×

ফিচার

টাইটানিকের দুই দশক

Icon

মেলা প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ০২:২২ পিএম

 
প্রেমের গল্প আর প্রধান চরিত্রগুলো কাল্পনিক হলেও অনেকগুলো পার্শ্বচরিত্র ঐতিহাসিক সত্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে
মুক্তির ২০ বছর পূর্ণ করল জেমস ক্যামেরনের কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘টাইটানিক’। এ ছবির শ্রেণিদ্ব›দ্ব, বিষণœতা, প্রেম, বিসর্জন এখনো ভোগায় দর্শককে। ১৯৯৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল হলিউডের সর্বকালের অন্যতম সেরা ছবি ‘টাইটানিক’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্ডো ডি ক্যাপ্রিও (জ্যাক ডসন) ও কেট উইন্সলেট (রোজ ডিউইট বিউকেটার)। উচ্চবিত্ত সমাজের মেয়ে রোজের সঙ্গে টাইটানিক জাহাজে নিম্নবিত্ত সমাজের প্রতিভ‚ জ্যাকের প্রেম হয়। ১৯১২ সালে টাইটানিকের পরিণতির পটভ‚মিতে তাদের এই ট্র্যাজেডিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবিটিতে। প্রেমের গল্প আর প্রধান চরিত্রগুলো কাল্পনিক হলেও অনেকগুলো পার্শ্বচরিত্র ঐতিহাসিক সত্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। গেøারিয়া স্টুয়ার্ট বৃদ্ধা রোজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বৃদ্ধা রোজ তার টাইটানিক জীবনের কাহিনী বর্ণনা করেছে। ১৯৯৫ সালে টাইটানিকের চলচ্চিত্রায়ন শুরু হয়। সে সময় ক্যামেরন আটলান্টিকের তলায় টাইটানিকের আসল ভগ্নাবশেষের ছবি তোলা শুরু করেছিলেন। তিনি প্রেমকাহিনীর অবতারণা ঘটিয়েছিলেন মানুষের বাস্তব জীবনের ট্র্যাজেডির মাধ্যমে টাইটানিকের ট্র্যাজেডি ফুটিয়ে তোলার জন্য। দুই দশক! দিন-রাতের হিসেবে, সময়ের বিচারে নেহায়েত কম নয়। ওই সময় ছবিটি এ দেশে এনেছিলেন মধুমিতা সিনেমা হলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। ২০ বছরের মাথায় দাঁড়িয়ে স্মৃতিভারাক্রান্ত নওশাদও। তিনি ফিরে গেলেন পুরনো স্মৃতিতে। তুলে আনলেন ‘টাইটানিক’-এ মুগ্ধ সেই সময়ের বাংলাদেশের গল্প। বললেন, ফক্স স্টুডিওর সাউথইস্ট এশিয়ার ইনচার্জ যিনি ছিলেন মাইকেল ওয়ার্নার, ও আমার ব্যক্তিগত বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। মাইকেল ওয়ার্নার যখন ছোট একটা কোম্পানিতে কাজ করত, তখন থেকে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। হলিউডের ছবি আনতে লসঅ্যাঞ্জেলেসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল আমার। মাঝে অনেকদিন তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। তাকে খুঁজছিলাম। লন্ডনে এক কোম্পানিকে জিজ্ঞেস করলাম, হোয়্যার অ্যাবাউট মাইকেল ওয়ার্নার? ওখান থেকে আমাকে জানালো, সে ফক্সে জয়েন করেছে। শুনে তো খুশি হয়ে গেলাম। তাদের কাছ থেকে ওয়ার্নারের ফোন নম্বর নিলাম। আশির দশকে টেলেক্স ছিল, আর টেলিফোনে কথা বলতে হতো। তখনো ফ্যাক্স আসেনি। ওয়ার্নারের সঙ্গে আবার যোগাযোগ হলো। কমান্ডো ছবিটা নিয়ে এলাম। এরপর টাইটানিক রিলিজ করল। ছবিটা আনার খুব আগ্রহ হলো আমার। ওয়ার্নারকে ফোন করলাম। সে প্রথমে সে আমাকে পাঁচটা প্রিন্ট দিতে রাজি হলো। সেটা নিয়েই খুশি ছিলাম। বেশ কিছু কোম্পানিকে পেলাম, যারা স্পন্সর করতে আগ্রহী হলো। টাইটানিকের ব্যবসা নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল, সত্যিকার অর্থে প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল ছবিটি। যেসব হলে ইংরেজি ছবি চলত না, টাইটানিক ওইসব হলেও চলেছে। যে কোনো ইংরেজি ছবি ওই সময় পাঁচ হাজার দশ হাজার রেন্টালে চলত। কিন্তু টাইটানিকের রেন্টাল ছিল এক লাখ। সারা বাংলাদেশে ছবিটা চলেছে। মধুমিতা হলে চলেছে টানা ২৮ সপ্তাহ। যা মধুমিতা সিনেমা হলের রেকর্ড। ছবির একেবারে শেষের দিকে দেখা যায়, সময়ের বিস্ময় টাইটানিক ডুবে যাচ্ছে! জ্যাক শক্ত করে ধরে রেখেছে রোজের হাত। জীবনের অন্তিম পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতিশ্রæতি বিনিময় চলে। রোজ শপথ করে, ‘আই উইল নেভার লেট গো, জ্যাক!’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ শপথ রাখা আর হয় না! উদ্ধারকারী জাহাজ তাদের কাছে আসার আগে অবস হয়ে যায় জ্যাকের শরীর। জ্যাক তলিয়ে যেতে থাকে ক্রমেই। জ্যাক তলিয়ে গেলেও সেই ট্র্যাজেডি এখনো চকচকে। টাইটানিকের বিরহ যেমন দর্শককে কাঁদায় এখনো, সামাজিক ব্যবধান ভেঙে দুটি হৃদয়ের কাছে আসা-ভালোবাসাও তেমনি রোমাঞ্চিত করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App