×

অর্থনীতি

আস্থা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ১১:০৯ এএম

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহিক ব্যবধানে সূচক ও লেনদেনে ইতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চারদিনই বেড়েছে সূচক। বাকি এক কার্যদিবস কিছুটা কারেকশন হলেও এর মাত্রা ছিল সামান্য। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছে ডিএসইর মূল সূচক ডিএসইএক্স। বর্তমান ডিএসইএক্স ছয় হাজার ৩২২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এদিকে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। শেয়ারবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখীর আভাসে বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হয়ে লেনদেন বাড়িয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি বাজারের উর্ধমুখী প্রবণতায় নড়েচড়ে বসেছে সব স্তরের বিনিয়োগকারীরা। লোকসান কাটিয়ে মুনাফার প্রত্যাশা করতে শুরু করেছেন অনেকেই। তবে এসব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য বিনিয়োগের প্রবণতা বেশি। লোকসান কাটিয়ে মুনাফা অর্জনে তারা এ পথই বেছে নিচ্ছে। নীতি নির্ধারকদের আন্তরিকতায় বাজারে ফিরতে শুরু করেছে অনেকদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা বিনিয়োগকারীরাও। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের প্রাণ। পাশাপাশি বাজারে পুঁজিপতি বিনিয়োগকারীদের ভূমিকাও কম নয়। মূলত এসব বিনিয়োগকারীর কার্যক্রম বাজারের চিত্র বদলে দিতে পারে। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাপ্ত সপ্তাহে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শেয়ারে ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। এর জেরে অন্যান্য খাতেও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। মূলত আর্থিক খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আচরণ বিধি জারি করায় ব্যাংকের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক দেখা গেছে। নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট আচরণ বিধি মেনে চলতে হবে। এছাড়াও, সংসদে ব্যাংক আইন সংশোধনের প্রতিবেদন  উঠেছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে এক পরিবারে চার সদস্য থাকার সুযোগ রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাবটি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদন সংসদে উঠেছে। গত মঙ্গলবার বৈঠক করে বিলটি নিয়ে আলোচনা শেষে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়। সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বা ৪০ দশমিক ৪২ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই৩০ সূচক কমেছে ০ দশমিক ১০ শতাংশ বা ২ দশমিক ২৯ পয়েন্ট। অপরদিকে, শরিয়াহ বা ডিএসইএস সূচক বেড়েছে এক দশমিক ৩১ শতাংশ বা ১৮ দশমিক ০১ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৮টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির। আর লেনদেন হয়নি একটি কোম্পানির শেয়ার। এগুলোর ওপর ভর করে গত সপ্তাহে লেনদেন মোট চার হাজার ৯৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। তবে এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় চার হাজার ৬৮৪ কোটি ৯৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৩৮ টাকার। সেই হিসাবে সমাপ্ত সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ২৮৮ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার ১৫১ টাকা বা ছয় দশমিক ১৬ শতাংশ। আর সমাপ্ত সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৮ দশমিক ০০ শতাংশ। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে পাঁচ দশমিক ৭২ শতাংশ। ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে চার দশমিক ৩২ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে এক দশমিক ৯৬ শতাংশ। অপরদিকে সপ্তাহশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএসইএক্স ৭৫ দশমিক ২০ পয়েন্ট বা ০.৯৪ শতাংশ বেড়ে সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ১১৮৪৪ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে হাত বদল হওয়ার ২৮৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫২টির, কমেছে ১১৭টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির দর। এগুলোর ওপর ভর করে বিদায়ী সপ্তাহে ৩১৫ কোটি ৭৮ লাখ ৪১ হাজার ৭৭৮ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। সাপ্তাহিক রিটার্নে দর বেড়েছে ১৫ খাতে বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই) দর (রিটার্ন) বেড়েছে ১৫ খাতে। আর দর কমেছে ৫ খাতে। লংকাবাংলা সিকিউটিজ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, আলোচিত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে জুট খাতে। গত সপ্তাহে এ খাতে দর বেড়েছে ৮.০৯ শতাংশ। এরপরেই আছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাত। এ খাতে দর বেড়েছে ৪.৭৬ শতাংশ। দর বাড়ার অন্যান্য খাতের মধ্যে ব্যাংক খাতে ০.৯৬ শতাংশ, সিরামিক খাতে ০.৫৭ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ১.৬৪ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ০.৮৮ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১.৩২ শতাংশ, জেনারলে ইন্স্যুরেন্স খাতে ০.৮৪ শতাংশ, লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতে ১.১৫ শতাংশ, বিবিধ খাতে ১.৮০ শতাংশ, আর্থিক খাতে ০.৭৫ শতাংশ, পেপার ও প্রিন্টিং  খাতে ২.৬৩ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ০.৮৮ শতাংশ, ট্যানারি খাতে ০.২২ শতাংশ এবং টেক্সটাইল খাতে ২.২০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। এদিকে দর কমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে সেবা ও আবাসন খাতে। এ খাতে দর কমেছে ৩.২৮ শতাংশ। এরপরেই আছে টেলিকমিনিউকেশন খাত। এ খাতে দর কমেছে ১.৫০ শতাংশ। দর কমার অন্যান্য খাতের মধ্যে সিমেন্ট খাতে ১ শতাংশ, আইটি খাতে ১.২৪ শতাংশ এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ০.৩৩ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে। ডিএসইতে পিই রেশিও কমেছে সমাপ্ত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কমেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিএসইতে পিই রেশিও কমেছে দশমিক ৫ পয়েন্ট। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে পিই রেশিও অবস্থান করছে ১৬ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৬ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। বিশ্লেষকদের মতে, পিই রেশিও যতদিন ১৫ এর ঘরে থাকে ততদিন বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। সপ্তাহ শেষে খাতভিত্তিক ট্রেইলিং পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ১০.৬ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ৩০.৫ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ২৩.৯ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ২৬ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২৯.২ পয়েন্টে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১২.২ পয়েন্টে, সাধারণ বিমা খাতে ১২.৮ পয়েন্টে, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ২৪.৩ পয়েন্টে। এছাড়া পাট খাতের পিই রেশিও মাইনাস ২৯.৯ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের  ৩০.৫ পয়েন্টে, এনবিএফআই খাতে ২০.৬ পয়েন্ট, কাগজ খাতের মাইনাস ১২.৫ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২০.৫ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতের ২৬.১ পয়েন্টে, চামড়া খাতের ১৮.৫ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৬.৯ পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের ২৪.৭ পয়েন্টে এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে মাইনাস  ২৪.১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App