×

মুক্তচিন্তা

কোচিং নৈরাজ্য রোধে দুদকের তৎপরতা সময়োপযোগী

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০১৮, ০৭:৩১ পিএম

কোচিং নৈরাজ্য রোধে দুদকের তৎপরতা সময়োপযোগী
কোচিং নৈরাজ্য রোধে দুদকের তৎপরতা সময়োপযোগী
কোচিং নৈরাজ্য রোধে দুদকের তৎপরতা সময়োপযোগী

কোচিং ব্যবসা যেমন অবৈধ অর্থ উপার্জন ও অনৈতিক আয় ভোগ করার অবারিত সুযোগ তৈরি করেছে, তেমনি এটি মেধা বিকাশের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবেও পরিণত হয়েছে। মহানগরীতেই নয়, সারা দেশেই চলছে এই অনৈতিক তৎপরতা। আমরা আশা করব দুদক এ ব্যাপারে তার অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা অপরাধীদের ব্যাপারে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

কোচিং বাণিজ্যের কাছে বলতে গেলে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। একাডেমিক কোচিং ছাড়াও ভর্তি কোচিং, চাকরির কোচিং ইত্যাদিও চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কোচিং বাণিজ্য বন্ধে বিভিন্ন সময় কড়া পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। তবে এ ব্যাপারে একটা আশার খবর হলো- দুদক এ সংক্রান্ত নৈরাজ্য রোধে তৎপর হয়েছে। সম্প্রতি অনুমোদনহীন কোচিং সেন্টার পরিচালনা ও অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ায় ৩০ কোচিং সেন্টারের মালিককে তলব করে তাদের কাগজপত্র নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আমরা দুদকের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করছি দুদকের এই তৎপরতাও অব্যাহত থাকবে।

সারা দেশেই কোচিংয়ের নামে ভয়াবহ বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। একাডেমিক কোচিং, ভর্তি কোচিং, চাকরির কোচিং- সবই চলছে রমরমা, নিয়ন্ত্রণহীন। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অনেকেই সরাসরি জড়িত এই কোচিং ব্যবসায়। বোর্ড, বিজি প্রেস, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারেও রয়েছে দুদকের অভিযোগ। এর আগে দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরের স্বনামধন্য আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছিল।

গতকালের ভোরের কাগজে দুদকের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ১১০টি কোচিং সেন্টারের মালিকের অবৈধ সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়। প্রথম ধাপে গত রোববার ৩০টি কোচিং সেন্টারের মালিকপক্ষকে ডাকা হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে সব প্রতিষ্ঠানের মালিককে ডাকা হবে। ১১০ সেন্টারের বিরুদ্ধে অবৈধ কোচিং, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভুয়া পরীক্ষার্থী সরবরাহ, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এই ১১০টি কোচিং সেন্টারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ৩৩টি, মেডিকেলে ভর্তির জন্য ১৫টি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ৫টি, মেরিন, টেক্সটাইল, ক্যাডেটের জন্য ৬টি, একাডেমিক কোচিং সেন্টার ১৮টি, বিসিএস ও অন্য চাকরির জন্য ১৪টি ও ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা শেখার ১৯টি কোচিং সেন্টারের নাম রয়েছে। এদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সংক্রান্ত কাগজপত্র নিচ্ছে দুদক। এগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একাডেমিক কোচিংয়ের ওপর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নির্ভরতা দেখলে মনে হবে স্কুল নয়, এগুলোই মূল শিক্ষালয়। অনেক ক্ষেত্রে কিছু শিক্ষক পরীক্ষার ফল প্রভাবিত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন প্রাইভেট কোচিংয়ে যেতে, এমন অভিযোগও যথেষ্ট। অন্যদিকে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা সবকিছুর জন্যই এখন কোচিং যেন না হলেই চলে না। এখানেও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত সুযোগ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন, প্রশ্ন ফাঁস, অবৈধ আঁতাত এসব ভর্তিচ্ছুদের অনেকাংশে জিম্মি করে। কোচিং ফি কত হবে না হবে- এ বিষয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়েরও নেই জবাবদিহি।

দুদকের মতে, কোচিংয়ের ব্যাপারে কোনো আইন না থাকায় সাধারণত কোচিং বা টিউশনি থেকে উপার্জিত আয়ের ওপর কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স দেয়া হয় না। ফলে এভাবে উপার্জিত আয় অনুপার্জিত আয়ে পরিণত হয়। অথচ এই কোচিং করিয়ে অনেক শিক্ষক ও কোচিং সেন্টার মালিক বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। কোচিং ব্যবসা যেমন অবৈধ অর্থ উপার্জন ও অনৈতিক আয় ভোগ করার অবারিত সুযোগ তৈরি করেছে, তেমনি এটি মেধা বিকাশের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবেও পরিণত হয়েছে। মহানগরীতেই নয়, সারা দেশেই চলছে এই অনৈতিক তৎপরতা। আমরা আশা করব দুদক এ ব্যাপারে তার অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা অপরাধীদের ব্যাপারে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। কোচিং বাণিজ্যের অভিশাপ থেকে জাতিকে রেহাই দেয়া সরকারের আশু কর্তব্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App