×

মুক্তচিন্তা

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:০৩ পিএম

 

বিদ্যুৎ ঘাটতি ও কাক্সিক্ষত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সংকট কেবল আমাদের নয়, অনেক দেশের জন্যই এটি একটি বড় সমস্যা। তাই বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে পারমাণবিক বিদ্যুতের পথে পা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সরকার সে পথই বেছে নিয়েছে। পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের কাজ শুরু করার মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপটিতে পা দেয়া হলো। আমরা আশা করছি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শিল্প-কারখানাসহ সবক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে।

পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কাজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ৩২তম দেশ হিসেবে আবিভর্‚ত হবে। বর্তমানে মাত্র ৩১টি দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন তথা নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য। বাংলাদেশও সে তালিকায় যুক্ত হচ্ছে, এটি সত্যি আনন্দের। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। এটি ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে বড় ভ‚মিকা রাখবে নিঃসন্দেহে। গত বৃহস্পতিবার পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির জন্য কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণের উদ্বোধন করে স্বপ্নপূরণের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য গৌরবের। তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে পারমাণবিক ও রেডিওলজিক্যাল নিরাপত্তার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের গাইডলাইন অনুসরণ করা হচ্ছে। যে কোনো দুর্যোগে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটি খেয়াল রেখে প্লান্টের ডিজাইন করা হয়েছে। পরিবেশ ও মানুষের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপনের প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে পাকিস্তান আমলে, ষাটের দশকে। এ জন্য বিশাল এলাকা অধিগ্রহণ করে কিছু অবকাঠামো তৈরির প্রাথমিক কাজও করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দিয়ে প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার পর সীমিত সম্পদের মধ্যেও রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকণ্ডের পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে ফিরলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প আবারো গতি পায়। ২৬২ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের দুই ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন ও জেএসসি অ্যাটমস্ট্রোস্পোর্টের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আগামী ২০২২ সালে প্রথমে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং পরের বছর আরো ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে আশা করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ ঘাটতি ও কাক্সিক্ষত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সংকট কেবল আমাদের নয়, অনেক দেশের জন্যই এটি একটি বড় সমস্যা। তাই বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে পারমাণবিক বিদ্যুতের পথে পা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সরকার সে পথই বেছে নিয়েছে। পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের কাজ শুরু করার মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপটিতে পা দেয়া হলো। রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা ও গবেষণা আরো উন্নতি লাভ করবে এবং রূপপুরে রুশদের সঙ্গে আমাদের পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরাও সম্পৃক্ত হবেন। তবে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় ঝুঁকিও রয়েছে। সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সতর্কতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করছি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শিল্প-কারখানাসহ সবক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় ভ‚মিকা রাখবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App