×

জাতীয়

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাচ্ছে শীতলপাটি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:২৮ পিএম

'চন্দনেরি গন্ধভরা,/ শীতল করা, ক্লান্তি-হরা/ যেখানে তার অঙ্গ রাখি/ সেখানটিতেই শীতল পাটি'- ছন্দের জাদুকর কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এভাবেই জয়গান গেয়েছেন শীতলপাটির। এবার ইউনেস্কোর বিশ্ব নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে এই শীতলপাটি। আজ বুধবার আসতে পারে এ-সংক্রান্ত সুখবর। এর আগে গত বছর ইউনেস্কোর এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ ছাড়া গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে বর্তমানে চলছে বিশ্বের নির্বস্তুক ঐতিহ্য সংরক্ষণার্থে গঠিত আন্তর্জাতিক পর্ষদের সম্মেলন। এই সম্মেলনের শেষ পর্বে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প 'শীতলপাটি'। জাতীয় জাদুঘরের সচিব মোহাম্মদ শওকত নবীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সিলেট অঞ্চলের দুই বিখ্যাত পাটিকর গীতেশচন্দ্র ও হরেন্দ্রকুমার দাশ। সম্মেলনস্থলে এই দুই পাটিকর তাদের বুননশৈলী উপস্থাপনা করছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া উন্নতমানের শীতল পাটি প্রদর্শন করা হচ্ছে সেখানে। একই সঙ্গে দেশের মানুষের কাছে এই কারুশিল্প তুলে ধরতে জাতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার শুরু হয়েছে শীতলপাটির বিশেষ প্রদর্শনী। জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে ৯ দিনের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহীম হোসেন খান এবং লোকশিল্পগবেষক চন্দ্রশেখর সাহা। শীতলপাটি নিয়ে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি চিত্রশিল্পী হাশেম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। একসময় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ায় শীতলপাটির ব্যাপক কদর ছিল। শীতলপাটি ভারতসম্রাজ্ঞী মহারানী ভিক্টোরিয়ার ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদেও স্থান পেয়েছিল। ভারতবর্ষে আগমনের প্রমাণ ও স্মৃতিস্মারক হিসেবে ভিনদেশিরা ঢাকার মসলিনের পাশাপাশি সিলেটের বালাগঞ্জের শীতলপাটি নিয়ে যেতেন। কথিত আছে, দাসের বাজারের রূপালি বেতের শীতলপাটি মুর্শিদ কুলি খাঁ সম্রাট আওরঙ্গজেবকে উপহার দিয়েছিলেন। সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই 'শীতলপাটি'কে কেউ কেউ নকশিপাটিও বলে থাকেন। মৈমনসিংহ গীতিকা ও লোকসাহিত্যেও নানাভাবে উঠে এসেছে শীতলপাটির কথা। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে হাতে বোনা এই শিল্পে এখনও যুক্ত আছে শতাধিক গ্রামের চার হাজার পরিবার। যারা এই পাটি বুনে থাকেন তাদের বলা হয় 'পাটিয়াল' বা 'পাটিকর'। প্রদর্শনী উদ্বোধনের সময় আসাদুজ্জামান নূর বলেন, 'শুধু বাংলাদেশে নয়, বিদেশেও শীতলপাটির কদর রয়েছে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই শিল্পে নতুনত্ব এনে তাকে রক্ষা করতে হবে। এখন কারুশিল্পীরা তাদের মনের মতো শীতলপাটি তৈরি করতে পারেন না। শিল্পীরা তাদের স্বাধীনতা হারাচ্ছেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।' সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, 'শীতলপাটিকে বিশ্বের নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ২০১৭ হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। আজ বুধবার এই স্বীকৃতির ঘোষণা আসতে পারে। আশা করছি, জামদানি, বাউল গান, মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো পৃথিবীর কাছে শীতলপাটিও সগৌরবে আত্মপ্রকাশ করবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে 'শীতলপাটি'কে বিশ্বের নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে।' জাদুঘরের এ প্রদর্শনীজুড়ে এখন নানা রকম শীতলপাটি। কোনোটায় পাখি, কোনোটায় ফুল-লতা-পাতা আঁকা। জ্যামিতিক নকশাও রয়েছে এতে। ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে মসজিদ, চাঁদ-তারা, পৌরাণিক কাহিনীচিত্র, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, শাপলা, পদ্ম আঁকা ছোট-বড় শীতলপাটি। ঐতিহ্যবাহী ৬ ফুট ৯ ফুট আয়তনের একটি পাটির দাম বর্তমানে ২০ হাজার থেকে শুরু থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এ ধরনের একটি পাটি তৈরি করতে দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগে। ছোট আকারের পাটি বুনতে সময় লাগে এক থেকে দেড় মাস। শীতলপাটি কীভাবে তৈরি করা হয়, তাও দেখা যাবে এ প্রদর্শনীতে। মৌলভীবাজার থেকে আসা আরও তিন শিল্পী রমাকান্ত দাশ, অজিত কুমার দাশ ও অরুণ চন্দ্র দাশ  কথায় কথায় জানালেন শীতলপাটি তৈরির গল্প। প্রদর্শনালয়ের একটি কোণে রয়েছে সেসব যন্ত্রপাতি বা উপকরণ, যা পাটি তৈরিতে কাজে লাগে। রমাকান্ত দাশ বলেন, 'পাটি বুনতে লাগে চিমটা, আমড়া পাতা, কাপড়ের টুকরা, বেতিতে পানি ছিটানোর হাতা, চটি, মুর্তা বেত, জাক ও দা। এগুলো একটি পরিসরে প্রদর্শন করা হচ্ছে।' প্রদর্শনী চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এই প্রদর্শনী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App