×

মুক্তচিন্তা

পলাতক ঘাতকদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর রাষ্ট্রের দায়

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:৪৫ পিএম

দেশ স্বাধীনের পর একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু হলেও পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতায় আসা মুজিব হত্যার সুবিধাভোগী সামরিক-অসামরিক গোষ্ঠী সেই বিচারের পথ রুদ্ধ করে, এমনকি বিচারে সাজাপ্রাপ্তদেরও ছেড়ে দেয়; ঘাতকদের বিদেশে নিরাপদ অবস্থানের সুযোগ করে দেয়। সেই সুযোগ নিয়ে দণ্ডিত ঘাতক মাঈন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ও আশরাফ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। এখন রাষ্ট্রের দায় এদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা।

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে ঠিক সেই সময় পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী দেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসকদের হত্যা করে বাঙালি জাতির ওপর চরম আঘাত হানে। জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী মানুষের বাড়ি বাড়ি থেকে ধরে এনে ঢাকার রায়েরবাজার, কাটাসুর ও মিরপুরসহ দেশের অসংখ্য বধ্যভ‚মিতে নিয়ে গিয়ে নির্মম পৈশাচিকতার সঙ্গে হত্যা করে। আজকের দিনে আমরা ওই সব বুদ্ধিজীবীকে স্মরণ করি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায়।

দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পাকিস্তানি শাসকচক্রের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে দিকনির্দেশক এবং সোচ্চার কণ্ঠ। অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ সর্বোপরি একটি সুখী-সমৃদ্ধ প্রগতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা তারা লালন করতেন। পাকিস্তানি কুচক্রী ও এ দেশে তাদের দোসর ধর্মান্ধ গোষ্ঠী যখন আঁচ করতে পারল বাঙালির স্বাধীনতা সমাসন্ন, তখন তারা জাতির দিকপালদের হত্যা করল যেন বাঙালি জাতি প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে; যেন সদ্য স্বাধীন দেশটি সুস্থ চেতনা ও বিচার বুদ্ধির পথভ্রষ্ট হয়ে নিঃস্ব, দুর্বল ও নির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। দেশ স্বাধীনের পরও অব্যাহত থাকে কুচক্রীদের সেই ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই একাত্তরের পরাজিত শক্তি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাহায্যে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার চেতনার নেতৃত্ব সমূলে বিনাশ করার লক্ষ্যে জেলের ভেতর হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতাকে। এর পরিণামে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের যে চেতনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, স্বাধীন দেশে সে অর্জন থেকে দিনে দিনে আমরা পিছিয়ে যাই। একাত্তরের ঘাতক আলবদর, আলশামস, রাজাকাররা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার পর্যন্ত হতে পারে। তবে দেরিতে হলেও বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারহীনতার দায় থেকে বেরিয়ে এসেছে দেশ। সব রক্তচক্ষু ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের পরও সাহসিকতার সঙ্গে জাতিকে দেয়া ওয়াদা রক্ষা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে শীর্ষ প্রায় সব ঘাতকের বিচারের রায় ঘোষিত হয়েছে। দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

দেরিতে হলেও বুদ্ধিজীবীদের শীর্ষ ঘাতকদের বিচারে দণ্ডিত হওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, দেশ স্বাধীনের পর চার দশকের বেশি সময় এই ঘৃণ্য ঘাতকরা বিচার এড়িয়ে বহাল তবিয়তে থাকতে পেরেছে। দেশ স্বাধীনের পর একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু হলেও পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতায় আসা মুজিব হত্যার সুবিধাভোগী সামরিক-অসামরিক গোষ্ঠী সেই বিচারের পথ রুদ্ধ করে, এমনকি বিচারে সাজাপ্রাপ্তদেরও ছেড়ে দেয়; ঘাতকদের বিদেশে নিরাপদ অবস্থানের সুযোগ করে দেয়। সেই সুযোগ নিয়ে দণ্ডিত ঘাতক মাঈন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ও আশরাফ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। এখন রাষ্ট্রের দায় এদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা। একাত্তরে আমরা যে সূর্যসন্তানদের হারিয়েছি তাদের আর ফিরে পাওয়া যাবে না কিন্তু তাদের ঘাতকদের বিচার ও শাস্তি সেই শোক, সেই কলঙ্ক কিছুটা হলেও মোচন করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App