×

মুক্তচিন্তা

নাসিরনগরে হামলার বিচার কি হবে না?

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০১৭, ০৭:০৭ পিএম

এই ঘটনায় দায়ের হওয়া ৮টি মামলার একটিরও চার্জশিট এক বছরেও না হওয়া খুবই হতাশাজনক। প্রলম্বিত বিচার ন্যায় বিচারের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেয়। আমরা চাই নাসিরনগরের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।

নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর নারকীয় হামলার বছর পার হয়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি পুলিশ। অপরাধীদের চিহ্নিত ও শাস্তির বিষয়ে উদাসীন বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করছেন। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া ৮টি মামলার একটিরও চার্জশিট এক বছরেও না হওয়া খুবই হতাশাজনক। প্রলম্বিত বিচার ন্যায় বিচারের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেয়। এখানেও এরকমটা ঘটতে যাচ্ছে কিনা সে আশঙ্কাই দেখা দিচ্ছে।

গত বছরের ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের রসরাজের ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবা শরীফকে ব্যঙ্গ করে ছবি পোস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হয়। জানা যায়, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নামের একটি সংগঠনের ডাকে উত্তেজিত জনতা বেশকিছু হিন্দু বাড়িঘর এবং দত্তবাড়ি মন্দির, জগন্নাথ বাড়ি মন্দিরসহ ১২টি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা লুটতরাজও করে। অবশ্য আহলে সুন্নাতের স্থানীয় নেতারা তখন দাবি করেছেন, এ হামলার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বরং তারাও হামলকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। যদি কেউ ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দিয়েও থাকেন সেটা তো তার দায়। এ জন্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর কোনো যুক্তিতেই হামলা হতে পারে না। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরও একটি গোষ্ঠী সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দির ও বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না। এ ছাড়া গত বছরের গোড়ার দিকে একই এলাকায় এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে হামলা চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে রীতিমতো ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে রংপুরেও একই ঘটনা দেখলাম। একের পর এক এ ধরনের ঘটনা থেকে সহজেই ধারণা করা যায় যে, একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী সারাদেশে সক্রিয়। প্রশাসন এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল না থাকার কথা নয়। কিন্তু তাদের যথোপযুক্ত ভ‚মিকা নিতে দেখা যায়নি। সংখ্যালঘুদের ওপর এরকম আক্রমণ জাতীয় সংহতির ওপর বিরাট আঘাত। এই ধরনের হামলার ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে প্রশাসনকে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।

নাসিরনগরের হামলার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাতে এ ঘটনার বিচার নিয়েও জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু এক বছরেও বিচার প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া এখন হতাশাই বাড়াচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন বলেছে, তদন্ত নির্ভুল করতেই নাকি সময় বেশি লাগছে। তা যদি সত্যি হয় তাহলে ভালো। কিন্তু এ কথা ভুক্তভোগীদের আশ্বস্ত করতে পারছে না। আমরা চাই নাসিরনগরের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত  আইনের আওতায় আনা হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App