×

মুক্তচিন্তা

অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:৫৯ পিএম

আমরা আশা করব, চার্জশিটভুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কোনো রকম প্রভাব খাটিয়ে কেউ যেন এই বিচারকে প্রলম্বিত করতে বা ন্যায় বিচার বিঘ্নিত করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সজাগ থাকতে হবে প্রশাসন ও বিচার সংশ্লিষ্টদের।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় ১৩ মাস পর একটি মামলার পুলিশি অভিযোগপত্র আদালতে দেয়া হলো। এতে বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জড়িত বলে নাম এসেছে। সরকারের একজন মন্ত্রীর ভাগ্নেসহ ২২৮ জনকে আসামি করে গত রোববার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নাসিরনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শওকত হোসেন আদালতের পুলিশ বিভাগে অভিযোগপত্র জমা দেন। দেরিতে হলেও আসামিদের চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দাখিল হওয়া স্বস্তিকর। এতে করে আলোচিত এই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পথ উন্মুক্ত হলো।

উল্লেখ্য, নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাস নামে জেলে পরিবারের এক যুবক ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করেছে অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর তাকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় একদল যুবক। পরদিন (৩০ অক্টোবর) এলাকায় মাইকিং করে উপজেলা সদরে পৃথক দুটি সমাবেশ থেকে ১৫টি মন্দির, শতাধিক ঘরবাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ভোরে ও ১৩ নভেম্বর ভোরে আবার উপজেলা সদরে হিন্দুদের অন্তত ছয়টি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। নির্যাতিতরা দায়ী হিসেবে যাদের কথা বলে আসছিলেন, পুলিশের অভিযোগপত্রেও তা-ই বেরিয়ে এসেছে। বিচার ঠেকাতে এ ঘটনায় পুলিশ যাতে ঠিকঠাকভাবে অভিযোগপত্র দিতে না পারে সেজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মৎস্যমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হকের ভাগ্নে নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন নির্যাতিতরা। দেখা গেল যে, শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হননি। মো. আবুল হাশেম নিজেও পুলিশের তদন্তে হিন্দু নির্যাতনকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। আশ্চর্য হওয়ার মতো ব্যাপার যে, হিন্দু পল্লীতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় আদর্শিকভাবে বিপরীতমুখী হলেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামায়াত এ সব দলের লোকজনই অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বড় দলগুলোর প্রভাবশালীরা এই ঘটনায় সম্পৃক্ত বলে এ ঘটনার বিচার নিয়ে জনমনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এই ঘটনায় এযাবৎ আটটি মামলা দায়ের হলেও, এক বছরে একটি মামলারও অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল না হওয়া, অর্থাৎ পুলিশ কর্তৃক আসামি চিহ্নিত না হওয়া এই অনিশ্চয়তাকেই বাড়িয়ে তুলছিল। ১৩ মাস পর মাত্র একটি মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। তবে তাতে প্রভাবশালীদের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কিছুটা হলেও ভুক্তভোগীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর অভিযোগপত্রও দ্রুত তৈরি করা হোক, অভিযোগ গঠনে ভুল-ত্রুটি, দুর্বলতা বা অনিয়মের কারণে ন্যক্কারজনক অপরাধের দায়ীরা পার পেয়ে গেলে তা হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক।

আমরা আশা করব, চার্জশিটভুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কোনো রকম প্রভাব খাটিয়ে কেউ যেন এই বিচারকে প্রলম্বিত করতে বা ন্যায় বিচার বিঘ্নিত করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সজাগ থাকতে হবে প্রশাসন ও বিচার সংশ্লিষ্টদের। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন আমাদের জাতীয় সংহতির ওপর বিরাট আঘাত। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে নাসিরনগর হামলাসহ ইতোপূর্বে সংঘটিত এ ধরনের সব হামলা মামলার সুষ্ঠু বিচার এবং অপরাধীদের সমুচিত শাস্তি নিশ্চিত হওয়া খুবই জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App