×

মুক্তচিন্তা

জঙ্গিরা যখন জামিনে মুক্ত

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:১৭ পিএম

জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের জামিন ঠেকাতে আইনি কৌশল নির্ধারণে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। প্রচলিত আইনে জঙ্গিদের আটকে রাখা ও বিচার নিশ্চিত করা কঠিন। তাই আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বসহ বিবেচনায় নিতে হবে।

তদন্তের দুর্বলতা ও মামলার আইনি প্রক্রিয়াগত ত্রুটির সুযোগ নিয়ে জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিরা। দুর্ধর্ষ এসব জঙ্গি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিদেশে আত্মগোপন করেছে বলে পুলিশের সূত্রে জানা গেছে। তারা নাশকতা ঘটানোর ও কারাবন্দি জঙ্গিদের ছাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসছে, যা উদ্বেগজনক।

জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সহস্রাধিক আটকের পর বর্তমানে কারাবন্দি রয়েছে ৫২৫ জন, যার মধ্যে ৩৮৭ জন হাজতি ও ১৩৮ জন কয়েদি। বাকিরা আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারীও রয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৬৮টি কারাগারে সন্ত্রাস দমন (জঙ্গি) আইনে মোট ৬২৪ জন বন্দি ছিল। ২৬ নভেম্বর ছিল ৫২৫ জন। অর্থাৎ দুই মাসের মধ্যে কারামুক্তি হয়েছে শতাধিক জঙ্গির। আদালতের তথ্য মতে, পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলার প্রায় ৫০০ এজাহারভুক্ত আসামি। পুলিশের কাছে থাকা তথ্য মতে তারা সবাই জঙ্গি। যাদের মধ্যে কয়েক বছরে উধাও হয়েছে ৪৪০ জঙ্গি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ বলছেন তারা সীমান্ত অঞ্চলে লুকিয়ে আছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, তারা বিদেশে পালিয়ে গেছে। জামিন পাওয়ার বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়া। এটা আদালতের বিষয়। তবে রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ জঙ্গি কেউ জামিন পেলে নিঃসন্দেহে বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকে জানাবেন কারাগার সংশ্লিষ্টরা। এটারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ কখন কোন জঙ্গি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজানা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদিও দাবি করছে যে, তারা জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিদের কর্মতৎপরতা সব সময় তদারকি করছেন, কিন্তু এ দাবির সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। অনেক জঙ্গি জামিনে মুক্তি পেয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। কেউ ফিরে গেছে তাদের আগের কার্যক্রমে। তারা গোপনে দেশে-বিদেশে সংগঠিত হচ্ছে, সন্ত্রাস-নাশকতার ছক আঁটছে। এর প্রমাণও মাঝেমধ্যেই মিলছে। দেশে কিছুদিন পরপরই নানা নামে যে উগ্রবাদী সংগঠনের আবির্ভাব ঘটছে, এগুলো সংগঠিত করার নেপথ্যে জামিনে ছাড়া পাওয়া ও পলাতক জঙ্গি-সদস্যরা ভ‚মিকা রাখছে। গোয়েন্দা সূত্রই জানাচ্ছে- জামিনে মুক্ত জঙ্গিরা আগের ঠিকানা ব্যবহার করছে না। নির্দিষ্ট মোবাইল ফোনও ব্যবহার করছে না। কিন্তু তাদের গোপন তৎপরতা চলছে। সঙ্গত কারণেই ধারণা করা যায় যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা বা তাদের বিভিন্ন সংস্থার কাজের সমন্বয়ে অসঙ্গতির সুযোগে অনেক জামিনপ্রাপ্ত আসামির আর কোনো খোঁজ রাখা হচ্ছে না। কিন্তু এর প্রভাব যে কীরকম ভয়াবহ সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা সচেতন সেটাই প্রশ্ন। তারা কি জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য কোনো ফৌজদারি মামলার আসামি আর জঙ্গি তৎপরতার মামলার আসামিদের একই রকম বিবেচনা করছেন এবং একই রকম গা ছাড়া আচরণ করছেন তাদের বেলায়ও। তাহলে এটা খুবই ভয়াবহ। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের জামিন ঠেকাতে আইনি কৌশল নির্ধারণে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। প্রচলিত আইনে জঙ্গিদের আটকে রাখা ও বিচার নিশ্চিত করা কঠিন। তাই আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বসহ বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা চাই, জঙ্গিরা যাতে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে সহজে জামিনে বের হতে না পারে- এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন। একই সঙ্গে জামিনে মুক্তি পাওয়া জঙ্গিদের গতিবিধি নিবিড় নজরদারিতে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মূল ভ‚মিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাফিলতি হবে আত্মঘাতী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App