×

বিনোদন

আলোচিত ৭ ঘটনা

Icon

মেলা প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:০৮ পিএম

২০১৭ সালের চলচ্চিত্রাঙ্গন ছিল ঘটনাবহুল। সুখবর ছিল কম। অস্থিরতা ছিল বেশি। তারকাদের ঘর ভেঙেছে। কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে। তর্ক-বিতর্ক-মিছিল হয়েছে। কাজ হয়েছে সামান্যই। বছরের আলোচিত ৭ ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন মাহফুজুর রহমান

নায়করাজের চিরবিদায়

চলতি সালের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যু। দেশের চলচ্চিত্র শিল্প বলতে গেলে অভিভাবকশূন্য হয়ে যায় ২১ আগস্টের শোক সংবাদে। প্রায় ছয় দশক যিনি ছিলেন চলচ্চিত্রের বটবৃক্ষস্বরপ, তার শূন্যতায় শোকের মাতম নেমে আসে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। যদিও অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিনে নায়করাজ, ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন বয়সের কারণে, তবু তার ফেরার প্রতীক্ষায় ছিলেন নির্মাতারা। বিশ্রামে থাকলেও চলচ্চিত্রের একজন বাতিঘর হিসেবে তার উপস্থিতিকেই বিরাট প্রাপ্তি মনে করতেন চলচ্চিত্রবাসী। নায়করাজের আকস্মিক চলে যাওয়ায় ঢালিউড হয়ে পড়ল দিকহীন। তাকে সশ্রদ্ধ বিদায় জানিয়ে তার কর্মকে পাথেয় করে আগামীর রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার শপথ করেছে ঢালিউড। নায়করাজকে নিয়ে এ বছর বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে পরিচালক সমিতি। পরিচালক বদিউল আলম খোকন এবং গাজী মাহবুবের কথা কাটাকাটির সূত্র ধরে নায়করাজকে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের অপমানসূচক মন্তব্যের সূত্র ধরে গাজী মাহবুবের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। বাপ্পারাজ নিজেই সমিতির সদস্যপদ তুলে নেন। পরিচালক সমিতি পরে নায়করাজের বাসায় ছুটে গেলেও স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকে। নায়করাজের জীবনী প্রকাশকে কেন্দ্র করে লেখক ছটকু আহমেদ এবং বাপ্পারাজ বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।

শাকিব-অপু

এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত চিত্রতারকা ছিলেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। ২০০৮ সালে বিয়ে করেছিলেন অর্ধশতাধিক ছবির জনপ্রিয় এই জুটি। আট মাস নিরুদ্দেশ থাকার পর হুট করেই ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের পর্দায় ছেলে আব্রাম খান জয়সহ হাজির হন অপু বিশ্বাস। ফাঁস করে দেন শাকিব খানের সঙ্গে তার বিয়ের খবর। একই সঙ্গে প্রকাশ করেন তার ছেলে সন্তান থাকার খবরও। এই খবরে গোটা দেশ নড়ে ওঠে। ‘রংবাজ’ ছবিতে নবাগতা নায়িকা শবনম বুবলীর নায়িকা হওয়াকে কেন্দ্র করে অপু বিশ্বাস ফিরে এসে বিরাট খবরে পরিণত হোন। অপু-বুবলী-শাকিবকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য তৈরি করে অস্থিরতা। অপু ও শাকিব পরস্পরের বিষোদগার করায় দূরত্ব বাড়ে স্বামী-স্ত্রীর। অপুর সংসারের ওপর দূরবীন নিয়ে চোখ রাখে শোবিজ। মিডিয়ার দৌলতে বেরুতে থাকে শাকিব-অপুর সংসারের টানাপড়েনের গল্প। অপু এক পর্যায়ে পুনরায় সিনেমায় নামার তোড়জোরও শুরু করেন। বাপ্পি ও ডি এ তায়েবের বিপরীতে একটি ছবিতে কাজ করার ঘোষণা দেন অপু। ঠিক এরপরই শাকিব খান এক বছর বয়সী ছেলে আব্রাম খান জয়ের প্রতি অবহেলার অভিযোগ এনে অপুকে ডিভোর্স লেটার পাঠান ২৮ নভেম্বর। কোনো সুসংবাদ না এলে অপু-শাকিবের বিচ্ছেদ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে আন্দোলন

ঈদুল ফিতরে যৌথ প্রযোজনার দুটি ছবি ‘নবাব’ এবং ‘বস টু’র বিরুদ্ধে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে এফডিসিতে শুরু হয় আন্দোলন। চলচ্চিত্রের ১৩টি সংগঠন এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে ‘চলচ্চিত্র পরিবার’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করে। এই প্ল্যাটফর্মের একের পর এক সিদ্ধান্তে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। শাকিব খানকে ২৩ জুন এবং পরে ১৮ জুলাই বয়কট করে। যদিও পরে চলচ্চিত্র পরিবার শাকিবের সঙ্গে বসে মৌখিকভাবে তার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আব্দুল আজিজের পরিচালক সমিতির সদস্যপদ বাতিল করা হয়। পরিবারের নির্দেশ অমান্য করে শুটিং করায় শামিম আহমেদ রনির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। উল্টোদিকে কাজী হায়াত পরিচালক সমিতি থেকে নিজেই পদত্যাগ করেন। আলমগীর ও ফারুকের নেতৃত্বে আন্দোলনের ফলে যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয। নীতিমালা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত আসে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে। তৎক্ষণাৎ প্রযোজক আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে চলচ্চিত্র ফোরাম নামে একটি প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা আসে। কিছুদিনের মধ্যেই ফোরামের ভেতরে মতানৈক্য দেখা দেয়।

ডুব ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

২০১৭ সালের সবচেয়ে বিতর্কিত ছবির নাম ‘ডুব’। হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক ‘ডুব’Ñ এই অভিযোগ ছিল গত বছরের চর্চিত বিষয়। মেহের আফরোজ শাওন সংবাদ সম্মেলন করে ‘ডুব’ ছবিতে হুমায়ূন আহমেদকে আপত্তিকরভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ করেন। যৌথ প্রযোজনার জন্য গঠিত প্রিভিউ কমিটিতে গিয়ে ছবিটি আটকে যায়। ১২ ফেব্রæয়ারি ছবিটির প্রদর্শনী সাপেক্ষে প্রিভিউ কমিটি থেকে অনাপত্তিপত্র পায় ১৫ ফেব্রæয়ারি। কিন্তু পরদিনই জানানো হয়, তথ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশক্রমে অনাপত্তি বাতিল করেছে বিএফডিসি। মাসের পর মাস গেলেও সেন্সর বোর্ড সবুজ সংকেত দেয় না। পরে কিছু কর্তনসাপেক্ষে মুক্তি পায় ‘ডুব’। মুক্তির পর ছবিটি রীতিমতো ঝড় তোলে। এক পক্ষ হুমায়ূন আহমেদকে কাল্পনিকভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ তোলে। চিত্রনাট্যে তাকে ও তার স্ত্রী শাওনকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে। আরেক পক্ষ ছবিটিকে বাংলা সিনেমার জন্য এক মাইলফলক বলতেও দ্বিধা করে না। ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে ‘ডুব’। যদিও ব্যবসায়িকভাবে ছবিটি শেষ পর্যন্ত কোনো চমকই দেখাতে পারেনি। কেবল মাল্টিপ্লেক্সে এক শ্রেণির দর্শকদের টেনেছে চুম্বকের মতো। ২০১৭ সালে অন্য কোনো ছবি নিয়ে এতটা হইচই হয়নি, যতটা হয়েছে ‘ডুব’ নিয়ে।

ঢাকা অ্যাটাকের বিপুল সাফল্য

২০১৭ সালের সবচেয়ে অন্যতম ব্যবসা সফল ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’। আমদানিকৃত ছবি এবং যৌথ প্রযোজনার ছবির ভিড়ে বাংলাদেশি ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাকে’র অপ্রত্যাশিত সাফল্য চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি করে। এ ছবি উপভোগ করতে দর্শকরা দলে দলে প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমান। পুলিশ থ্রিলার ‘ঢাকা অ্যাটাক’ আধুনিক বাণিজ্যিক ছবি হিসেবে সমালোচকদেরও প্রশংসা কেড়ে নেয়। এ ছবিতে পরিচালক দীপঙ্কর দীপনের অভিষেক হয়। ছবির বেশ কয়েকজন শিল্পী পরিচিতি পেয়ে যান। দেশের বাইরে প্রবাসী দর্শকদের মধ্যেও আলোচিত হয় ‘ঢাকা অ্যাটাক’। এ ছবিটি ছাড়াও আরো কিছু ছবি এ বছর বিদেশে বাজার ধরতে পাড়ি জমায়। ছবিগুলো প্রবাসী দর্শকদের নজর কেড়ে নেয়। বিদেশে দেশের সিনেমার বাজার নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।

সালমানের মৃত্যু রহস্যে চড়া

বছরের মাঝখানে কথা নেই বার্তা নেই রুবি সুলতানা নামের এক নারী শোবিজের সমগ্র মনোযোগ কেড়ে নেন। সালমান শাহ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রুবি। রুবি সালমানের পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন। একটি বিউটি পার্লার চালাতেন। সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক ভিডিও বার্তায় নিজের ভাইকে সালমান শাহর খুনি বলে দাবি করেন রুবি। তার জীবনও হুমকির মুখে বলে নিরাপত্তা চান তিনি। এই ঘটনায় সালমান শাহর মৃত্যু রহস্য চড়া দিয়ে ওঠে। রহস্য উদঘাটনের কোনো চেষ্টা প্রশাসনে দেখা না গেলেও ভক্তদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। এই প্রত্যাশার গুড়েবালি ঢেলে দেন স্বয়ং রুবি। রুবি এক পর্যায়ে নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে ভাইয়ের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। রুবি অভিযোগ তুললে দীর্ঘদিন পর পর মিডিয়ায় মুখ খোলেন সালমানের স্ত্রী সামিরা। সালমানের মা নিলা চৌধুরীও পুনরায় ছেলে হত্যার বিচার চান। রুবি পিছু হটায় পুরো আলোচনা এক সময় ধামাচাপা পড়ে যায়।

শিল্পী সমিতির নির্বাচন

চলচ্চিত্রের সাধারণ একটি সংগঠন নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় সিনেমামোদিদের আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়। এ বছরের ৫ মে সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে জয়লাভ করে মিশা সওদাগর-জায়েদ খান পরিষদ। পরাজিত হয় ওমর সানি-অমিত হাসান পরিষদ। শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে এফডিসিতে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। দেশের নামি-দামি চলচ্চিত্র শিল্পীরা মিটিং মিছিল বক্তব্য বিবৃতিতে সরগরম করে তোলেন এফডিসি। নির্বাচনের প্রতিদিনের আপডেট তুলে ধরতে মিডিয়া ছিল ব্যতিব্যস্ত। নির্বাচনের রাতে শাকিব খানের বিরুদ্ধে আক্রমণের অভিযোগ ওঠে মিশা-জায়েদ প্যানেলের বিপক্ষে। জায়েদ খান, সাইমন সাদিককে আক্রমণকারী হিসেবে নাম উল্লেখ করে তেজগাঁও থানায় জিডি পর্যন্ত করেন শাকিব খান। মৌসুমী শিল্পী সমিতি থেকে পদত্যাগ করলে তাকে ‘বয়স্ক অভিনেত্রী’ বলে মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েন মিশা সওদাগর। নানা ধরনের বক্তব্যে ও কর্মকান্ডে আলোচনায় থাকতে চায় সমিতি। যার অংশ হিসেবে শিল্পী সমিতির নতুন কমিটির প্রতিনিধিদল ২৭ মে বঙ্গভবনে যান। তারা রাষ্ট্রপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App