×

মুক্তচিন্তা

লুটেরা শ্রেণিচরিত্র বেষ্টিত রাষ্ট্র ও মানুষ

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:৫৩ পিএম

দেশে যে গুম কালচার চালু হয়েছে, এর অন্যতম কারণ ওই কালো টাকাই। ক্ষমতাবানরা যদি রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় অবৈধভাবে পায়, তখন আর সাধারণ মানুষের দাঁড়াবার পথ থাকে না। রাষ্ট্রকে দাঁড়াতেই হয় সব অসত্যের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রশাসকরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে রাষ্ট্র ক্রমশই খোঁড়া হয়ে যায়। আর তখনই সংঘবদ্ধ জঙ্গিবাদীর মতো অপশক্তি রাষ্ট্রে হাত চালাবার সাহস পেতে থাকে।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেক্টর একটি জনপ্রিয় খাত। আমরা টিভিতে প্রায়ই এর পক্ষে বিজ্ঞাপন দেখি। সেই সেক্টর নিয়েই হতাশা প্রকাশ করেছেন একজন প্রাজ্ঞ ব্যাংকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, অর্থ লেনদেনের মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ‘লুটপাট ও ডাকাতি’ হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘বগুড়ায় আমার এক শিক্ষককে কিছু টাকা পাঠাইতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গুনে গুনে ২ শতাংশ কেটে রেখেছে। তারপর টাকা তুলতে গেলে শিক্ষকের কাছ থেকেও টাকা কেটে নিয়েছে। এই রকম লুটপাট ও ডাকাতি করছে। যেহেতু কোনো নিয়ামক পরিমণ্ডল নেই, তাই কাউকে ধরা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেছেন- ‘বাজার অর্থনীতিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতবাজ-লুটেরারা অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে। কারণ হলো- ওই যে পরিমণ্ডল, যদি রেগুলেটরি ফ্রেইম ওয়ার্ক ছাড়া টেকনোলজিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্টে চলে যান। এই যে মোবাইল ফান্ড ট্রান্সফার বলে মোবাইল ব্যাংকিং, আমি তীব্র ভাষায় নিন্দা করি, ধিক্কার জানাই।’

তার দেয়া তথ্য মতে, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে বাংলাদেশ থেকে ছয় হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে পাচার হয়েছে। একটি রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী যা বলেন, তাই যে রাষ্ট্রের আশা-আকাক্সক্ষার নিয়ামক হবে তেমন কোনো কথা নেই। যারা ভোট পেয়ে জনপ্রতিনিধি হন, তারা মানুষের কল্যাণ চাইবেন এটাই নিয়ম। সে নিয়ম তৃতীয় বিশ্বে কি মানা হয়? না, হয় না। হয় না বলেই গণতন্ত্র বিপন্ন হয়। হতে বাধ্য হয়। জাতীয় সংসদ চালু থাকে সবার অংশগ্রহণে। বাংলাদেশে বারবারই তা ব্যাহত হয়। অথচ সবাই বলেন, সংসদই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

গণতান্ত্রিক সভ্যতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে ঐক্য। এই ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো জাতিই মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। প্রশ্ন এটাও আছে, ঐক্য হবে কার সঙ্গে? কোনো খুনিচক্রের সঙ্গে? তাদের দোসরদের সঙ্গে? একাত্তরের পরাজিত রাজাকারদের সঙ্গে। কোনো দেশে দুর্নীতি দমনের জন্য যদি একটি বিশেষ দপ্তর থাকে আর সে দপ্তর পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তবে সাধারণ মানুষের আর কোনো আশ্রয় থাকে না। দুর্নীতি দমনের নামে যদি প্রতিপক্ষকে পীড়নই মূল লক্ষ্য হয় তবে তা নিয়ে আর কি-ই বলার থাকতে পারে।

গণতন্ত্র শুধুই মানুষের স্বার্থরক্ষা করে না, রাজনীতিরও একটি পরিশুদ্ধ সিঁড়ি নির্মাণ করে। আর সেই সিঁড়িটি হচ্ছে পারস্পরিক সম্মানবোধ। মার্কিন মুল্লুকে ডেমোক্রেট কিংবা রিপাবলিকান দলের সিনেটর কিংবা কংগ্রেসম্যানরা যে একে অন্যের সমালোচনা করেন না, তা নয়। তারাও হাউজে বসে একে অন্যের নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। কিন্তু জাতীয় প্রয়োজনে তারা সবাই এক এবং অভিন্ন। তখন তাদের স্লোগান হয়ে পড়ে ‘উই আর আমেরিকানস’। কিন্তু এই যে আমরা সবাই আমেরিকানস, তারপরও কোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকের পক্ষে কেউই দাঁড়ান না। কিংবা দাঁড়াতে চান না। কারণ যে জন রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করেছে, সে তো রাষ্ট্রের শত্রু। কোনো শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তাদের পক্ষ নেবেন কেন?

একটি কথা আমরা সবাই জানি, দুর্নীতিবাজরাও এক ধরনের কট্টরপন্থী। কারণ তারা অবৈধভাবে নিজেদের মুনাফা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। মনে রাখা দরকার, যারা ধর্মের নামে কট্টরপন্থী নীতি অনুসরণ করে, তাদের পরোক্ষ মদদ দেয় রাষ্ট্রের দুর্নীতিবাজরা। কারণ ধর্মের নামে কট্টরতাবাদ কায়েমকারীরা তখন মানুষকে বলে, ‘দেখ দুর্নীতিবাজরা কীভাবে রাজনীতিকে কলুষিত করে তুলেছে। এসো আমরা তোমাদের শান্তির পরশ দেব।’

কট্টরবাদিতার অন্যতম মিত্র হচ্ছে একনায়করা। যারা মোটেই গণতন্ত্র অনুসরণ করে ক্ষমতায় আসার তোয়াক্কা করে না। তবে তারা ক্ষমতা অধিগ্রহণ করে পরে ‘নামকাওয়াস্তে’ (হাঁ-না এর মতো) ভোট অনুষ্ঠান করে ক্ষমতার বৈধতা নিয়ে নেয়। মানুষ আস্থা রেখেছে কি-না, তার তোয়াক্কা না করেই ক্ষমতা এরা কেবলই দীর্ঘায়িত করে। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ অথবা পাকিস্তানে জেনারেল জিয়াউল হক, জে. পারভেজ মোশাররফের শাসন আমাদের সেই সত্য জানান দিয়ে যায়।

বিষয়টি কারোরই অজানা থাকার কথা নয়, বুর্জোয়া শক্তি এবং সামন্তবাদী নেতৃত্ব বিশ্বে শীতল যুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ার সব সময়ই অত্যন্ত পছন্দ করে। ইউনাইটেড স্টেটস অব সোভিয়েত রাশিয়া (ইউএসএসআর) সেই শীতল যুদ্ধে অনেকটা শক্তি সঞ্চয় করে আরেকটি পরাশক্তি ইউএসএ’র সফল প্রতিপক্ষ হতে চেয়েছিল। আর চেয়েছিল বলেই ‘ইউএসএসআর’ ভেঙে দেয়ার জন্য অপর পরাশক্তিটি ছিল অত্যন্ত তৎপর। তারা সফলও হয়েছিল বেশ দ্রুতই। বর্তমান সময়ে ভেনিজুয়েলা কিংবা কিউবার মতো ক্ষুদ্র সমাজতান্ত্রিক দেশ তাই কোনো মতেই বৃহৎ পরাশক্তির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। বরং এদের ব্যবহার করা হচ্ছে মাঝে মধ্যে ক্রীড়নক হিসেবেই।

গণতান্ত্রিক সভ্যতার শীর্ষ ধ্বজাধারীরা বিশ্বকে বলছে, দেখ আমরা বিশ্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলেও ক্ষুদ্র সমাজবাদী দেশগুলো আমাদের সমর্থন দিচ্ছে না। প্রকারান্তরে তারা বুঝাতে চাইছে সমাজতন্ত্রী ক্ষুদ্র কিছু রাষ্ট্র মৌলবাদ, কট্টরবাদেরই দোসর। অথচ ভয়াবহ বাস্তবতা হচ্ছে এই, সোভিয়েত সৈন্য তাড়াবার নামে আফগানি তালেবানদের হাতে ভারী অস্ত্র তুলে দিয়েছিল আজকের ‘বিশ্ব সন্ত্রাস’ দমনকারীরা। তারাই নিজেদের প্রয়োজনে ভাড়া খাটিয়েছিল কিছু কট্টরবাদী নেতাকে। আরো স্পষ্ট করে বললে বলতে হবে, এরা কি সৌদি, কুয়েত, কাতার, ওমান, দুবাইয়ের কট্টরবাদী শাসককুলকে এখনো পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে না? হ্যাঁ, আমি তাদেরই কট্টরবাদী বলি, যারা জনগণের ভোট, মতের পরোয়া না করে বংশ পরম্পরায় রাষ্ট্র শাসন করে। যা বনেদি কায়দায় চলে আসছে আরব মুলুকে।

অনুক‚ল সম্পর্ক না থাকায় লিবিয়ার শাসক কর্নেল মোয়াম্মার গাদ্দাফি, কিংবা ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে চিরতরে সরাতে তারা তৎপর হলেও মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রবাদীদের এরা শীর্ষ মিত্র বলেই বিবেচনা করছে। শঙ্কার কথা হচ্ছে- বিশ্বে যুদ্ধ, রক্তপাতের জন্য যারা দায়ী তাদের সামনেই কেউ দাঁড়াতে পারছে না। আমরা মারাত্মকভাবে উৎকণ্ঠিত না হয়ে পারি না, যখন দেখি মার্কিন মুল্লুকের কোনো কোনো ধনবাদী কোম্পানি অস্ত্র বিক্রির মহড়ার জন্য রাজনীতিকদের ভোট ফান্ডে মোটা অঙ্কের ডোনেশন দেয়।

রক্তের বিনিময়ে তেল চাই, এমন মানসিকতা যারা পোষণ করে তারাই বিশ্বে গণতন্ত্রের অন্যতম প্রবক্তা। অথচ ‘জনগণের দ্বারা সরকার, জনগণের জন্য সরকার এবং জনগণই সরকার’- এটাই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হওয়ার কথা ছিল। গণতন্ত্রের আলো বিতরণকারীদের চারপাশে এখন ধনতন্ত্র এবং লুটেরা শ্রেণির বাহকদের ছড়াছড়ি। যারা বড় ডোনেটর তারাই বড় অস্ত্র কারখানার মালিক। তেল কোম্পানিগুলোর তেল ব্যবসার ওপর অস্ত্র ব্যবসায়ীদের একটা বদনজর সব সময়ই থাকে। কারণ তারা মনে করে একটি মিসাইল ফুটলেই সেই মরুসুড়ঙ্গ দিয়ে তেলের নহর বের হয়। আর প্রাণহানি তা তো মামুলি বিষয়। এটা খুবই পরিতাপের কথা, পশ্চিমা বুর্জোয়াগোষ্ঠীর কাছ থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনেক শাসকই ভালো দিকগুলো শিখছে না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কিংবা উপমহাদেশের অবস্থা আরো করুণ। কিছু সংখ্যক ‘প্রিয়ভাজন’ ব্যবসায়ী রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হবে, এ সুযোগটা রাজনীতিকরাই তৈরি করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে কিছু লুটেরা ব্যবসায়ীর মুখোশ বারবারই খসে পড়ছে। ঋণ খেলাপি, ব্যাংক লুটপাট কেলেঙ্কারি যেভাবে উন্মোচিত হয়েছে, তা সেই ঘটনাগুলোরই ধারাবাহিকতা মাত্র। এটা খুব নিশ্চিত করে বলা যায়, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ধারে কাছে যাদের অবস্থান তাদের হাতের রশি ধরে কিছু ভাড়াটে লুটেরাও পার পেয়ে যাচ্ছে। এদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না। ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম, ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব, সুশাসনের অভাব এর অন্যতম কারণ। সরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ কম থাকার কারণেই মূলত ঋণখেলাপির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ ভাগাভাগি করায় সেখানেও খেলাপির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। গত জুনে ঋণ বিতরণ ছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ঋণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে সরকারি খাতের ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। গড়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি। জুনের তুলনায় এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এ মহড়াটি মূলত আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার। আর তা করতে গিয়ে ‘কত প্রাণ হবে বলিদান’ সে হিসাব কেউই রাখবে না। তাই তেলের জন্য যারা রক্তপাত ঘটাচ্ছে কিংবা শেয়ারবাজার লুট করতে যারা সহায়তা করছে, এরা মূলত একই শ্রেণি। পার্থক্য এই, কারো শক্তি বেশি, কারো শক্তি কম। আমরা জানি, তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের প্রজন্মও সৃজনশীল বিবর্তন চাইছে। মুক্তির দিশা চাইছে। কিন্তু বুর্জোয়াবাদীরা একটা শিকল পরিয়েই এই মুক্তি দেয়ার মহড়া দেখাচ্ছে সর্বত্র। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের প্রজন্মকে বসে থাকার সুযোগ নেই। শিক্ষিত প্রজন্মকে লেজুড়বৃত্তি বাদ দিয়ে আলোর সন্ধানে এগিয়ে যেতে হবে। উপড়ে ফেলতে হবে সব অপশক্তির ভিত। এই দেশ গণমানুষের। যারা উত্তরাধিকার সূত্রে ভোগবাদী হওয়ার খায়েশ দেখাচ্ছেন, তাদের বলে দিতে হবে, আপনারা রাজনীতি করুন দেশের কল্যাণ চিন্তা করে। দখলদার কিংবা ভোগবাদীদের দুর্বৃত্তপনার জন্য তিরিশ লাখ শহীদ তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেননি।

প্রশ্ন একটাই, এর থেকে মুক্তির পথ কী? এই ক‚টনৈতিক নিষ্পেষণ কীভাবে বন্ধ করা যাবে? এর উত্তরটি খুবই সোজা। মানুষকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে। প্রজন্মকে সত্যের পক্ষে কথা বলতে শিখতে হবে। মনে রাখা দরকার, সামন্তবাদ সব সময়ই ‘প্রভু এবং দাস’ প্রথায় বিশ্বাস করে। এ প্রথার আগল ভাঙতে না পারলে মানুষের সত্যিকার উন্নয়ন মুক্তি সম্ভব নয়। বাংলাদেশে অবৈধ টাকার মালিকরা টাকা দিয়ে সব কিছু কিনে নেয়ার যে আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে তা সমাজের জন্য চরম বিষফোঁড়া তো বটেই।

খুবই শঙ্কার কথা, এই কালো টাকার মালিকরাই টাকা দিয়ে মানুষ খুন করাচ্ছে। দেশে যে গুম কালচার চালু হয়েছে, এর অন্যতম কারণ ওই কালো টাকাই। ক্ষমতাবানরা যদি রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় অবৈধভাবে পায়, তখন আর সাধারণ মানুষের দাঁড়াবার পথ থাকে না। রাষ্ট্রকে দাঁড়াতেই হয় সব অসত্যের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রশাসকরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে রাষ্ট্র ক্রমশই খোঁড়া হয়ে যায়। আর তখনই সংঘবদ্ধ জঙ্গিবাদীর মতো অপশক্তি রাষ্ট্রে হাত চালাবার সাহস পেতে থাকে।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান ‘ফ্রম টু ইকোনোমিস টু নেশনস : মাই জার্নি টু বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে যাওয়ার অর্থ হলো স্বাধীনতাযুদ্ধে সাধারণ মানুষ যে জীবন দিয়েছে তাদের ঋণকে সম্মান জানাতে ব্যর্থ হওয়া। প্রকৃত অর্থে জনগণের এই ব্যাপক অংশগ্রহণই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সমাজ বিনির্মাণের প্রয়োজনীয় উপাদান ও গণতান্ত্রিক অধিকার সাধারণ মানুষের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। কিন্তু আমরা তার বদলে অধিকতর অযোগ্য সমাজ তৈরি করেছি, যেখানে স্বাধীনতার সুফল খুবই স্বল্পসংখ্যক মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত হয়েছে এবং তারা সমকালীন বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে।’

এই আগল ভাঙতে হবে শিক্ষিত প্রজন্মকে। তাদের দাঁড়াতে হবে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে। আর যারা রাজনীতিক, তাদের বেরিয়ে আসতে হবে আদিম গুহা থেকে। মনে রাখা দরকার, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমরা অনেক মন্ত্রীর বিদায়ও দেখছি দেশে-বিদেশে। তাই শিক্ষা নিতে হবে এই রাজনীতির মাঠ থেকেই।

ফকির ইলিয়াস : কবি, কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App