×

ফিচার

তারকাদের শোকগাথা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৫৫ পিএম

বারী সিদ্দিকীর গান শুধু তার ভক্ত-শ্রোতারাই শুনতেন এমন নয়। আমাদের কণ্ঠশিল্পীরাও তার গান শুনে মুগ্ধ হতেন। বড় থেকে ছোট সব শিল্পীই তার গানের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতেন। বারী সিদ্দিকীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন কয়েকজন শিল্পী
রুনা লায়লা : বারী সিদ্দিকীর হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়ার বিষয়টি সত্যিই খুব দুঃখজনক। আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির খুব ক্ষতি হয়ে গেল। তার ইউনিক একটি ভয়েজ ছিল। গাওয়ার স্টাইলওটাও ছিল ভিন্নরকম। তার গেয়ে যাওয়া গানগুলোর মধ্যেই তিনি আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি, সেইসঙ্গে মহান আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন। ফরিদা পারভীন : দেশে অনেক ডাক্তার আছেন, ইঞ্জিনিয়ার আছেন, শিল্পপতি আছেন, কিন্তু বারী সিদ্দিকী দেশে একজনই আছেন। সেই বারী সিদ্দিকী শেষ পর্যন্ত চলে গেলেন। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য অনেক কষ্টের, বেদনার। কারণ বারী সিদ্দিকী যুগে যুগে জন্মায় না। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে বারী সিদ্দিকী একজনই। আমি প্রাণ ভরে দোয়া করি বারী সিদ্দিকী তার মরমী গানের মধ্যে দিয়েই যেন ওপারে শ্রেষ্ঠতম একটি স্থানে পৌঁছাতে পারেন। আমাদের সবাইকেই যেতে হবে। আর এ জন্য মানসিকভাবে আমাদের সবাইকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। শহীদুল্লাহ ফরায়েজী : বারী ভাই আমাদের অনুভূতিকে ঋণী করে গেছেন, আমাদের হৃদয়কে ঋণী করে গেছেন। আমাদের অনুভূতি যতদিন থাকবে, আমাদের হৃদয় যতদিন থাকবে বারী ভাই ততদিন আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। বারী ভাই আমার লেখা অসংখ্য গান গেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘চন্দ্র সূর্য যত বড় আমার দুঃখ তত বড়’, ‘আমার মন্দা স্বভাব’, ‘নষ্ট জীবন’, ‘সরলা’, ‘কত দাগ লাগাইলি’ ইত্যাদি গান তার কণ্ঠে শ্রোতা-দর্শক শুনে মুগ্ধ হয়েছেন। বারী ভাই আমার পরিবারেরই একজন। তার চলেও যাওয়া আমার মেনে নেয়া অনেক কষ্টের, যন্ত্রণার। মহান আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুন। সামিনা চৌধুরী : ঘুম থেকে উঠেই বারী ভাইয়ের চলে যাওয়ার খবরটি পাওয়ার পর থেকে কোনোভাবেই বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না। খুব, খুউব কষ্ট হচ্ছে আমার। খারাপ লাগছে এই ভেবেও যে তাকে হাসপাতালে দেখতে যেতে পারলাম না শেষ সময়ে। ‘সেরা কন্ঠ’তেই শেষ দেখা হলো তার সঙ্গে। তিনি এতটা অসুস্থ ছিলেন, বুঝতেই পারিনি। বারী ভাই সত্যিকারের একজন ভালো মানুষ ছিলেন। এমন অসাধারণ কণ্ঠ আর আসবে না। তার প্রতিটি গানই একেকটি অনবদ্য সৃষ্টি। আইয়ুব বাচ্চু : বারী চলে গেছেন, সম্পদ হারানোর মিছিলে বাংলাদেশ বিশাল এক সম্পদকে হারালো। বারী ভাইয়ের মৃত্যুতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তার আর কোনোকিছু দিয়েই পূরণ হওয়ার নয়। তার বাঁশি তার কণ্ঠ দুই মিলিয়েই তিনি নিজেকে বারী সিদ্দিকী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। কয়েক জনমেও আর এই দেশে একজন বারী সিদ্দিকীর জন্ম হবে না। মরণোত্তর সম্মাননাকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু আমি আজ জোরালো কণ্ঠেই বলতে চাই, সত্যিকার অর্থের যারা শিল্পী তাদের যেন যথাযথভাবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জীবদ্দশাতেই সম্মান দেয়া হয়, পুরস্কৃত করা হয়। মৃত্যুর পর তাকে সম্মান দেখিয়ে কোন লাভ নেই, যে কাজের জন্য তিনি সম্মান পাচ্ছেন সেই সম্মান পেয়ে তিনি নিজে যেন আনন্দ করে যেতে পারেন। একজন সুধীন দাস, ফিরোজা বেগম, আব্দুল জব্বার, আজম খান, নিলয় দাস কিংবা বারী সিদ্দিকী এই দেশে আর জন্ম নিবে না। তাই এমন নিবেদিত এবং মহান শিল্পীদের জীবদ্দশায় সম্মান দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হোক। কুমার বিশ্বজিৎ : বারী ভাই চলে গেছেন, সত্যিই বড় অসময়ে চলে গেছেন। উপরওয়ালার বিচার মাঝে মাঝেই বুঝি না আমি। খুব কষ্ট হয় কিছু বিচারের জন্য। বারী ভাইয়ের খুব বেশি যে বয়স হয়েছিল তেমন নয়। আরো বিশটি বছর অনায়াসে তিনি এ দেশের সংস্কৃতির জন্য কাজ করে যেতে পারতেন। কিন্তু পারলেন না। তার পরিপূরক এই বাংলায় আর কেউ হবে না কোনোদিন। চারদিকে একের পর এক শূন্যতা নিজের মনের ভেতরই বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করছে। একের পর এক আমাদের প্রিয় প্রিয় মানুষরা চলে যাচ্ছেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল বারী ভাইয়ের সুরে তিনটি গান গাইবার। আবার আমার সুরে ‘ঢাকা ড্রিম’ চলচ্চিত্রে তিনি প্লে-ব্যাক করেছেন। এটি আগামী বছর শ্রোতারা শুনতে পাবেন। সত্যি বলতে কী বারী ভাই বাউলিয়ানা ছিলেন কিন্তু শেষ সময় ‘সেরা কণ্ঠ’তে ফোক গানের বিশেষ পর্বে যখন রাত আটটা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত সময় কাটালাম তখন তার মধ্যে সংসার, সন্তান নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা দেখেছি। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে তার অবদান যুগের পর যুগ মনে রাখবে এ দেশের মানুষ। অ্যান্ড্রু কিশোর : চলমান ফোক সঙ্গীতে এক অন্যরকম ধারার সৃষ্টি করেছিলেন বারী ভাই। তার গায়কী, তার বাঁশি সবাইকে মুগ্ধ করতো। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে ফোক ঘরানার গানে এক অন্যরকম দরজার সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু যিনি সৃষ্টি করলেন তিনিই চলে গেলেন অসময়ে। এই অসময়ে চলে যাওয়াটা আসলে মেনে নেবার মতো নয়। ভীষণ খারাপ লাগছে বারী ভাইয়ের জন্য এই ভেবে যে তিনি যদি তার শরীরের প্রতি আরেকটু যত্নবান হতেন তাহলে আমরা তাকে আরো বহু বছর পেতাম গানের ভুবনে। জাহিদ হাসান : বারী ভাইয়ের কি এমনইবা বয়স হয়েছিল যে তাকে চলে যেতে হবে। তার এই চলে যাওয়াটা মেনে নেয়ার নয়। আমি বলব এই মৃত্যু অকাল মৃত্যু। তার এই মুত্যুতে সত্যিই আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। বারী ভাই খুব অভিমানী একজন মানুষ ছিলেন। তবে তিনি সত্যিকারের একজন শিল্পী ছিলেন। শুধু বাঁশি বাজানোতে নিজেকে পারদর্শী করে তুলতে দেশের বাইরে গিয়েছেন। হুমায়ূন স্যারের বাসাতেই তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। তারপরও তো ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে তিনি গান গাইলেন, এরপর বাকিটা তো ইতিহাস। ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ গানটি আমার লিপেই গিয়েছিল। আল্লাহ বারী ভাইকে বেহেস্ত নসীব করুন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App