×

অর্থনীতি

খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে চাপে ছিল অর্থনীতি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৩:৪৬ পিএম

* নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। * বছরজুড়ে লাগামহীনভাবে বেড়েছে ডলারের দাম। * রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অর্থনীতিতে চাপ বাড়িয়েছে। * মালিকানা বদলের সুফল পায়নি ব্যাংকিং খাত, খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
দারিদ্র্য মোচন, প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, এডিপি বাস্তবায়ন, রেমিটেন্স আর রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যানে ইতিবাচক ধারায় ছিল বছরটা। দ্রত গতিতে এগিয়ে চলছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখছে সরকার। সেই লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজও এগিয়ে চলছে। অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর বেশিরভাগ ইতিবাচক অবস্থায় থাকায় সন্তুষ্টি নিয়েই বছর শেষ করার কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বস্তির অর্থনীতি কিছুটা চাপেরও খবরও দিয়েছে। খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে চলতি বছর বেশ খানিকটা চাপ অনুভব করেছে দেশের অর্থনীতি। এর মধ্যে চাল ও পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি উসকে দিয়েছে মূল্যস্ফীতিকে। এই দুই পণ্যের জাঁতাকলে নিষ্পেশিত ছিল ভোক্তারা। পাশাপাশি লাগামহীনভাবে বেড়েছে ডলারের দাম। যার ফলে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে সরকারকে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গাদের আকস্মিক আগমনের কারণে দেশের অর্থনীতিতে আরো একটু চাপ বাড়ে। যদিও তা সামলে উঠেছে সরকার। এদিকে গত বছরজুড়ে আলোচনায় থাকা ব্যাংকিং খাত মালিকানা বদলের সুফল পায়নি এখনো। বেড়েছে খেলাপি ঋণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নতির পাশাপশি অপ্রাপ্তিও আছে খানিকটা। অবকাঠামো দুর্বলতা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি। শিল্প-কারখানায় ছিল গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতে, যে কোনো মূল্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবে সবকিছুর ওপর তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন ২০১৮ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। দৃশ্যমান স্বপ্নের পদ্মা সেতু : পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ৪৯ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। খুব শিগগিরই আরো দুটি স্প্যান বসবে। এরপর পর্যায়ক্রমে মোট ৪১টি স্প্যান বসবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। মূল সেতু ও নদী শাসনের কাজ চার বছরের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে ঠিকাদারদের। তবে বড় ধরনের কারিগরি সমস্যা কিংবা রাজনৈতিক বিপর্যয় নেমে না এলে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন ঠিকাদাররা। সংযোগ সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকাজের জন্য সাড়ে তিন বছর সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়নের হার বেড়েছে : চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ২০ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ সময় সর্বমোট ব্যয় হয় ২৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। আইএমইডির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ব্যয়কৃত ৩২ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকার মধ্যে জিওবি তহবিল থেকে ১৭ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়, যার বাস্তবায়ন হার ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া, প্রকল্প সহায়তা থেকে ১৩ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যেখানে বাস্তবায়ন হার শতকরা ২২ দশমিক ৫৯ ভাগ। অবশিষ্ট এক হাজার ৬৩১ কোটি টাকা বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়, যার বাস্তবায়ন হার ২০ দশমিক ০১ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি একদিকে যেমন সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্বস্তি দিয়েছে, অন্যদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, এনবিআরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যোগ্য কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নেয়া, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিদের কর আদায়ে সম্পৃক্ত করা এবং রাজস্ব আদায়ে কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বিনিয়োগ বেড়েছে : গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৪৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৪৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৯৫৩টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন হয়েছে। গত বছরের এই ছয় মাসে ৮৬৫টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন হয়েছে। তবে চলতি বছর বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ১৪৩ কোটি ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা; যা গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছিল ৫৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এই অনুসারে দেশের মধ্যে প্রথম ছয় মাসে বিনিয়োগ প্রস্তাব কমেছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি : চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশের পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে এক হাজার ৪৫৬ কোটি ২৯ লাখ মার্কিন ডলার, যা আলোচিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪৪৫ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের এ পাঁচ মাসে বরাবরের মতো তৈরি পোশাক খাত থেকে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় হয়েছে। নিট ও ওভেন মিলিয়ে এ আয়ের পরিমাণ এক হাজার ১৯৬ কোটি ডলার, যা পাঁচ মাসের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় আসে নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্ট এ দুটি মাধ্যম থেকে। এর মধ্যে নিটওয়্যার থেকে জুলাই-নভেম্বরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৮২ কোটি ২১ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৬২৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ আয় বেশি হয়েছে। আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেশি হয়েছে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার থেকে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫৬৩ কোটি ২৭ লাখ ডলার। আর ওভেন গার্মেন্ট থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৮০ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৫৭১ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ তৈরি পোশাক খাতের দুটি মাধ্যমের মধ্যে নিটওয়্যার থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি আয় হলেও ওভেন গার্মেন্টের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মাত্র ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম হয়েছে। রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারা : গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যায় প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। তখন বলা হয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দীর্ঘ অস্থিরতা ও তেলের দর পড়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। এতে তারা দেশে কম পরিমাণের অর্থ পাঠাচ্ছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য কম থাকায় প্রবাসীরা আগের মতো অর্থ পাঠাচ্ছেন না। তা ছাড়া ব্যাংকের তুলনায় খোলা বাজারে ডলারের মূল্য বেশি থাকায় হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়েছেন। তবে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের হিসাবে দেখা যায়, রেমিটেন্স প্রবাহে ঊর্ধ্বগতি। এই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৫২০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। সে হিসেবে রেমিটেন্সপ্রবাহ বেড়েছে ৫৬ কোটি ডলার বা প্রায় ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার ও আগস্টে ১৪১ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। তবে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমে দাঁড়ায় মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। তবে অক্টোবরে রেমিট্যান্স বেড়ে হয় ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর নভেম্বরে তা আরো বেড়ে হয়েছে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। সিঙ্গেল ডিজিটের পথে ব্যাংক ঋণের সুদহার : বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার। সেই বাধা ক্রমেই শিথিল হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ঋণের সুদহার ‘সিঙ্গেল ডিজিটে’ নামিয়ে আনার দাবি এবং বিদেশি ঋণ সহজলভ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো সুদহার কমাতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর শেষে ঋণ ও আমানত উভয় ক্ষেত্রেই সুদহার কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। তবে আমানতের চেয়ে ঋণের সুদ তুলনামূলক কম কমেছে। এ সময়ে দেশের ৫৭টি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যা আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। আমানতের পাশাপাশি ঋণের সুদ কমায় অক্টোবরে গড় স্প্রেড কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। তবে এ সময়ে ব্যাংকিং খাতে গড় স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে অবস্থান করলেও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড এখনো ৬ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। দুই খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে : এক বছর আগে যে পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ টাকা, তা কয়েক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। মাত্র ৩৬৫ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ গুণ। শুধু পেঁয়াজ নয়, চালের দামও বেড়েছে আকাশচুম্বী। বছরের তুলনায় চলতি বছর ৩৪ শতাংশ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে চাল। পেঁয়াজ ও চাল যেমন ভোক্তার নাভিশ্বাস তুলেছে, তেমনি অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও ছিল লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে। এর ফলে চলতি বছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫.৮৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এ হার ছিল ৫.৪৩ শতাংশ। পয়েন্ট টু পয়েন্ট (গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা) ভিত্তিতে এ হিসাব করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এ হিসাবে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৫.৮৬ শতাংশে। মূলত চাল, মাংস, শাকসবজি, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বেড়েছে। অন্যদিকে পরিধেয় বস্ত্রাদি, জ্বালানি, আলো, বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র ও গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা ও পরিবহন খরচ মাস ভিত্তিতে বেড়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অতিবৃষ্টির জন্য খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বিঘিœত হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতির হার প্রান্তিক হিসাবে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৫.৮৬ শতাংশ রয়েছে, যা ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অনুযায়ীই রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬.২১ শতাংশ। শহরে এই হার ৫.৯৫ শতাংশ। লাগামহীন বেড়েছে ডলারের দাম : রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার পরও চলতি বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) নিরাপদ মান অনুযায়ী, একটি দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমান রিজার্ভ থাকলেই তাকে নিরাপদ মাত্রার ধরা হয়। বাংলাদেশে বছরে গড়ে আমদানি ব্যয় হয় ৩৫০ কোটি ডলার। এ হিসাবে বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে নয় মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তার পরও বছরজুড়েই ডলার বাজার ছিল অস্থির। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ডলারের দাম কমেছে ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। বছরের শেষ সময়ে এসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান গত ১৩ ডিসেম্বর ছিল ৮২ টাকা ৬০ পয়সা, যা গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ছিল ৭৮ দশমিক ৮৫ টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের হিসাবে টাকার মান আরো বেশি হারে কমেছে। তারা এখন ৮৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করছে। ব্যাংকিং খাতে গলার কাঁটা খেলাপি ঋণ : রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দিতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনে (নিয়মিত) বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এ সুযোগ নেন দেশের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প গ্রæপ। এর আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি সাপেক্ষে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে। তারপরও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। যা বিতরণ হওয়া ঋণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত জুন শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণ ছিল প্রায় ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। মোট খেলাপি বা শ্রেণিকৃত ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। খেলাপি ঋণের ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের। এ ছাড়া ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। বিদেশি ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App