×

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধের দামামায় ২০১৭

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:০৯ পিএম

বিশ্বের জন্য বছরটি প্রথম থেকেই ছিল ঘটনাবহুল। বছর শুরুর নাটকীয়তা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাশূন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবির্ভাব। এরপর একের পর এক অপ্রত্যাশিত সব ঘোষণা আর ঘটনার জন্ম দিয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজের দাপুটে উপস্থিতি জারি রেখেছেন তিনি। বছরটিতে জঙ্গি গ্রুপের দৌরাত্ম্য কমেছে কিছুটা কিন্তু সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর মিছিল থামেনি। বছর শেষে বিশ্বকে কাঁদিয়েছে এককালীন ‘নিষিদ্ধ দেশ’ মিয়ানমারের অত্যাচারে সাত লাখের ওপর রোহিঙ্গার রাতারাতি বাংলাদেশে অভিবাসন। পানামা পেপার্সের ধারাবাহিকতায় এ বছর প্যারাডাইস পেপার্সে বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাবলয়ের গোপন কুকীর্তির খবর ফাঁস হয়েছে। তবে অবরুদ্ধ আরবে বইতে শুরু করেছে উদারনীতির হাওয়া। সেখানে নারীরা রাজপথে গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছেন। স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখতেও আর বারণ নেই কোনো। অন্যদিকে শত চেষ্টাতেও পরমাণু অভিলাষ থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি উত্তর কোরিয়াকে। জাতিসংঘের সঙ্গে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতিতে মস্কোর প্রভাব বেড়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দৃশ্যত ভালো থাকলেও গত বছর ওয়াশিংটন থেকে ক‚টনীতিক বহিষ্কারের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এ বছর ৭৫৫ জন মার্কিন ক‚টনীতিককে রাশিয়াছাড়া করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। বিশ্বমঞ্চে ক্রমশ প্রবল দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে চীনের অবস্থান। আরো সুসংহত হয়েছে শীর্ষ নেতা শি জিনপিংয়ের ক্ষমতা। নেপালের নির্বাচনে বাম জোট এগিয়েছে। ফলে তৈরি হয়েছে চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের সম্ভাবনা। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বন্দর ইজারা নিয়ে নিয়েছে চীন। লাতিন আমেরিকায় একের পর এক বামঘাঁটি ধসে পড়েছে, ক্ষমতায় ফিরছে রক্ষণশীলরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম জার্মানির পার্লামেন্টে আসন পেয়েছে কট্টর ডানপন্থিরা। গত বছরের আলোচিত ব্রেক্সিট নিয়ে এ বছরও অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হতে আরো অনেক আলোচনা বাকি। জাপানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সম্রাটের অবসরে যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। এ বছর দুই দফা বড় আকারের সাইবার হামলা কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে বিশ্বকে। এবারো বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয়েছে বিশ্বকে। ছিল ভ‚মিকম্প, বন্যা, অতিবৃষ্টি। আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে একের পর এক হামলা চালিয়েছে ভয়ঙ্কর ঝড়। প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরব গিয়েই সেখানে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেন ট্রাম্প। মূলত তখন থেকেই অঞ্চলজুড়ে নতুন অস্থিরতা শুরুর আশঙ্কা করা হচ্ছিল। হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধ কেন্দ্র করে এ বছর ইয়েমেনের ওপর কঠোর অবরোধ দিয়ে দেশটির দুই কোটি মানুষকে অনাহার ও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে ঠেলে দিয়েছে সৌদি সামরিক জোট। বছরের শেষদিকে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাকে আরো উসকে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরপরই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ শুরু হয়, নতুন ইন্তিফাদার ডাক দেয় হামাস। অন্যদিকে মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠিকই কঠিন করে তুলেছেন ট্রাম্প। মানুষের প্রতিবাদ ও আদালতের বাধায় ট্রাম্পের প্রথম আদেশ আটকে গেলেও, পরের দফায় আংশিক সফল হন তিনি। মিত্র দেশগুলোর সমালোচনার পরও ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজেও খানিকটা এগিয়েছেন। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়েও অন্য দেশগুলোর সঙ্গে তার বিরোধ স্পষ্ট। ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা কথার লড়াইয়েও জড়িয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন। তারা দুজনই দুজনকে আখ্যায়িত করেছে ‘পাগল’ হিসেবে। বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযান, যাকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে। এর কারণে সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের। আগস্টের শেষ সপ্তাহে কয়েক ডজন নিরাপত্তা চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে সেনাবাহিনীর ওই অভিযান শুরু হয়, পুড়িয়ে দেয়া হয় কয়েকশ গ্রাম, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, ধর্ষণের শিকার হন অসংখ্য নারী। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এই অভিযান বন্ধের আহ্বান জানায়; নেয়া হয় নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতিও। দেশটির নেত্রী অং সান সু কি জাতিগত নির্মূল অভিযানের অভিযোগ অস্বীকার করে এবং রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধের উদ্যোগ না নেয়ায় পশ্চিমা মিত্রদের কাছেও সমালোচিত হন। তবে বিলুপ্তির মুখে পড়ে যাওয়া লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ায় বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App