×

ফিচার

দর্শকদের প্রতিক্রিয়া থেকে শিক্ষা নিয়েছি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০১৭, ০২:৪৩ পিএম

রোববারের দুপুর। সুনসান এফডিসি। ঘুরতে ঘুরতে কড়ইতলায় গিয়ে পাওয়া গেল পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিককে। তিনি তখন ব্যস্ত ‘জান্নাত’ ছবির শেষদিনের দৃশ্যধারণে। এখানেই কথা হলো তার সঙ্গে। পাঁচটি ছবি মুক্তির পর ক্যারিয়ারের নতুন দুই ছবি নিয়ে শিগগিরই ফিরছেন তিনি। ভোরের কাগজকে জানালেন বিস্তারিত। মানিকের মুখোমুখি হয়েছিলেন শ্রাবণী হালদার
মেলা : আপনার ছবি দিয়েই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন শাবনূর। তিনি অভিনয়ে ফিরছেন আপনার ‘এত প্রেম এত মায়া’ নিয়ে। ছবির কিছু অংশের শুটিংও করেছেন আপনি। কিন্তু শাবনূরের অংশের শুটিং করবেন কবে? মানিক : বেশ কয়েক বছর বিরতির পর আমার ছবি দিয়েই শাবনূরের নতুন করে ফেরাটা নিঃসন্দেহে আমার জন্য অনেক আনন্দের। তিনি তো মাঝে অসুস্থ ছিলেন, চিকুনগুনিয়া হয়েছিল। যার কারণে ছবির কাজ পিছিয়ে গেছে। আমার আরেক ছবি ‘জান্নাত’র সমস্ত কাজ শেষ হবে দশ-বারো দিনের মধ্যেই। আশা করছি নভেম্বরের শেষের দিকে শাবনূরকে নিয়ে শুটিং করতে পারব। মেলা : যতদূর জানি, এই ছবিতে শাবনূরকে একজন সঙ্গীত শিক্ষকের ভ‚মিকায় দেখা যাবে। ছবিতে তো শাবনূর প্লেব্যাকও করেছেন। তাকে দিয়ে গান গাওয়ানোর পরিকল্পনাটা কীভাবে এল? মানিক : ছবিতে শাবনূর একজন সঙ্গীত শিক্ষক, তাই চিন্তা করলাম, একটা গান যদি শাবনূর নিজেই গায় তাহলে বেশ ভালোই হয়। প্ল্যানটা শাবনূরকে শেয়ার করতেই তিনিও রাজি হয়ে গেলেন। আমার এই ছবির মধ্য দিয়েই কিন্তু শাবনূর প্রথমবার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করলেন। এটাও কিন্তু দর্শকদের জন্য বেশ বড় একটা চমক! মেলা : শাবনূর ও মাহিকে নিয়ে আরেকটি ছবি করবেন বলে শুনেছি। সেটি কবে থেকে শুরু হবে? মানিক : ছবিটি আমার করার ইচ্ছে। শাবনূর যদি আগের মতো ছবিতে কন্টিনিউ করে তাহলে আমি ছবিটি করতে পারব। ছবিটির গল্পও রেডি। মেলা : এ ব্যাপারে কি আপনি তাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন? মানিক : দুজনের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। মাহি এমনো বলেছে যে, শাবনূরের সঙ্গে পর্দা শেয়ার করতে গিয়ে যদি খুব ছোট ক্যারেকটারও পাই তাহলেও আমি কাজ করব। মেলা : আর শাবনূরের মতামত কি? মানিক : তিনি তো এখনো ভালো গল্পের ছবিতে কাজ করতে ব্যাপক আগ্রহ দেখান। কিন্তু তিনি নিজেকে ফিট করে যে নিয়মিত হতে কবে আসবেন এটাও একটা ফ্যাক্ট। তিনি কিন্তু আমার ছবিতে কাজের বেলায় ‘না’ করেন না। যদি তিনি আবার চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন, তবে আমার ছবিতে তিনি নিশ্চয় কাজ করবেন। এখন আসলে শাবনূর তার ছেলেকে নিয়ে একটু বেশি ব্যস্ত। আগে যেমন তার মধ্যে কাজ করতেই হবে এমন একটা তাড়না ছিল, এখন সেই আগ্রহটা কিছুটা কম। তিনি যখন কাজ করতে ইচ্ছে পোষণ করবেন এই সিনেমাটা তখনই হবে। মেলা : পোড়ামনের পর আপনি জান্নাতে সাইমন-মাহিকে ফের এক করেছেন। জান্নাতের কাজ নিয়ে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট? মানিক : পোড়ামন দেখার পর থেকেই আমি সাইমন-মাহির রসায়নটা পছন্দ করি। আমার মনে হয়েছে এই জুটিটা খুব ভালো হবে। বাংলা সিনেমায় এখনো বলা চলে জুটি সংকট চলছে। অনেক সময় পারিবারিক ছবিগুলো বা রোমান্টিক ছবিগুলোতে জুটি একটা প্রয়োজনীয় বিষয়। আমার ধারণা সাইমন-মাহি, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। মেলা : আপনার পরিচালিত সব ছবিতেই বিশেষ কিছু মেসেজ থাকে। জান্নাত সিনেমার গল্পটা কি রকম? মানিক : গল্পের বিষয়ে আমি এটুকু বলতে পারি, এটা একটা সমসাময়িক বিষয়কে নিয়ে নির্মিত ছবি হতে যাচ্ছে। এটি এ সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক। খুব বোল্ড গল্পের একটা ছবি। খুব স্ট্রংলি ছবিটি সমাজের কথা বলবে, দেশের কথা বলবে। সঙ্গে প্রেম তো আছেই। এই ছবিতে নতুন এক মাহিকে আবিষ্কার করবেন দর্শক। মেলা : জান্নাতের পুরো কাজ শেষ হচ্ছে কবে? মানিক : আজকে (রোববার) ক্যামেরা ক্লোজ হয়ে যাবে। মাহির অংশের সমস্ত কাজ শেষ। এমনকি ডাবিংও। অনেকে কাজই ডাবিংসহ শেষ। আমি আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে অন্যান্য কাজ শেষ করে ফেলতে পারব। মেলা : জান্নাত কি এ বছরই মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে? মানিক : এ ব্যাপারে আসলে এখনই কিছু বলতে পারছি না। নির্ভর করছে সেন্সর বোর্ডের ওপর। টার্গেট হচ্ছে খুব ভালো সময়ে খুব ভালো করে ছবিটা রিলিজ দেয়া। মেলা : ‘চুপি চুপি প্রেম’ ছিল আপনার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। এই ছবিতেই ঢালিউডে অভিষেক হয়েছিল প্রিয়ন্তির। তাকে নিয়ে আর কাজ করেননি কেন? মানিক : প্রিয়ন্তিকে আমি আমার ‘এত প্রেম এত মায়া’তে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার পারিবারিক কিছু সমস্যা ও লেখাপড়ার কারণে সে ছবিটি করতে পারেনি। মেলা : আমরা জানি, আপনি সবসময় বেছে বেছে কাজ করেন। তাই বলে মুক্তি দিতে এত সময়ের গ্যাপ? মানিক : এখন আর গ্যাপ হবে না। এখন ছবি হবে একটার পর একটা। তবে গ্যাপেরও একটা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। আমি মাঝখানে যে দুটি ছবি বানালাম, সেটাকে একটা শিক্ষা হিসেবে নিয়েছি। দুটো ছবিতে দর্শকদের যে প্রতিক্রিয়া সেখান থেকে আমি একটা শিক্ষা নিয়েছি। সেটার ওপর ভিত্তি করেই জান্নাত বানানো। মেলা : ‘জান্নাত’ নাকি ‘এত প্রেম এত মায়া’ কোনটা আগে আসবে? মানিক : জান্নাত আগে আসবে। কারণ জান্নাতের সব কাজ প্রায় গুছানো। আর কিছুদিন গ্যাপের পর আমি এই ছবিটা নিয়েই দর্শকদের মাঝে ফিরতে চাই। মেলা : সা¤প্রতিক সময়ে ইন্ডাস্ট্র্রির অবস্থা এবং সিনেমা বাজার প্রসঙ্গে কিছু বলুন... মানিক : সিনেমার অবস্থা সবসময় খারাপ, এটা শুনি। কিন্তু আমি আশাবাদী মানুষ। সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের যে বিজনেস সিস্টেম সেই সিস্টেম থেকে প্রোডিউসাররা টাকা পাচ্ছে না। টাকা চলে যাচ্ছে বিভিন্ন হাতে। আমি মনে করি এই প্রবলেমগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে সিনেমার বাজার ভালো হবে। আর ভালো সিনেমার বাজার তো সবসময়ই ভালো। গত কয়েক মাস ধরে লক্ষ করছি যে, তরুণ প্রজন্ম ঢাকা অ্যাটাক দেখছে, আমাদের রেগুলার দর্শক যারা তারা দুলাভাই জিন্দাবাদ দেখছে, ডুবও একটা শ্রেণির কাছে আকর্ষণীয় হয়েছে। এগুলো কিন্তু কোনোটাই সেই অর্থে বড় তারকার সমন্বয়ে না। এতদিন যে শাকিব খান কেন্দ্রিক ছবিগুলোর প্রতি শুধু দর্শকদের ঝোঁক ছিল, সেটা কাটিয়ে উঠছে। এটা একটা ভালো দিক।
আমাদের যে তরুণ প্রজন্ম আছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে গেলে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে বাংলা সিনেমা নিয়ে তারা এখন বেশ সচেতন। আমি নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ অ্যাকটিভ। তরুণরা ভালো ছবি নিয়েও আলোচনা করছে, খারাপ ছবি নিয়েও আলোচনা করছে। তারা তাদের মতামত দিচ্ছে। তার মানে সিনেমা নিয়ে তারা ভাবছে।
আমরা যদি এই জেনারেশনটাকে হলে নিয়ে আসতে পারি আমাদের সিনেমা দিয়ে, আমাদের মার্কেটিং সিস্টেম দিয়ে তাহলে আমাদের সিনেমার ভবিষ্যৎ ভালো। মেলা : সোশ্যাল মিডিয়ার কথা যখন বললেনই তখন জানতে চাচ্ছি একজন সুদর্শন ও তরুণ পরিচালক হিসেবে আপনাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রেম-বিয়ের প্রস্তাব ও বিড়ম্বনা এসব কি সামলাতে হয়? মানিক : আমাকে কেউ তো অফার দেয় না! (হাসি)। আমার মনে হয়, মূলধারার পরিচালকদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমিই বেশি অ্যাকটিভ। তো, এটা কিন্তু ভালো। এখানে চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন গ্রæপ আছে। বড় বড় গ্রæপ আছে, এটা আমাদের জন্য ভালো। আগে আমরা প্রেক্ষাগৃহে তাদের উপস্থিতি দিয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়া বুঝতাম। বুঝতাম ছবিটা হিট না ফ্লপ। তখন ছবি ফ্লপ হয়েছে মানে সব খারাপ মনে করতাম। কিন্তু এখন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রেজাল্টতা পাওয়া যায়। আমার ইনবক্সেও অনেকে বলছেন, এই ছবিটা এমন করলেন কেন? কেন আপনার প্রথম পরিচালিত ‘দুই নয়নের আলো’র মতো ছবি পাচ্ছি না? আমি আসলেই চিন্তা করছি, দুই নয়নের আলোর মতো ছবিটা তো হচ্ছে না। তবে এবার বলতে পারি এই ছবিকেও ছাড়িয়ে যাবে ‘জান্নাত’ ছবিটি। মেলা : শুনেছিলাম আপনি এ বছরই বিয়ে করবেন, কিন্তু সানাইটা আসলে বাজবে কবে বলুন তো? মানিক : আশা আছে। হয়তো দু-এক মাসের মধ্যেই খবর দিতে পারব! মেলা : তার মানে সত্যি সত্যি এ বছরই! তা, আপনার ক্ষেত্রে কি ঘটছে, প্রেম করে বিয়ে নাকি বিয়ে করে প্রেম? মানিক : এ বছরই সেরে ফেলার ইচ্ছে ছিল। মাঝে নতুন দুই ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এখনো বেলতলায় যেতে পারিনি! (উচ্চস্বরে হাসি)। আয়োজন সম্পূর্ণ হতে হতে নতুন বছরও শুরু হয়ে যেতে পারে। আর প্রেমের বিয়ে কিনা এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলব না। কিছুটা রহস্য থাকা ভালো!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App