×

মুক্তচিন্তা

ছাত্রলীগের অপকর্মে ছাড় নয়

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:৫৮ পিএম

পাথরঘাটার তরুণী হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক, খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক। ছাত্রলীগের চিহ্নিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আরো যেসব অভিযোগ উঠেছে এগুলোরও তদন্ত হোক। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অপতৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে; অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে।

পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত কলেজ শাখার সভাপতি ও সম্পাদকসহ চার ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর মুখ খুলতে শুরু করেছে যৌন হয়রানিসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীরা। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নামে অন্তর্দলীয় কোন্দল, মারামারি, ভর্তিবাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির অভিযোগ বরাবরের। নতুন করে যোগ হয়েছে ধর্ষণ-খুন, যৌন হয়রানির মতো অপরাধকর্ম। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, অভিভাবক দল কারোই কোনো নিয়ন্ত্রণ কি নেই মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর? অপরাধের বিচার না হলে, অপরাধী আসকারা পেলে অপরাধ প্রবণতা বাড়তেই থাকবে, সেটাই হচ্ছে।

গত ১০ আগস্ট দুপুরে বরগুনার পাথরঘাটা কলেজের পুকুর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১২ আগস্ট পাথরঘাটা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। ওই ঘটনায় পাথরঘাটা কলেজ শাখার সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্টসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইতোমধ্যে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদের অপরাধ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হতে শুরু করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তুলে ধরে গতকালের ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পাথরঘাটা কলেজে একচ্ছত্র আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতানেত্রী। তাদের দৌরাত্ম্যের কাছে জিম্মি শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কলেজে ভর্তি, ফরম পূরণ সবকিছুই এদের নিয়ন্ত্রণে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নানা কৌশলে প্রায় শতাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছে তারা। এতদিন ভয়ে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে সাহস করেনি। এমনকি স্থানীয় পুলিশও তাদের সমীহ করে চলত। এটা কি কেবল পাথরঘাটার চিত্র। মোটেই না। কয়েকদিন আগেই ছয় নারীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছিলেন শরীয়তপুরের ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হাওলাদার।

ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীদের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তার, ভর্তি বাণিজ্য কিংবা দলীয় কোন্দল নিয়ে মারামারি-খুনখারাবিতে প্রতিনিয়ত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ছাত্রলীগের দুষ্কর্মে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হচ্ছে সরকারকেও। সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন ও সাফল্যকে স্লান করে দিচ্ছে ছাত্রলীগের দুষ্কর্ম। এটা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক ও নেতৃস্থানীয়রা বুঝেন না তা নিশ্চয়ই নয়। প্রশ্ন হলো- তারপরও ছাত্রলীগকে সামলানো যাচ্ছে না কেন? আমরা চাই, পাথরঘাটার তরুণী হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক, খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক। ছাত্রলীগের চিহ্নিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আরো যেসব অভিযোগ উঠেছে এগুলোরও তদন্ত হোক। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের অপরাধ পুলিশ দেখেও না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও তাদের ঘাঁটাতে চায় না। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। পরিচয় যাই হোক অপরাধীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অপতৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভ‚মিকা নিতে হবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে; অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে। সরকারকেও তার ভাবমূর্তির স্বার্থেই শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, ছাত্রলীগের অপকর্ম ঠেকাতে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App