×

জাতীয়

স্বর্ণপাচারের বড় রুট বেনাপোল

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:৪৪ পিএম

দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি সম্প্রতি বেনাপোল স্থলবন্দর স্বর্ণপাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এ রুট দিয়ে সোনার চালান ভারতে ঢুকছে। এ কাজে বাংলাদেশিদের পাশাপাশিরা ভারতীয়রাও জড়িত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চোরাচালানিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গোপন প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদনে স্বর্ণ চোরাচালান ঠেকাতে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাটি বেনাপোল রুট দিয়ে স্বর্ণপাচারে জড়িত ৫৫ জনের একটি তালিকাও সংযুক্ত করেছে। তালিকার বেশিরভাগই ভারতীয় নাগরিক।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, যশোর জেলার বেনাপোল সীমান্ত থেকে ভারতের পশ্চিম বাংলার কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার এবং যাতায়াতব্যবস্থা সুবিধাজনক। এ কারণে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিরা বিভিন্ন দেশ থেকে নানা উপায়ে স্বর্ণ এনে বাংলাদেশকে পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করে। স্বর্ণপাচারের রুটগুলোর মধ্যে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। একশ্রেণির চোরাকারবারি বাহকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট এবং সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের বার ভারতে পাচার করছে। মাঝে মধ্যে কিছু স্বর্ণ বহনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হলেও ২-১ মাস জেল খেটে মুক্ত হয়ে ফের একই কাজে লিপ্ত হচ্ছে। অন্যদিকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। স্বর্ণপাচারের বিনিময়ে ভারত থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, শাড়ি, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। এ ছাড়া বেনাপোল কাস্টমসে দক্ষ কর্মকর্তার মাধ্যমে স্ক্যানিং মেশিন ব্যবহার না করা এবং ভারতগামী যাত্রীদের লাগেজ ও সিটের নিচে কোনো ধরনের তল্লাশি না করার কারণে স্বর্ণ চোরাচালান ঠেকানো যাচ্ছে না।

প্রতিবেদনে বেনাপোল রুট দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান ঠেকাতে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলোÑ স্বর্ণপাচারকারী বা গডফাদারদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা; স্বর্ণপাচারে জড়িত অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ; সীমান্তে স্বর্ণপাচারের রুটগুলোয় বিজিবি কর্তৃক কঠোর নজরদারি; বাংলাদেশ-ভারতে সরাসরি চলাচলকারী পরিবহনের বিভিন্ন কর্মচারী, যাত্রীদের লাগেজ তথা পরিবহনগুলোয় যথাযথ তল্লাশির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কাস্টমস হলে স্থাপিত স্ক্যানিং মেশিনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ও সৎ জনবল নিয়োগ দিয়ে কঠোরভাবে স্ক্যানিং মেশিন পরিচালনা।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ৩৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এ সময় ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত অক্টোবরেই স্বর্ণের চারটি বড় চালান আটক করা হয় বেনাপোল স্থলবন্দরে। স্বর্ণবারের চালান পুলিশ, বিজিবি, কাস্টমসসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকা থেকে চারবার হাতবদল হয়ে ভারতে পাচার হয়। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেনসহ অন্য বাহনে স্বর্ণের চালান বেনাপোল নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পরিবহন কাউন্টার অথবা তাদের নির্ধারিত স্থানে চালানটি বদল হয় স্থানীয় এজেন্টের হাতে। স্থানীয় এজেন্ট চালানটি নিয়ে চলে যায় দৌলতপুর, গাতিপাড়া বা পুটখালী সীমান্তের কোনো বাড়িতে নিয়ে রাখে। সেখান থেকে হাত বদল হয় সীমান্ত পার করে ভারতীয় এজেন্টের কাছে পৌঁছনোর জন্য।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান আমাদের সময়কে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারির কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বড় কোনো স্বর্ণের চালান ঢুকতে পারছে না প্রতিবেশী দেশে। দুই ভারতীয়র পায়ুপথে মিলল কোটি টাকার স্বর্ণ

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে পাচারের সময় এক কোটি টাকা মূল্যের দুই কেজি ওজনের ২০টি স্বর্ণের বারসহ দুই ভারতীয়কে আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা।

গতকাল দুপুরে ওই যাত্রীদের ভারতে যাওয়ার সময় সন্দেহ হলে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের শরীর তল্লাশি চালিয়ে পেটের মধ্য থেকে (মলদ্বার) স্বর্ণের বারগুলো উদ্ধার করা হয়।

আটকরা হলেন ভারতের দিল্লির উত্তম নগর এলাকার মাহেন্দার বর্মার ছেলে সঞ্জিব বর্মা (৪৮) ও কলকাতার ইকবালপুরের নূরুল হকের ছেলে নসরুল হক (৩৬)।

এর আগে ভারতে পাচারের সময় গত বুধবার শরীয়তপুরের হাজি সাফদার মাতবরকান্দি উপজেলার নাওডুবা জাজিরা গ্রামের ইব্রাহিম মাতবরের ছেলে ইলিয়াস ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর খানের ছেলে মোহাসিন খানকে ১০টি স্বর্ণেরবারসহ আটক করা হয়।

কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানান, স্বর্ণপাচারের বিষয়ে তাদের কাছে আগাম তথ্য ছিল। বেনাপোল কাস্টম চেকপোস্ট থেকে বের হওয়ার পথে ওই দুই ভারতীয়কে আটক করা হয়। তারা প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে তাদের শরীর এক্সরে করে মলদ্বারের মধ্য থেকে একজনের কাছ থেকে ১০টি করে ২০টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়, যার ওজন দুই কেজি।

বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে বেনাপোল পোর্ট থানায় সোপর্দ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App