×

মুক্তচিন্তা

পুনরাবৃত্তি রোধে অগ্রগতি কতদূর?

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:৪৫ পিএম

শর্ত অনেকাংশে পূরণ করা গেলেও গার্মেন্ট খাতে সৃষ্ট সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি। আমরা চাই দ্রুত  দেশের সব গার্মেন্ট কারখানার নিরাপদ অবকাঠামো ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হোক, যাতে তাজরীন-রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি আমাদের আর দেখতে না হয়। তাজরীন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসন ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার কালবিলম্ব না করে।

বহুল আলোচিত তাজরীন ফ্যাশনস ট্র্যাজেডির পাঁচ বছর পার হয়েছে। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা তাজরীন ফ্যাশনস নামের পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান হতভাগ্য ১১৩ জন পোশাক শ্রমিক। আহত হন আরো তিন শতাধিক। শিল্পকারখানায় অগ্নিকাণ্ডে একসঙ্গে এত মানুষের প্রাণহানির ঘটনা দেশে এটাই প্রথম। সেই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিকরা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই ভয়াবহ ঘটনার ক্ষত তাদের শরীরে-মনে। কান্না হয়তো কখনই থামবে না স্বজনহারাদের পরিবারে। যারা মারা গেছেন, তাদের আর ফিরিয়ে আনা যাবে না কিন্তু প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ কি পেয়েছে সব হতাহতদের পরিবারবর্গ? শাস্তি কি হয়েছে দায়ীদের? ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না এমন ব্যবস্থা কি নিশ্চিত হয়েছে? দুর্ভাগ্যজনক হলো এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে পাঁচ বছর পরও আমাদের হতাশ হতে হচ্ছে।

সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের বছর পূর্তির দিন অর্থাৎ গতকাল দেশের প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার নানামুখী ফলোআপ রিপোর্ট। এ রিপোর্টগুলোতে প্রকাশিত তথ্যগুলো যে কাউকেই হতাশ করবে। প্রথমত শতাধিক মানুষের প্রাণহানির মামলার ক‚লকিনারা এখনো হয়নি। তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, তদন্তে কারখানার মালিকের অবহেলার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী কারখানা ভবন নির্মাণ করা হয়নি। ভবনে জরুরি বহির্গমন পথ ছিল না। যার কারণে অগ্নিকাণ্ডের পরে শ্রমিকরা নিচে নেমে আসতে পারেননি। অগ্নিঘণ্টা বাজার পরও কয়েকটি ফ্লোর থেকে শ্রমিকদের নিচে নামতে দেয়া হয়নি। অন্তত ১০২ জন শ্রমিক কারখানার ভেতরেই পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন (হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন একজন)। গাফিলতির জোরালো অভিযোগ থাকা সত্তে¡ও আজ পর্যন্ত দায়ীরা শাস্তি পায়নি। তাজরীনের মালিক এখনো জামিন নিয়ে হাজতের বাইরে। বিচার প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সন্দেহ কাটছে না, প্রকৃত দায়ীরা শাস্তি পাবে কিনা, পেলেও বা কবে পাবে। এদিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও পাঁচ বছরে পুরোপুরি সুরাহা হয়নি। এখনো হতাহতদের পরিবার-পরিজনকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কথা ছিল একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার, যেখানে বিদেশি পোশাক ক্রেতারাও আর্থিক অনুদান দেবেন। কিন্তু এতদিনেও সেই প্রক্রিয়ার তেমন কিছু হলো না। হতাহতের কিছু পরিবার কিছু অর্থ অবশ্য পেয়েছেন, যা মোটেই সন্তোষজনক নয়। পাঁচ বছর অনেক সময়। ক্ষতিপূরণের জন্য আর কত অপেক্ষা করতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের। আমরা চাই, দ্রুত তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হোক। অনেকে পঙ্গু অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পুনর্বাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিশ্চিত জীবনের ধারায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হতে হবে গার্মেন্ট মালিক, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে।

বলাই বাহুল্য, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড, রানা প্লাজা ধসের মতো বড় ঘটনাগুলো দেশের গার্মেন্ট শিল্পকে এক সংকটজনক পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। বহির্বিশ্বের ক্রেতারা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নানা শর্তারোপ করে দেয়। সেসব শর্ত অনেকাংশে পূরণ করা গেলেও গার্মেন্ট খাতে সৃষ্ট সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি। আমরা চাই  দ্রুত দেশের সব গার্মেন্ট কারখানার নিরাপদ অবকাঠামো ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হোক, যাতে তাজরীন-রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি আমাদের আর দেখতে না হয়। তাজরীন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসন ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার কালবিলম্ব না করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App