×

মুক্তচিন্তা

গাজীপুরের বন সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিন

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:৩৬ পিএম

গাজীপুরে বনভূমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দখলকারী যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। উদ্ধারকৃত জমিতে বন সৃজন করতে হবে। অন্যথায় গাজীপুরে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না। সর্বোপরি বন সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের উপলব্ধিতে আসতে হবে। বাড়াতে হবে জনসচেতনতাও।

বনের ওপর মানুষের আগ্রাসন থেমে নেই। দেশের সর্বত্র চলছে বনভূমি দখল। গতকালের ভোরের কাগজে একটি প্রতিবেদনে গাজীপুরে বৃক্ষ নিধনসহ বনজ সম্পদ ধ্বংসের মহাযজ্ঞ চলার খবর জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজীপুর সংরক্ষিত শালবনের গাছ কেটে অবাধে তৈরি হচ্ছে সড়ক। অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বনভ‚মি গিলে খাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। বনভ‚মি দখল উৎসব বন্ধে বন বিভাগের ভ‚মিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজীপুর জেলায় সরকারি গেজেটে মোট বনভূমি ৫২ হাজার ৭৩৭.১৫ একর এবং রিভিশনাল সার্ভে (আরএস) রেকর্ড অনুসারে বনভ‚মি ৪৫ হাজার ৬৮৫.৬৬ একর। এর মধ্যে গাজীপুরে সাড়ে ১১ হাজার একরের বেশি বনভূমি বেশ কয়েকটি নামিদামি শিল্প কলকারখানাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে রয়েছে। গত দেড় বছরে গাজীপুরে ১৩৫.২৮ একর বনভ‚মি উদ্ধার হলেও সেটি বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের অর্জন। গাজীপুরে বন বিভাগের পাঁচটি রেঞ্জ অফিসের মধ্যে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জে সবচেয়ে বেশি বনভূমি দখল হয়ে গেছে। বনের জমি দখল করতে কোটি কোটি টাকার বিপুুলসংখ্যক মূল্যবান গাছ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। দখলকৃত এসব জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে শিল্পকারখানা, মৎস্য খামার, হ্যাচারি ও পোলট্রি ফার্ম। শিল্পকারখানার মধ্যে আছে ডাইং, স্পিনিং, স্টিল, সিরামিকস, ফার্মাসিউটিক্যাল, নিটওয়্যার, রাবার- যাদের অধিকাংশই মারাত্মক পরিবেশ দূষণ করছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে। একশ্রেণির প্রভাবশালীর ভোগলিপ্সা, আইন অবজ্ঞা ও বনরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের চরম দুর্নীতি, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনাই বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার প্রধান কারণ। সবার চোখের সামনে কীভাবে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে তার একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত গাজীপুরের বনাঞ্চল। তথ্যমতে, এক দশক আগেও এখানে মোট জমির প্রায় ১৪ শতাংশ ছিল বনাঞ্চল। এক দশকের ব্যবধানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৩ শতাংশে। প্রায় ছয় দশক আগে প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে গাজীপুরের ভাওয়াল বন। বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৮২ সালে ভাওয়াল অরণ্যকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে সরকার। বন রক্ষা তো হয়ইনি, উল্টো বনের জমি জবরদখল করে একের পর এক অবকাঠামো গড়ে তোলে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

এ দখল দৌরাত্ম্য চলতে দেয়া যায় না। গাজীপুরে বনভূমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দখলকারী যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। উদ্ধারকৃত জমিতে বন সৃজন করতে হবে। অন্যথায় গাজীপুরে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না। সর্বোপরি বন সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের উপলব্ধিতে আসতে হবে। বাড়াতে হবে জনসচেতনতাও। জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে বন দখলদারদের প্রতিরোধ করা সহজ হবে। এককথায়, বনসম্পদ রক্ষায় কর্তৃপক্ষের সজাগ হওয়া এবং জনমত গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App