×

মুক্তচিন্তা

কেন্দ্রীয় কারাগারে অব্যবস্থাপনা থাকবে আর কতদিন?

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:২৩ পিএম

নবনির্মিত কারাগারে নিরাপত্তা, চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এক বছরেও নিশ্চিত করা যায়নি। এদিকে দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার অভিযোগও অনেক। আমরা মনে করি, সুশৃঙ্খল ও আইনানুগ পরিচালনা নিশ্চিত করা না গেলে সুন্দর অবকাঠামো কোনো ভালো ফল দেবে না। আর কারা বিধি-বিধান আধুনিক ও যুগোপযোগী করাও খুবই জরুরি।

গত বছর নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কারাগার ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকার সোয়া ২০০ বছরের পুরনো সংস্কার অযোগ্য জরাজীর্ণ ভবন থেকে নবনির্মিত বিশ্বমানের আধুনিক অবকাঠামোতে বন্দি স্থানান্তর বিষয়টি খুবই জরুরি ছিল। শুধু অবকাঠামো পরিবর্তনই নয়, নতুন কারা অবকাঠামো প্রকৃত অর্থেই বন্দিদের জন্য সংশোধনাগার হিসেবে ভ‚মিকা রাখবে- কর্তৃপক্ষের এমন ভাষ্যে আমরা অনেকটাই আশান্বিত হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু চালু হওয়ার প্রায় এক বছরের মাথায় নতুন কারাগারে সমস্যা-সংকট অনিয়ম-অব্যবস্থার যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই হতাশার।

গতকালের ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেরানীগঞ্জের কারাগারের শুধু গাঠনিক পরিবর্তন ছাড়া তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। উল্টো দর্শনার্থী থেকে শুরু করে হাজতিদের অভিযোগ পাহাড়সম। রয়েছে নিরাপত্তা, জনবল ও চিকিৎসক সংকট। দীর্ঘ দিনেও কারাগারের ভেতরে বন্দিদের তিনটি ভবনের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় অন্য রুমগুলোতে কোণঠাসা হয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক সংলগ্ন যে নিরাপত্তা দেয়াল হওয়ার কথা সেটি এখনো বিচ্ছিন্ন কাঁটাতারে সীমাবদ্ধ। দর্শনার্থীদের জন্য কোনো ছাউনি নির্মাণ না করায় প্রতিদিন বন্দিদের দেখতে আসা হাজার হাজার স্বজন খোলা আকাশের নিচেই অপেক্ষা করেন। চিকিৎসা ব্যবস্থার নাজুক দশা। গুরুতর অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধ্যমে হাসপাতালে যেতে হয়। কিন্তু ২টি এম্বুলেন্স ও মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফলে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আবার অনেক সময় বন্দিদের পালানোর ঘটনাও ঘটছে। কারাগারটিতে ১১ একর জমির ওপর বড় কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার নির্মাণ করার কথা রয়েছে। কিন্তু টেন্ডারসহ বিভিন্ন জটিলতায় এখনো শুরু হয়নি মহিলা কারাগার নির্মাণ কাজ। এমনকি কারাগারে এখনো যায়নি গ্যাসের লাইন, ফলে লাকড়ি দিয়ে খাবার রান্না করা হচ্ছে। এতেও চরম বিপাকে রয়েছে বন্দিদের খাবার ব্যবস্থা। কেন্টিন নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। খাবার দেয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। দুপুরের খাবার বিকেল ৫টায় দেয়া হচ্ছে। খাবারও নিম্নমানের বলে অভিযোগ রয়েছে। কারাগারে খাবার ক্যান্টিনে প্রকাশ্যে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। কারাগারটিতে ৮ হাজার ৩৬৭ জন বন্দির বিপরীতে কারারক্ষী রয়েছেন ৯৩৩ জন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আরো জনবলের দরকার বলে জানা গেছে। এছাড়াও একাধিক মামলার আসামি ও দুর্ধর্ষ বন্দিদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজিরা নিশ্চিতের প্রকল্পও সরঞ্জামের অভাবে এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে, অভিযোগ রয়েছে, কারারক্ষীরা জড়িয়ে পড়েছেন ঘুষ বাণিজ্যে। বন্দিকে দেখা করিয়ে দেয়ার কথা বলে প্রকাশ্যেই ২০০-৩০০ টাকা ঘুষ নেয়া হচ্ছে। কারাগার পরিবর্তন হলেও কারারক্ষীদের চরিত্র পরিবর্তন হয়নি। এছাড়া এরকম বহু অভিযোগ ইতোমধ্যে জমা হয়ে গেছে নতুন কারাগার নিয়ে।

বলা হলো নতুন কারাগার বিশ্বমানের অবকাঠামো হচ্ছে, এখন দেখা যাচ্ছে তার ফটক দিয়ে বড় প্রিজন ভ্যান ঢোকে না। বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা আধুনিক তো নয়ই বরং আগের চেয়েও নাজুক। নবনির্মিত কারাগারে নিরাপত্তা, চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো একবছরেও নিশ্চিত করা যায়নি। এদিকে দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার অভিযোগও অনেক। আমরা মনে করি, সুশৃঙ্খল ও আইনানুগ পরিচালনা নিশ্চিত করা না গেলে সুন্দর অবকাঠামো কোনো ভালো ফল দেবে না। আর কারা বিধি-বিধান আধুনিক ও যুগোপযোগী করাও খুবই জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App