×

মুক্তচিন্তা

কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত শিক্ষকদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিন

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:৫২ পিএম

আমরা চাই আট প্রতিষ্ঠানের যে ৯৭ জন শিক্ষকের নাম দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমরা আশা করব দুদক এ ব্যাপারে তার অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে স্বপ্রণোদিত হয়েই কোচিং বাণিজ্যসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কোচিং বাণিজ্যের কাছে বলতে গেলে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কোচিং বাণিজ্য বন্ধে বিভিন্ন সময় কড়া পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। তবে এ ব্যাপারে একটা আশার খবর হলো- দুদক এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তৎপর হয়েছে। অনুসন্ধান চালিয়ে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরের স্বনামধন্য আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। আমরা দুদকের এই তৎপরতাকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করছি মন্ত্রণালয় চিহ্নিতদের ব্যাপারে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। দুদকের এই তৎপরতাও অব্যাহত থাকবে।

সারা দেশেই কোচিংয়ের নামে ভয়াবহ বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জড়িত এই কোচিং ব্যবসায়। ওইসব শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন বলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী হন না। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সরকারি স্কুলের কিছু শিক্ষক ঊর্ধ্বতন মহলকে প্রভাবিত করে বদলি এড়িয়ে বছরের পর বছর এই প্রতিষ্ঠানে বহাল থাকছেন। আর বেসরকারি শিক্ষকদের তো বদলির বালাই নেই। একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর থাকার ফলে এই শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোচিং বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন এবং এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, যাতে ছাত্রছাত্রীরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হয়। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এই কোচিং বাণিজ্য অভিভাবকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। এমনকি প্রশ্নফাঁসের মতো ভয়াবহ দুর্নীতির সঙ্গেও কোচিং সেন্টার এবং কোচিং সংশ্লিষ্ট এক শ্রেণির শিক্ষক জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে অতীতে।

কোচিং বাণিজ্য সংক্রান্ত দুর্নীতিতে দায়ী হিসেবে ঢাকা মহানগরীর বেসরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ৩৬ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ২৪ জন, ঢাকা ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সাতজন, রাজউক স্কুল এন্ড কলেজের পাঁচজন আর সরকারি চারটি স্কুলের মধ্যে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন এবং ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের আট জন শিক্ষক রয়েছেন দুদকের তালিকায়। দুদকের মতে, সাধারণত কোচিং বা টিউশনি থেকে উপার্জিত আয়ের ওপর কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স দেয়া হয় না। ফলে এভাবে উপার্জিত আয় অনুপার্জিত আয়ে পরিণত হয়। কোচিং বাণিজ্যের ফলে যেভাবে অনৈতিক আয় ভোগ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তেমনি এটি বুদ্ধিবৃত্তিমূলক মেধা সৃষ্টির প্রয়াসের পরিবর্তে অবৈধ অর্থ উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কোচিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা বিশেষ সাজেশন অনুসারে স্বল্প সংখ্যক প্রশ্ন পড়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, ফলে পূর্ণাঙ্গ বই সম্পর্কে তারা ধারণা পাচ্ছে না।

আমরা চাই আট প্রতিষ্ঠানের যে ৯৭ জন শিক্ষকের নাম দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক, যে দৃষ্টান্ত অন্যদেরও উপযুক্ত বার্তা দেবে। শুধু মহানগরীতেই নয়, সারা দেশেই চলছে এক শ্রেণির শিক্ষকদের অনৈতিক তৎপরতা। আমরা আশা করব দুদক এ ব্যাপারে তার অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে স্বপ্রণোদিত হয়েই কোচিং বাণিজ্যসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোচিং বাণিজ্যের অভিশাপ থেকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের রেহাই দেয়া সরকারের আশু কর্তব্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App