×

মুক্তচিন্তা

ডা. মিলন এক সংগ্রামী চেতনার নাম

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০১৭, ০৭:১৪ পিএম

যারা রাজনীতি নিয়ে ভাবেন, রাষ্ট্রকে নিয়ে চিন্তা করেন, গণতন্ত্র, গণমানুষের চাওয়া-পাওয়া যাদের চিন্তা-চেতনাকে পরিচালিত করে সেই সব গণতন্ত্রমনাদের কাছে আজকের দিনটি একটি স্মরণীয় দিন। আজ ২৭ নভেম্বর, শহীদ ডা. মিলন দিবস।

১৯৯০ সালের আজকের এই দিনে তৎকালীন সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের চ‚ড়ান্ত পর্বে সামরিক জান্তার পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সন্নিকটে ডা. মিলন শহীদ হন। ডা. মিলনের শাহাদাতের কয়েক দিনের মধ্যেই গণআন্দোলন ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটে। নিশ্চিত হয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ। ডা. মিলন, পুরো নাম শামসুল আলম খান মিলন। ডা. মিলন নামেই তিনি আজ গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সবার মাঝে বেঁচে আছেন। ডা. মিলন একজন সাহসী প্রগতিশীল রাজনীতিক ছিলেন। সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে একটি প্রগতিশীল আধুনিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করাই ছিল তার স্বপ্ন। এ স্বপ্নকে লালন করতে গিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিলেন তিনি।

ডা. মিলন বাংলাদেশের পেশাজীবী আন্দোলানের একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন। নিজের চিকিৎসা পেশার সেবা ও মানবকল্যাণে নিবেদিত থাকার পাশাপাশি পেশার দক্ষতা, গুরুত্ব ও পেশাজীবীদের দাবি আদায়ে সব সময়ই ছিলেন আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভ‚মিকায়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এদেশের চিকিৎসদের একমাত্র জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনকে এবং পেশাজীবীদের সংগঠন (প্রকৃচি) আন্দোলনকে ডা. মিলন তার জীবনের বিনিময়ে দেশবাসীর সামনে গৌরবান্বিত করে গেছেন। গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি, চিকিৎসকদের ২৩ দফা বাস্তবায়নের আন্দোলন করতে গিয়ে একপর্যায়ে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবনকে উৎসর্গ করতে হলো ডা. মিলনকে।

ডা. মিলন কেন স্বৈরাচার সরকারের টার্গেট হলেন? পেশাজীবীদের দেশ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে নিয়ামক ভ‚মিকা পালনের সপক্ষে তিনি সক্রিয় ছিলেন- এটাই তার মূল অপরাধ।

ডা. মিলন বিশ্বাস করতেন পেশাজীবী আন্দোলন দেশের সামগ্রিক পরিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে। তা না হলে রাজনৈতিক আন্দোলন পরিপূর্ণ হয় না। পেশাজীবীরা যেহেতু রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ, অবকাঠামো গঠন এবং জনসেবায় যুক্ত থাকেন, যেহেতু তাদের দেশ ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক উন্নয়নে অন্তর্নিহিত নিয়ামক ভ‚মিকা অপরিহার্য। ডা. মিলনের এ চিন্তা-চেতনাকে দমানোর জন্যই হয়তো তিনি স্বৈরাচারের টার্গেট ছিলেন। যেমন এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের ১৯৭১-এ পাক হানাদার বাহিনী জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। মেধা, পেশাগত সততা, দক্ষতা, সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় ডা. মিলন ছিলেন অপ্রতিদ্ব›দ্বী। ডা. মিলন তৎকালীন বিএমএ’র নির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এবং ঢাকা কলেজের বায়োকেমিস্ট বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রিয়জন ও প্রিয়মুখ ছিলেন।

আজ পেশাজীবী ও রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রিয়মুখ গণতন্ত্রের আত্মনিবেদিত সৈনিক ডা. মিলনের শাহাদাতবার্ষিকী। অথচ কী বিচিত্র এ দেশ। যার রক্তের বিনিময়ে একটি স্বৈরাচাররিরোধী আন্দোলন গণঅভ্যুথানে রূপ নিল, দেশের এত বড় পরিবর্তন হলো, মৃত্যুর ২৭ বছরেও ডা. মিলনের হত্যাকারীদের কোনো বিচার হলো না। ডা. মিলন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীবন দান করেছেন। সেই গণতন্ত্র কতিপয় ক্ষমতালিপ্সু, দুর্নীতিবাজ, রাজনীতিক, অসাধু ব্যবসায়ী, অপশক্তির হাতে বন্দি থাকতে পারে না। মানুষের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক মানাবধিকার ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হোক ডা. মিলন দিবসের অঙ্গীকার।

মানিক লাল ঘোষ : সাংবাদিক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App