×

মুক্তচিন্তা

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:২৯ পিএম

বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব রকম দ্রব্যমূল্য ও সেবামূল্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর শেষ পর্যন্ত তা বহন করতে হয় ভোক্তা সাধারণকে। তাই সাধারণ ভোক্তাদের সামর্থ্য তথা জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুতের দাম কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার বিদ্যুতের মতো জরুরি প্রয়োজনীয় সেবা খাতের ব্যাপারে জনবান্ধব নীতি নিয়ে এগোবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

আরেক দফা বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। এই দফায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন এ হার আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। বর্তমান সরকার আমলে এ নিয়ে আটবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এত কম সময়ে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নাগরিকদের জীবনযাত্রায় বাড়তি চাপ যোগ করবে- এটাই স্বাভাবিক।

নতুন হারে আবাসিকে মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ১৫ টাকা, ১৫০ ইউনিটে ৪৮ টাকা, ২৫০ ইউনিট পর্যন্ত ৯০ টাকা, ৪৫০ ইউনিট পর্যন্ত ১৯৬ টাকা এবং ১০০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ৬০৪ টাকা। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কার্যালয়ে (বিইআরসি) এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের নতুন দর ঘোষণা করেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন, বর্ধিত দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করে কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা আয় করবে। তবে ন্যূনতম বিল তুলে দেয়ায় কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের খরচ কমবে। ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের মিনিমাম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে কিছু দরিদ্র গ্রাহক উপকৃত হবেন। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিভিন্ন কোম্পানির প্রস্তাবগুলো নিয়ে যে গণশুনানি আগে হয়ে গেল তা বিতরণ ও সঞ্চালনকারী কর্তৃপক্ষ দাম বাড়ানোর পক্ষে নানা যুক্তি দেখালেন। কিন্তু এর বিপরীতে ভোক্তাদের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে দেখানো হয়েছে দাম বৃদ্ধির দাবি অযৌক্তিক। শুনানিতে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা প্রফেসর শামসুল আলম বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে দেখিয়েছেন, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, ঘুষ লেনদেন আর লুটপাটের কারণে বিদ্যুৎ খাতে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আদর্শিকভাবে এ খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ ছাড়া বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় ভোক্তারা বছরে ৭ হাজার ৮৪৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এসব বন্ধ করা গেলে দেশে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১ টাকা ৫৬ পয়সা কমানো সম্ভব। বাম দলগুলোর পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়েছে।

বিশ্ববাজারে অনেক দিন থেকেই জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী। দেশীয় বাজারেও ফার্নেস অয়েলের দাম কমানো হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমে গেছে। দেশে গ্যাসভিত্তিক কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের দাম কমার কথা। কিন্তু দাম না কমিয়ে উল্টো বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ কেন নেয়া হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। জানা কথা যে, বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব রকম দ্রব্যমূল্য ও সেবামূল্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর শেষ পর্যন্ত তা বহন করতে হয় ভোক্তা সাধারণকে। তাই সাধারণ ভোক্তাদের সামর্থ্য তথা জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুতের দাম কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার বিদ্যুতের মতো জরুরি প্রয়োজনীয় সেবা খাতের ব্যাপারে জনবান্ধব নীতি নিয়ে এগোবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App