×

মুক্তচিন্তা

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন আনার চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:৫৯ পিএম

পরিচালনা পর্ষদের স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতি তার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবই ব্যাংকিং খাতকে এই নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার বড় চ্যালেঞ্জ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের সামনে। শক্ত হাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

ব্যাংক পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতি, মন্দঋণ বৃদ্ধি- সব মিলিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যাংকিং খাতে। ফলে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়ছে। যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত।

গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন দেখা গেছে, নিয়মনীতি না মেনে ঋণ দেয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশের আর্থিক খাতে। ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ গত ৯ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ। এর বাইরে আরো ৪৫ হাজার কোটি টাকার খারাপ ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ এখন এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ৪৮টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টির আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। এই ১৩ ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংক ৮টি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দি ফারমার্স ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিস্থিতি কয়েক বছর ধরে খারাপ হচ্ছে। এমনকি দুই বছর ধরে এই ১৩ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কেবল আমানতকারী বা ব্যবসায়ীরাই ব্যাংকবিমুখ হবেন না, উৎপাদন, বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অনিয়ন্ত্রিত খেলাপি ঋণ ও খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেই মূলত ব্যাংকিং খাতে এমন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খাতটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়েছে।

অবস্থার পরিবর্তনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু জোরালো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায় ও ঋণ বিতরণে অনিয়ম বন্ধ করতে গত প্রায় দুই বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি পাঁচ ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এই দুটি ব্যাংকের মধ্যে ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সর্বশেষ গত সোমবার দি ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সংকট মেটাতে তিন মাস সময় বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে খেলাপি ও কু-ঋণ আদায়ে আলাদা কোম্পানি গঠন, বড় ঋণখেলাপিদের যৌথভাবে তদারকি করা, দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা এবং ব্যর্থদের সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কোনোভাবেই ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো খুবই জরুরি সন্দেহ নেই। এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হলে নিশ্চয় ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে।

পরিচালনা পর্ষদের স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতি তার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবই ব্যাংকিং খাতকে এই নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার বড় চ্যালেঞ্জ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের সামনে। শক্ত হাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এ জন্য গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন, ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি বাড়ানো, প্রয়োজনে আইনি সংস্কার- সবকিছুই করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App