×

মুক্তচিন্তা

চামড়া শিল্প বিকাশে সরকারের পদক্ষেপ

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:১৯ পিএম

একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আয়ের খাতগুলোর যেমন যথাযথ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হয়, তেমনি সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

আমাদের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় সবচেয়ে বড় খাতের একটি চামড়া শিল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিভাগে আরো দুটি চামড়া শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, চামড়া শিল্প খাতের সামগ্রিক বিকাশের জন্য ইতিমধ্যে সাভারে পরিবেশসম্মত চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ লেদার, ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো ২০১৭’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশে চামড়া শিল্প বিকাশে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চামড়া শিল্পের অবদান কম নয়। বর্তমানে রপ্তানি খাতে চামড়ার অবদান ৯ শতাংশেরও বেশি। চামড়া শিল্প বৃদ্ধিতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা প্রধানমন্ত্রী এই সময় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চামড়া খাতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আগামী ৫ বছর অব্যাহত রাখার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য বেসরকারি খাত সহযোগে একটি টেস্টিং ও ক্যালিব্রেশন সেন্টার স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আয়কর রেয়াত ও ওয়েট ব্লু লেদার ছাড়া চামড়া খাতে এফওবি রপ্তানি মূল্যের ওপর ১০০ ভাগ এক্সপোর্ট পারফরম্যান্স লাইসেন্স সুবিধা দেয়া হচ্ছে যাতে রপ্তানি আরও সহজ করা যায়। শিল্প স্থানান্তরের প্রণোদনা হিসেবে সাভার ট্যানারি শিল্পাঞ্চল থেকে ফিনিশড চামড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। চামড়া সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সারা বছরে সংগৃহীত চামড়ার ৬০ শতাংশই আসে কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে। কিন্তু চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করায় বিপুল পরিমাণ চামড়া ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কোরবানির পশুর শরীর থেকে সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া ছাড়ানো ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতি বছর মোট চামড়ার ১৮ থেকে ২০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতি বছর দেশ হারাচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। এছাড়া পরিবহনে দীর্ঘসূত্রতা, অতিমুনাফা প্রবণতার কারণে পরিমাণ মতো লবণ প্রয়োগে কার্পণ্য করা এবং সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণে না রাখার কারণে এসব চামড়ার অনেকাংশই প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে অকেজো হয়ে পড়ে। চামড়া সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। আশা করা যায়, রাজশাহী এবং চট্টগ্রামে নতুন দুটি চামড়া শিল্পনগরী গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে চামড়া শিল্পের সম্ভাবনাগুলো বাস্তবায়ন হবে।

গার্মেন্টসের মতো আমাদের দেশে এখন চামড়া খাতের ব্যবসা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপুল সম্ভাবনাও আছে এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার। ইউরোপের সবচেয়ে বড় জুতা বিক্রেতা ডাচম্যানের বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত জুতা আমদানি শুরু করেছে। এছাড়াও চীনের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের ফলে চামড়া শিল্পে নতুন আশার হাতছানি দেখতে পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাদের বিশ্বাস চীন এ খাত থেকে নজর সরিয়ে নেয়ায় বাংলাদেশই হতে চলেছে চামড়া শিল্পের বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরবর্তী গন্তব্য। আমরা মনে করি, একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আয়ের খাতগুলোর যেমন যথাযথ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হয়, তেমনি সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App