×

আন্তর্জাতিক

‘রোহিঙ্গা’ না বলার ব্যাখ্যা দিলেন পোপ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:২৯ পিএম

সম্প্রতি মিয়ানমার সফরে গিয়ে দেশটির নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে উল্লেখ করেননি পোপ ফ্রান্সিস। যদিও এর আগে রোহিঙ্গাদের ভাই-বোন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন পোপ। এ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিশ্বব্যাপী সমালোচনা হয়। এ্ররই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির (রোহিঙ্গা উচ্চারণ না করার) ব্যাখ্যা দিলেন তিনি। বললেন, তিনি কৌশলগত কারণেই রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও দেশটির সরকারকে যে বার্তা তিনি দিতে চেয়েছিলেন তা দিতে পেরেছেন বলেও দাবি করেন ফ্রান্সিস। বাংলাদেশ থেকে শনিবার রোম পৌঁছেন পোপ। বিমান থেকে নামার পরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। সেখানেই বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন পোপ ফ্রান্সিস। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনীকে যে বার্তা দেওয়া দরকার ছিল, আলোচনার (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) দ্বার বন্ধ না করেই তিনি তা দিতে পেরেছেন। পোপ বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা হলো- তাদের বক্তব্য শোনা ও তার জবাব দেওয়া। আর বার্তা দেওয়াটাই মূল কথা।’ ‘আমি জানতাম, আমি যদি আনুষ্ঠানিকভাবে শব্দটি (রোহিঙ্গা) উল্লেখ করতাম, তাহলে তারা আমাদের মুখের ওপর বন্ধ (আলোচনা) করে দিত। তার চেয়ে বরং আমি তাদের (রোহিঙ্গা) অবস্থা, অধিকার, নাগরিকত্ব নিয়ে কথা বলেছি। কৌশল অবলম্বন করায় আমি এগুলো বলতে পেরেছি।’ এ ছাড়া বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়ে তিনি যে কেঁদেছেন তাও উল্লেখ করেন পোপ। সেখানে তাদের রোহিঙ্গা হিসেবেই উল্লেখ করেছেন বলে জানান তিনি। তবে পোপ নিজের অবস্থানের এমন ব্যাখ্যা দিলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশটিতে অবস্থানরত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের পরামর্শেই তিনি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি। কারণ বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে খ্রিস্টানরাও সংখ্যালঘু। আর সে কারণে দেশটির খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা (রোমান ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃপক্ষ) আগেই পোপকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন। আর পোপ সে অনুযায়ীই কথা বলেন। প্রসঙ্গত, গত সোমবার মিয়ানমার সফরে যান পোপ ফ্রান্সিস। দেশটির সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে পৌঁছার পরই তিনি সামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে পোপের বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার সকালে। অথচ শেষ মুহূর্তে এসে দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, বৈঠকটি এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে পোপের বৈঠকের আগেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়। আর এভাবেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। তবে পোপ বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার ভালো আলোচনা হয়েছে এবং সেখানে সব বাস্তবতাই উঠে এসেছে। সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পোপ বলেন, ‘বার্তা পাওয়ার জন্যই তো শব্দটি ব্যবহারের কথা, কিন্তু যখন দেখলাম আমি যা জানতে চাই তা পেয়ে গেছি তখন আর সেটি উচ্চারণের দরকার ছিল না।’ এরপর তিনি এক সাংবাদিকের ওপর অসন্তুষ্ট হন এবং একটি ল্যাটিন ফ্রেজ (জ্ঞানীদের জন্য অল্প কথাই যথেষ্ট) দিয়ে তার উত্তর শেষ করেন। এ ছাড়া মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী ও কার্যত সরকার প্রধান অং সান সুচির সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারেও কথা বলেন পোপ। মঙ্গলবার তিনি সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সফরে আসেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে শুক্রবার বিকেলে ভ্যাটিকানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন পোপ। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি চেকপোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটির রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি দেশটির উগ্র বৌদ্ধরাও রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালায়। হত্যা করা হয় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানকে। নারীদের ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা দীর্ঘ পথ ও নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নির্ধন বলে অভিহিত করে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বিশ্ব নেতারা। এমনই অবস্থায় শান্তির বাণী নিয়ে মিয়ানমার সফরে যান পোপ ফ্রান্সিস। মিয়ানমারের দাবি, রোহিঙ্গারা দেশটির রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা নয়। তারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে পালিয়ে গেছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ইতিহাস বলছে, তারা যুগ যুগ ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App