×

ফিচার

নামে রাজি রিমেকে নারাজি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৫৫ এএম

পুরনো ছবি রিমেকের ঘোষণা আসছে হরহামেশাই। বাস্তবে ঢাকাই সিনেমা রিমেকহীন গত তিন বছর। লিখছেন স্বাক্ষর শওকত
সম্প্রতি ‘নায়ক’ নামে একটি ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন সফল পরিচালক জুটি ইস্পাহানি আরিফ জাহান। এই পরিচালক যুগল ২০০২ সালে একই নামে একটি ছবি নির্মাণ করেছিলেন। তবে কি নিজেদের আগের ছবিটিই রিমেক করতে যাচ্ছেন? এই প্রশ্নের জবাবে ইস্পাহানি আরিফ জানিয়েছেন, পুরনো ‘নায়ক’র সঙ্গে নতুন ‘নায়ক’র নামের মিল ছাড়া আর কোনো সাদৃশ্য নেই। অর্থাৎ রিমেকের কোনো ব্যাপার-স্যাপার নেই। ইদানীং পুরনো নামে নতুন ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। উপযুক্ত নাম খুঁজে না পেয়ে অনেকেই পুরনো সফল ছবির নামের পেছনে ধাওয়া করছেন। গত দুই বছরে নির্মিত ‘বাদশা’ ‘সম্রাট’, ‘অঙ্গার’, ‘নবাব’ ছবিগুলো পুরনো নামটুকুর ফায়দা নিয়েছে মাত্র। গল্প থেকে শুরু করে শিল্পী পর্যন্ত কোথাও কোনো মিল খুঁঁজে পাওয়া যায়নি। কালজয়ী ‘চাঁদনী’ ছবিটিও রিমেক করতে চেয়েছিলেন একজন নির্মাতা। তার কপালে নামটি জোটেনি। পুরনো নামের প্রতিই শুধু নয়, পুরনো ছবির প্রতিও প্রীতি বেড়ে গেছে নির্মাতাদের। তরতাজা গল্পে সুপারহিট ছবির দেখা না পেয়ে অনেকেই ঝুঁকছেন পুরনো গল্পের প্রতি। দর্শকনন্দিত ছবির রিমেক করার উদ্যোগ নিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো প্রচেষ্টাই শুটিং ফ্লোর অবধি গড়াতে পারেনি। রয়ে গেছে ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া দু-দুটো রিমেকের ঘোষণা দিয়েও অগ্রগতি জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমে তারা কাজী হায়াতের ব্যবসাসফল ছবি ‘আম্মাজান’র রিমেক নির্মাণের ঘোষণা দেয়। মান্নার ক্যারিয়ারের সেরা ছবিটিকে এ প্রজন্মের দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিছুদিন আগে নায়করাজের মৃত্যুর পর নায়ক-পরিচালকের অন্যতম সেরা ছবি ‘অনন্ত প্রেম’ রিমেকেরও ঘোষণা দিয়ে বসে জাজ। পরিচালক হিসেবে তারা পছন্দ করে বাপ্পারাজকেই। কিন্তু এ ছবিটিও হবে কিনা কেউ বলতে পারছেন না। জাজ রিমেকের পথে আগেও হেঁটেছে। সিক্যুয়েল ছবি নির্মাণের মতো রিমেকেও তারা সফলতার পরিচয় দিয়েছে। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘অনেক সাধের ময়না’ ছিল কাজী জহিরের কালজয়ী ‘ময়নামতি’র রিমেক। ছবিটি ২০১৪ সালের একটি পরিচ্ছন্ন ছবি হিসেবে সফল হয়েছে। হয়তো এ ছবির সাফল্যই প্রতিষ্ঠানটিকে বারবার রিমেকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে নতুন কোনো রিমেকে এখনো হাত দিতে পারেনি জাজ। ‘অনন্ত প্রেম’ নায়করাজের প্রযোজনা সংস্থার বাইরে নির্মাণের উদ্যোগ আদৌ সফল হবে কিনা সেই প্রশ্ন রয়ে যায়। কেননা নায়করাজের ঘর থেকেই অতীতে ছবি রিমেক হয়েছে। আশির দশকের সুপারহিট ছবি ‘বদনাম’র রিমেক হয়েছিল ‘প্রেমের নাম বেদনা’। বঙ্কিমচন্দ্রের গল্পের ছবি ‘সৎ ভাই’-এর রিমেক হয়েছিল ‘সন্তান যখন শত্রæ’। মৃত্যুর কিছুদিন আগে রাজ্জাকপুত্র বাপ্পারাজ ‘বেইমান’ রিমেক করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সংবাদ মাধ্যমে ঘোষণাটি এসেছিল ফলাও করে। আগামীতে বাপ্পারাজ তার বাবার কোনো হিট ছবি রিমেক করলেও করতে পারেন। এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। নায়করাজের মৃত্যুর পর জয়া আহসান এক স্মৃতিচারণায় জানান, কিংবদন্তি অভিনেতা-নির্মাতা ‘রংবাজ’ রিমেক করার কথা ভাবছিলেন। সেই রিমেকে অভিনয় করার কথা ছিল জয়া আহসানের। কথাবার্তা অনেকদূর এগোলেও পরে আর ‘রংবাজ’ রিমেক হয়নি। যদিও ‘রংবাজ’ বিশ বছর আগেই রিমেক হয়ে গেছে। ওমর সানী-মৌসুমী পা গলিয়েছিলেন রাজ্জাক-কবরীর পায়ে। রিমেক ‘রংবাজ’ সফলতার মুখ দেখেনি। শেষ পর্যন্ত ‘রংবাজ’ নামে একটি দক্ষিণ ভারতীয় ছবির নকল (যাকে রিমেক বলে অনেকে ভুল করেন) নির্মিত হয় চলতি বছর। আব্দুল মান্নান পরিচালিত ছবিটিতে নাম ভ‚মিকায় ছিলেন শাকিব খান। এ নিয়ে ‘রংবাজ’ নামে দেশে তিনটি ছবি তৈরি হলো। এরপর নতুন কোনো ‘রংবাজ’ নির্মাণের উদ্যোগ নিতে গেলে অনেকেই দুচারবার ভাববেন। আসলে নির্মাতাদের মধ্যে নায়করাজ ও সালমান শাহ অভিনীত ছবিগুলোর রিমেকের চাহিদা রয়েছে। আতিক রহমান নামে একজন নির্মাতা ‘অন্তরে অন্তরে’ রিমেক করবেন বলে হইচই বাধিয়ে দিয়েছিলেন। নিরব ও অমৃতার জুটি হয়ে কাজ করার কথা ছিল। এই প্রচারণা নিরব-অমৃতার প্রথম ছবি ‘গেম’র জন্য ইতিবাচক হয়েছিল। কিন্তু অমর নায়কের নামে ছবি নির্মাণের ফাঁকা আওয়াজে নিন্দাও জুটেছে পরিচালকের কপালে। কিছুদিন আগে পরিচালক মালেক আফসারীও ‘এই ঘর এই সংসার’ নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আফসারীর এই ইচ্ছাপূরণ হবে কিনা তা সময়ই কেবল বলতে পারে। রিমেক ছবি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কিছু ছবি চলে। কিছু ছবি চলে না। তাই রিমেক ছবি বানানোর সাহস অনেকেই করে উঠতে পারেন না। কেউ কেউ স্রেফ আওয়াজ দিতেই রিমেকের নাম মুখে নেন। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছেÑ গত তিন বছরে একটিও রিমেক ছবি হয়নি! গল্প সংকটের কারণে প্রায়ই নির্মাতারা রিমেকের ভাবনা-চিন্তা করেন। পরে সাতপাঁচ ভেবে পিছিয়ে আসেন। এজন্য অধিকাংশ রিমেকের নির্মাণ ঘোষণায়ই আটকে থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App