×

ফিচার

সুলতান সুলেমান যখন বাংলায় কথা বলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০১৭, ০২:০৭ পিএম

ভয়েজ আর্টিস্ট হয়ে কাজ করাটা অন্যরকম আনন্দের। আমার কাজ নিয়ে সবাই আলোচনা করছেন; অথচ আমাকে চিনতে পারছেন না। চায়ের দোকানে আমি চা খাচ্ছি; সেখানে সুলতান সুলেমান সিরিয়াল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ আমাকে কেউ চিনতে পারছে না। এটা বেশ উপভোগ করি’Ñ কথাগুলো বলছিলেন দীপ্ত টেলিভিশনের জনপ্রিয় মেগা সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমান’র ভয়েজ ডিরেক্টর দীপক সুমন। প্রায় ৭শ বছর আগে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন সুলতান সুলেমান। এই সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ ছিল সুলতান সুলেমানের নেতৃত্বে ষোড়শ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী। ক্ষমতার টানাপড়েনে সাম্রাজ্যের নানা ষড়যন্ত্র, সন্তানদের হত্যা এবং দাসপ্রথার অন্তরালের কাহিনী নিয়ে নির্মিত মেগা সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমান’ বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। বাংলায় ডাবিংকৃত এই সিরিয়ালটির শেষ পর্ব গত বৃহস্পতিবার প্রচারিত হয়েছে। শেষ পর্বেই মারা যান সুলতান সুলেমান। সিরিয়ালটির সুলতান সুলেমানের বাংলায় ডাবিংকৃত কণ্ঠটি দিয়েছেন দীপন সুমন। তিনি বলেন, এই টিভি সিরিয়ালের বাংলা ডাবিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা আমার শিল্পী জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা। আর সুলতান সুলেমান চরিত্রের বাংলা ডাবিং শিল্পী হিসেবে যে সময় অতিক্রম করলাম, সেটা আমার অভিনয় শিল্পীর জীবনকে নানা অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ করেছে। শুধু ভয়েজ দিলেই তো বাংলায় সুলতান সুলেমান দর্শকদের কাছে পৌঁছে যেত না। এর সঙ্গে জড়িত পুরো দীপ্ত টিভি পরিবার। সংশ্লিষ্ট স্ক্রিপ্ট টিম, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, এডিটর, প্রোডিউসার, এমনকি যে ছেলেটা আমাদের স্ক্রিপ্ট ফটোকপি করে দেয় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা দর্শকদের হৃদয়ের মণিকোঠায়। কীভাবে শুরু হয়েছিল সুলতান সুলেমানের জার্নি? সেটা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে চার বছর আগে। দীপক সুমন বলেন, দীপ্ত টিভি প্রতিষ্ঠার দুই বছর হলেও আমাদের জার্নিটা চার বছরের। শুরুর দিকে জাফর ইকবালের একটা সায়েন্স ফিকশনকে অ্যানিমেশন করার পরিকল্পনা ছিল। সেভাবে কিছু কাজও আমরা করেছি। সেই কাজটি করতে গিয়ে আমাদের একটা ভয়েজ টিম গোছানো হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে দীপ্ত টিভি ‘সুলতান সুলেমান’র বাংলায় ডাব করার স্বত্ব নিয়ে আসে। এর আগে ৫৪টা দেশে সিরিয়ালটি ডাবিং করে প্রচার হয়েছে। সিরিয়ালটি দেখার পর আমরা নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজে নামলাম। শুরু থেকেই আমার মনে হয়েছে এটি খুবই জনপ্রিয় হবে। দর্শককে আকর্ষণ করার মতো অনেক কিছু আছে সিরিয়ালটিতে। আমরা চেষ্টা করলাম, বাংলায় আমাদের কণ্ঠে সেই চরিত্রগুলোকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে। আমরা সেই কাজটি ঠিকভাবে করতে পেরেছি বলে বিশ্বাস করি। দর্শকের ভালোবাসা তার প্রমাণ। সুলতান সুলেমান বাংলাদেশে ভয়েজ আর্টিস্টদের কাজের ক্ষেত্রটাকে বড় করে দিয়েছে বলে মনে করেন দীপক সুমন। তিনি বলেন, এখন তো দীপ্ত টিভিতে ১৪ জন ফুলটাইম ভয়েজ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া ৫০/৬০ জন ভয়েজ আর্টিস্ট; ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। আমাদের থিয়েটারকর্মীদের কাজের একটা ভালো ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। টেলিভিশন নাটকে অভিনয় যখন গ্ল্যামার আর অদক্ষ লোকদের হাতে নষ্ট হয়ে গেছে তখন থিয়েটারকর্মীদের জন্য ভয়েজ আর্টিস্ট নতুন কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি করেছে। টেলিভিশন নাটকে তো স্টার হওয়ার মোহ থাকে। নিজের চেহারা দেখানোর সুযোগ থাকে। ফলে নানা উপায়ে অদক্ষ লোকরা সেখানে ঢুকে জায়গাটা নষ্ট করে ফেলেছে। ভয়েজ আর্টিস্টদের যেহেতু স্টার হওয়ার সুযোগটা কম; তাই এখানে সেই তথাকথিত গন্যমান্য, আর অদক্ষ লোকদের আনাগোনা কম। আমি মনে করি বাংলাদেশে ভয়েজ আর্টিস্টের কাজের ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হবে। আমার জানা মতে নতুন আরো তিনটা স্টুডিও তৈরি হচ্ছে। সেখানে ফুলটাইম জব হিসেবে থিয়েটারের দক্ষ শিল্পীরা ভয়েজ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। সুলতান সুলেমান ভয়েজ আর্টিস্টদের কাজের ক্ষেত্রকে বড় করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App