×

জাতীয়

শেখ হাসিনার সরকারের ৪ বছর : উন্নয়নের ধারা অব্যাহত, সুশাসন নিয়ে নানা প্রশ্ন

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:৪৭ এএম

শেখ হাসিনার সরকারের ৪ বছর : উন্নয়নের ধারা অব্যাহত, সুশাসন নিয়ে নানা প্রশ্ন
টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণের চার বছর পূর্ণ করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের সরকার। এই চার বছরে সরকারের সাফল্য যেমন আছে; তেমনি আছে নানা ব্যর্থতা। বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতার চার বছরে আগের মেয়াদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে সরকার। আছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গৌরবময় অনেক অর্জন। তবে সুশাসন নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। অন্যতম বড় দল বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে সমান সুযোগ না দেয়া এবং গুম-খুনের বিষয়টি সমালোচনায় বিদ্ধ করেছে সরকারকে। পঞ্চম বছরে পা রাখতে যাচ্ছে সরকার। চলমান বছরটি নির্বাচনের বছর। তাই সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে শেষ বছরে এসে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। গত নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স রেখে সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ এবার আরো জোরালো। সেইসঙ্গে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনোত্তর সহিংতার পর অনেকটাই নির্বিঘ্নেই কেটেছে। এ সময়ে সরকারকে ঘরে-বাইরে নানা সংকট মোকাবেলা করতে হলেও শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিজয় এসেছে। বিচারের মাধ্যমে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের সাজা কার্যকর হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর শতভাগ কাজ সম্পন্ন করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ৪৩ শতাংশ। সফলতা এসেছে তথ্য প্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতেও। দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের তালিকায় দশম স্থানে ঠাঁই পেয়েছেন শেখ হাসিনা। কঠোর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও সরকার সেগুলো সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। রাজপথে বিএনপিকে মোকাবিলা, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণ ও ১৪ দলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে পারা ও দলের দ্ব›দ্ব-কোন্দল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা সরকারের বড় সাফল্য। সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সিপিএ (কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোশিয়েসন) চেয়ারপারসন এবং সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ছিল দেশের এবং সরকারের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। এছাড়া আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে বাংলাদেশের সমপরিমাণ গভীর সমুদ্রে বিশাল অঞ্চল আদায়ের রীতিমতো বিপ্লবের ঘটনা সরকারের বড় দাগের সাফল্য হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আর বিদায়ী বছরের শেষে বাঙালির জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি হওয়ার পর অনন্য এক উচ্চতার শিখরে পৌঁছল বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। কৃষি, শিক্ষা, কূটনীতি, বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে ঘটেছে সরব বিপ্লব। চলতি বছরের শুরুতেই প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৫ কোটির বেশি বই বিতরণ করেছে সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৮৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩৫ লাখ সংযোগসহ ৬৫টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ২ হাজার মার্কিন ডলারে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। লক্ষ্য ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত করেছে জাতিসংঘ। এছাড়া হার্ভার্ড ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে করা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে রাষ্ট্রক্ষমতায় নারীর অবস্থান বিবেচনায় সবাইকে পেছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। মানবিক কারণে পাশ্বর্বর্তী দেশের লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন ‘বিশ্ব মানবতার জননী।’ সম্প্রতি জার্মানিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের (আইপিআরসি) এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫৪ ভাগ মানুষ মনে করে, সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নকে প্রধান সাফল্য মনে করেন ১৯ ভাগ, ১৮ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন জঙ্গি দমন ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন হলো বড় সাফল্য। সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ করলে গত চার বছরের এ সরকারের পাল্লা সফলতায় ভারি, তবে ব্যর্থতার পাল্লা কম হলেও গুরুত্বহীন নয়। অনেক সাফল্যই ব্যর্থতার কালো ছায়ায় আড়ালে পড়েছে। কিছু ব্যর্থতা বিশাল সাফল্যকে কালো মেঘে আড়াল করে দিয়েছে। হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০৮ কোটি টাকা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছে জাতি। আইপিআরসির জরিপ অনুযায়ী, যেসব ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হয়েছে তার মধ্যে প্রথমেই আছে দুর্নীতি দমন। ৪১ ভাগ উত্তরদাতা দুর্নীতি দমনে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে ২৩ ভাগ, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষার অধঃগতিকে ২১ ভাগ, বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ করাটাই সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা মনে করেন ৬ ভাগ উত্তরদাতা। এছাড়া, গুম-খনের বিষয়টি গত ৪ বছরে বারবার বিব্রত করেছে সরকারকে। কোনো কোনো ব্যক্তির হঠৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, কিছুদিন পর কারো কারো ফিরে আসা আবার কারো কারো একেবারেই হারিয়ে যাওয়া বিচলিত করেছে দেশবাসীকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা সমালোচিত হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এদিকে মেয়াদের চার বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দূরত্বের বরফ এতটুকুও গলেনি। বরং সময়ের ব্যবধানে ক্রমাগত বাড়ছে। যদিও মেয়াদের শেষ বছরে দেশের মানুষ বিগত নির্বাচনের জ্বালাও-পোড়াওয়ের আতঙ্ক ভুলে স্বপ্ন দেখছে সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই দাবি বিশেষজ্ঞদেরও। এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, নির্বাচনের বছর হলেও সরকারের চলমান কার্যক্রম উন্নয়মুখী। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার অনেক সফল। নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পরিস্থিতি অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক ভালো উল্লেখ করে এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বলেন, রংপুর সিটি নির্বাচন স্মরণকালের নির্বাচন। সামনেই ঢাকা সিটি (উত্তর) নির্বাচন। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App