্য অফিস উপকমিটিও গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। ওই উপকমিটিতে দুজন ছাত্রদলের ক্যাডারদের নাম যুক্ত রয়েছে। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, সহসম্পাদক থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির। সহসম্পাদক তালিকা যদি বাতিল না হতো, তবে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের কমিটি কী রূপ নিয়ে দাঁড়াতো তা কি কল্পনা করা যায়!

ফাঁক-ফোকর বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে আরো কিছু প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে এবং তা নিয়ে ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যম, রাজনৈতিক অঙ্গন ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। প্রশ্নগুলো হলো- এক. গঠনতন্ত্র মোতাবেক ‘সভাপতি বিভাগীয় (সম্পাদকীয় বিভাগ) উপকমিটিসমূহ গঠন করিবেন। তিনি প্রত্যেক উপকমিটির জন্য অনূর্ধ্ব পাঁচজন সহসম্পাদক মনোনীত করিবেন।’ প্রকাশিত তালিকা সভাপতি গঠন বা মনোনীত করেননি। তাই ফাঁকটা হচ্ছে, তাতে দপ্তর সম্পাদকের স্বাক্ষর দিলেন কীভাবে? দুই. কেউ যদি বলে এই তালিকা ছিল খসড়া এবং তা উপকমিটির সভাপতি বা সম্পাদকদের কাছে পাঠানোর জন্য অফিসে রাখা হয়েছিল, তবে বড় প্রশ্ন দাঁড়াবে ওই তালিকায় ছাত্রদলের ক্যাডাররা স্থান পেল কীভাবে? তিন. যত দূর জানা যায় দপ্তর সম্পাদকের স্বাক্ষর করা তালিকা তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেননি। যদি না দেন তবে অফিস থেকে তা দিল কে? কারা কীভাবে তালিকা নিয়ে তা প্রকাশ করে দিল?

উল্লিখিত সব ঘটনা ও প্রশ্ন দেখিয়ে দিয়ে গেল কেন্দ্রীয় অফিসের নিয়ন্ত্রণ কতটা আলগা এবং শত্রæদের অবস্থা ও অবস্থানের তুলনায় তা কতটা ঠুনকো। প্রবাদ বলে, শাল হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হওয়া। এমন অবস্থাই তো সৃষ্টি হয়ে রয়েছে খোদ সভাপতির কার্যালয়কে ঘিরে। এখানে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন তা হলো, প্রচারিতে সহসম্পাদক পদ বাতিল করলেই কি সব চুকে গেল? মনে হয় না তা চুকে গেল। আওয়ামী লীগ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী দল এবং এই দলের জনগণের কাছে অঙ্গীকার রয়েছে। লাখো কোটি মানুষ এই দলের প্রতি আস্থাশীল। এই দলের ক্ষতিকর কিছু ঘটলে দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বিচারে জনগণের কাছে এই দলের দায় রয়েছে। তাই বাতিল করলেই সব চুকে গেল, এমনটা মানা যায় না।

প্রসঙ্গত একটা কথা আওয়ামী লীগে বহুল প্রচারিত যে, বড় দলে এমন অনেক কিছুই থাকে বা ঘটে। তাই সব কিছু নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটির প্রয়োজন নেই। এই ঘটনার পরও উল্লিখিত কথা কানে এসেছে। আসলে এই মনোভাব আওয়ামী লীগে ব্যাপকভাবে থাকার ফলেই নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ হয়েও যদি জিততে পারা যায়, তবে সেই বিদ্রোহও জায়েজ হয়ে যায়। কেবল তাই নয়, দৃশ্যমান ও প্রচারিত অনৈতিক, জনবিরোধী ও দলবিরোধী কাজ করেও দলে থাকা বা পদ-পদবি বজায় রাখা ও পাওয়া আওয়ামী লীগে কঠিন নয়। অতীতে এই ধরনের মনোভাবের জন্য আওয়ামী লীগকে চরমতম মূল্য দিতে হয়েছে। খন্দকার মোশতাক যে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেনি এবং এলাকার মানুষ যে এই বকধার্মিককে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তা সবার জানা। কিন্তু এই ব্যক্তিটি শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। অনেক পানি যেমন বুড়িগঙ্গা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গেছে, তেমনি অনেক অভিজ্ঞতাও আওয়ামী লীগের ইতিহাস জমা করে রেখেছে।

এখন ভাববার তাই সময় এসেছে, বড় দল বলে সব কিছুকে জায়েজ না করার। পরিস্থিতি যা তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, এক ধাক্কায় সব হবে না। কিন্তু শুরু তো করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না শত্রু  দল ও বিরোধীদের মুখে ছাই দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিশাল সম্পদ এবং একমাত্র ভরসাস্থল। লাখো কোটি মানুষ এবং অগণিত নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীরা সম্পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস রাখে তার ওপরে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, এই আস্থা ও বিশ্বাস তিনি তার কাজ দিয়ে অর্জন ও পোক্ত করেছেন। একটা কথা কিন্তু স্মরণে রাখতেই হবে যে, এক সাফল্য যেমন আরো আরো সাফল্যের ভিত্তি সৃষ্টি করে, তেমনি সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে জঞ্জালও জমা হয়। সহজেই অনুধাবন করা যায়, ওই জঞ্জাল দূর করার ক্ষমতা দেশ-দশের নেত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রয়েছে। তাই অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে বলতেই হয়, বড় দল তাই সব জায়েজ বলে যে কথা বহুল প্রচারিত এবং যে কথার আড়াল নিয়ে সব ক্ষতিকর কাজ চলে, তা থেকে আওয়ামী লীগকে ক্রমে বের করে নিয়ে আসার সময় হয়েছে।

সহসম্পাদক নিয়ে কেলেঙ্কারির এই ঘটনা আরো একটি বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সামাজিক মাধ্যমে তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর যদি দলের ভেতর প্রতিবাদ না হতো তবে তা কিন্তু জায়েজ হওয়ার সম্ভাবনা নামমাত্র হলেও ছিল। এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে একটি বিষয় আলোচনা প্রয়োজন। অনেক সময়েই মনে হয় দলীয় সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনায় দলের ক্ষতি হয় বিধায় তা নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। কথাটা একদিক থেকে সঠিক এবং নির্বাচন সামনে রেখে তো আরো বিবেচনাযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো সবটা হজম করে নেয়া কি সঙ্গত? তা কি লাভজনক? এই প্রশ্নের মুখোমুখি দলের একজন হিসেবে লেখালেখি করি বিধায় প্রতিক্ষণেই পড়তে হয়। তবে দায়িত্বশীল সমালোচনা প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে তা কখনোবা করতেও হয়।

এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে বলতেই হয় যে, সহসম্পাদক নিয়ে কেলেঙ্কারির পর যে প্রতিবাদ দলের ভেতর তরুণ নেতারা করেছেন, তার ফলাফল ভালোই হয়েছে। ত্যাগী তরুণ নেতাদের মধ্যে প্রতিবাদী এই অভিব্যক্তি দলের শক্তির পরিচায়ক। নিঃসন্দেহে তরুণরা হচ্ছে রাজনৈতিক ময়দানে দলের প্রধান শক্তি। এই শক্তিকে এখন সংহত করে নির্বাচনী কাজে নামা ভিন্ন বিকল্প আর কিছু নেই। এটা ঠিক দলের জন্য নিঃস্বার্থভাব কাজ করলে দলে মূল্যায়ন পাওয়ার আকাক্সক্ষা জাগ্রত হয়। এই বিচারে কাজ করা ও পদ পাওয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। তবে পদ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে মান-অভিমান, বাদ-প্রতিবাদ করার সময় এখন নয়। কাজের মূল্যায়ন হবে, এই আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রেখে সবাই মিলে নির্বাচনী কাজে নেমে দলকে জেতানোটাই এখন বড় কথা। বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন সামনে রেখে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ধরে রাখার জন্য, দেশ ও জনগণের জীবন-জীবিকার উন্নতি অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য দেশের সর্বত্র আওয়ামী লীগের তরুণ নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবেন, এটাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনগণের একান্ত কামনা। ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়- এটা যে আপ্তবাক্য নয়, প্রয়োগের বিষয়; তা প্রমাণ করার দেশপ্রেমিক দায়িত্ব এখন আওয়ামী লীগের তরুণ নেতাদের ওপর এসে পড়েছে। এই দায়িত্ব তরুণ নেতারা কতটুকু পালন করতে পারেন, তা দিয়েই আগামীতে দেশ ও মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হবে।

শেখর দত্ত : রাজনীতিক, কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App