×

জাতীয়

কিশোরগঞ্জের ‘চ্যাপা’ যাচ্ছে লন্ডন-যুক্তরাষ্ট্রে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ০১:৪৬ পিএম

কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে চ্যাপা এমন একটি উপাদেয় খাবার যা মুখের রুচি বাড়িয়ে দেয়। চ্যাপার কথা শুনলেই অনেকের মুখে জল আসে! শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, এখানকার চ্যাপার কদর আছে লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রেসহ বিশ্বের অনেক দেশের বাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকায়। সাধারণত পুঁটি ও ছোট পাবদা মাছ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে চ্যাপা শুঁটকি তৈরি করা হয়। তবে দাম কম হওয়ায় পুঁটি মাছ দিয়েই বেশি পরিমাণ চ্যাপা তৈরি করা হয়। পুঁটি মাছ দিয়ে বিশেষ গাঁজন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় মুখরোচক চ্যাপা।
সেখান থেকে চ্যাপা কারিগররা শুঁটকি কিনে নেন। এরপর মাটির বড় বড় মটকায় চেপে চেপে জাগ দিয়ে কয়েক সপ্তাহ রেখে দেন। চ্যাপা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পুঁটি মাছের পেট থেকে সংগ্রহ করা তেল। মটকার মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয় যাতে ভেতরে কোনো অবস্থাতেই বাতাস ঢুকতে না পারে। এভাবে গাঁজন পদ্ধতিতে তৈরি হয় স্যাঁতস্যতে চ্যাপা। এসব চ্যাপা বিভিন্ন হাট-বাজারে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি স্থানীয় আড়তদাররা সেগুলি কিনে গুমাদজাত করেন। প্রক্রিয়াজাত করে এসব চ্যাপা রফতানি হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে চ্যাপা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২শ টাকা কেজি। কেবল কিশোরগঞ্জ বড়বাজারেই বছরে কেনাবেচা হয় ১২শ মেট্রিকটন বিভিন্ন মাছের শুঁটকি। যার বিক্রয় মূল্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে পুঁটি মাছের শুঁটকিই বেশি বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। এ ছাড়াও জেলার করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, ভৈরবসহ অন্যান্য বাজারেও প্রচুর পরিমাণ চ্যাপা শুঁটকি কেনাবেচা হয়। কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে চ্যাপা একটি উপাদেয় খাবার। প্রতি দিনের খাবার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এটি। আজকাল বিভিন্ন হোটেলেও পাওয়া যাচ্ছে চ্যাপার ভর্তা ও তরকারি। তবে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কিশোরগঞ্জের চ্যাপার খ্যাতি এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। অনেকে বিদেশ থেকে আসলে ফিরে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যান চ্যাপা। আবার অনেকে লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকায় চ্যাপার ব্যবসা করে বাড়তি টাকা আয় করছেন। কিশোরগঞ্জ শহরের শোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা ইমরুল হক জানান, তার বোন শাপলা হক যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। মাঝে মাঝে দেশে আসেন। আসার আগে তার কাছে বায়না করে চ্যাপা কিনে রাখার জন্য। ফিরে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যান চ্যাপা। এ ছাড়া তার দুই শ্যালক নিউইয়র্ক প্রবাসী দিলোয়ার হোসেন ও লিটন ইসলাম দেশে আসলে ফেরার সময় বেশি করে চ্যাপা নিয়ে যান। ইকবাল হোসেন নামে কিশোরগঞ্জের এক ব্যক্তি নিউইয়র্কে নিয়মিত চ্যাপার ব্যবসা করেন। তিন মাস পর পর তিনি ৬৪ কেজি করে চ্যাপা নিয়ে যান। বিশেষ প্যাকেটে ভরে বিমানে করে এসব চ্যাপা যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হয়। সেখানকার বিভিন্ন বাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকায় উচ্চমূল্যে এসব চ্যাপা বিক্রি করা হয়। এক সময় কিশোরগঞ্জে চ্যাপা ‘গরীবের খাবার’ হিসেবে পরিচিত ছিল। দামও ছিল কম। কিন্তু সেদিন এখন আর নেই। চ্যাপার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন এটি উচ্চবিত্তদের উপাদেয় খাবার হয়ে উঠেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App