×

মুক্তচিন্তা

মার্কিন স্পেশাল নির্বাচনে ডেমোক্রেটরা ভালো করেছে

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:০০ পিএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্পেশাল নির্বাচন হয়ে গেল। ছোটখাটো নির্বাচন, তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন। এসব নির্বাচনে টেস্ট হয় ফেডারেল সরকার কেমন চলছে। এখন ফেডারেল মানে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। তাদের জন্য এই নির্বাচন তেমন সুসংবাদ বহন করেনি।

৭ নভেম্বর, ২০১৭ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্পেশাল নির্বাচন হয়ে গেল। ছোটখাটো নির্বাচন, তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন। এসব নির্বাচনে টেস্ট হয় ফেডারেল সরকার কেমন চলছে। এখন ফেডারেল মানে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। তাদের জন্য এই নির্বাচন তেমন সুসংবাদ বহন করেনি। ডেমোক্রেটরা এই নির্বাচনে ভালো করেছে। এতে ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক ভারসাম্য তেমন কোনো হেরফের হবে না। তবে ২০১৮-তে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনটি হবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ডেমোক্রেটরা চাইবে ওই নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিনেট দখল নিতে। ২০১৭-এর নির্বাচন যদি কোনো ‘দিকনির্দেশনা’ হয়, তবে ২০১৮-তে সেই সম্ভবনা আছে। নভেম্বর ২০১৮-তে ডেমোক্রেটদের কপাল খুলতে পারে। উল্লেখ্য, এখন হোয়াইট হাউস, সিনেট ও কংগ্রেস রিপাবলিকানদের দখলে। সেই দিক থেকে ট্রাম্প সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। কিন্তু ২০১৮-তে হাউস বা সিনেট, দুটোর একটিও যদি রিপাবলিকানদের হাতছাড়া হয়, তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খবর আছে?

২০১৭-র নির্বাচনে ডেমোক্রেটরা ট্রাম্পকে একটি ‘শক্ত মেসেজ’ দিয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট এটাকে ‘নির্বাচনী রাতের বেত্রাঘাত’ বলে মন্তব্য করেছে। পত্রিকাটি বলেছে, এতে খুশি হওয়ার খুব একটা কারণ নেই, রিপাবলিকানরা বসে থাকবে না, তারাও তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইবে। রাজনৈতিক মহল বলছেন, ট্রাম্পের বিতর্কিত নীতিমালার জন্যই এই পরাজয়। বলা হচ্ছে, রিপাবলিকানরাও অনেকে ট্রাম্পের সঙ্গে নেই? হাউস স্পিকার পল রায়ান অবশ্য জোর দিয়েই বলেছেন, আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে আছি। ২০১২-তে বারাক ওবামা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ডেমোক্রেটরা শুধু হেরেই যাচ্ছিল। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬-তে উপর্যুপরি হারার পর তাদের একটি বড় ধরনের বিজয়ের প্রয়োজন ছিল। বসন্তে জর্জিয়াতে কংগ্রেসের একটি স্পেশাল নির্বাচনে তারা মরিয়া হয়ে চেষ্টাও করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। গত মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর ভাগ্যদেবী ডেমোক্রেটদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন এবং তারা প্রায় সর্বত্র জিতেছেন।

এবার ভার্জিনিয়ার গভর্নর আসনের নির্বাচনটি ছিল উভয় দলের জন্য প্রেস্টিজিয়াস। কিন্তু ডেমোক্রেট রালফ নর্থাম ৯% ভোটে রিপাবলিকান প্রতিদ্ব›দ্বী গিলেস্পিকে হারিয়েছেন। একজন রিপাবলিকান স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ স্কট টেইলার বলেছেন, এই নির্বাচন ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য রেফারেন্ডাম। ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকানরা ওপর থেকে নিচে প্রায় সব নির্বাচনে হেরেছেন। এজন্য সবাই ট্রাম্পকে দায়ী করছেন। ট্রাম্প বিদেশ সফরে আছেন। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এক টুইট তিনি বলেছেন, ঘাবড়ানোর কিছু নেই, অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে, সামনে আমরা আবার জিতব। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ছিলেন ডেমোক্রেট, তিনি আবার বিজয়ী হয়েছেন। নিউজার্সি রিপাবলিকান মেয়র ক্রিস ক্রিস্টি দুটার্ম গভর্নর ছিলেন, তার লেফটেন্যান্ট গভর্নর প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ডেমোক্রেট প্রার্থী ফিল মারফির কাছে প্রায় ১৩% ভোটে হেরে যান। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি এমনিতে ডেমোক্রেট স্টেট, এখানে তাদের বিজয়ে তেমন চমক নেই?

এবারকার স্পেশাল নির্বাচনে ডেমোক্রেটরা ওয়াশিংটন স্টেট সিনেট তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। জর্জিয়া স্টেট আইন পরিষদে ডেমোক্রেটরা তিনটি সিট পেয়েছে। নিউ হ্যাম্পশায়ারের সবচেয়ে বড় শহর ম্যানচেস্টারে রিপাবলিকান মেয়র হেরেছেন। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গের রিপাবলিকান মেয়র হেরেছেন। নর্থ ক্যারোলিনার ফায়টিভিল শহরের মেয়র হয়েছেন ডেমোক্রেট। মন্টানা থেকে সাউথ ক্যারোলিনায় অন্তত ৭টি শহরের মেয়র হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গরা এবং এর মধ্যে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী। দুজন ল্যাটিনো নারী এবং একজন ভিয়েতনামী মহিলা ভার্জিনিয়া হাউস অফ ডেলিগেটসে নির্বাচিত হয়েছেন। সিয়াটল এই প্রথম একজন লেসবিয়ানকে তাদের মেয়র নির্বাচন করেছে। মিনেসোটার সেন্ট পল-এ প্রথম কালো মেয়র জয়ী হয়েছেন। মেনিয়াপোলিসে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। ভার্জিনিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ। উত্তাহর রিপাবলিকান মেয়র জিতেছেন। বোস্টন মেয়র পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন।

এই নির্বাচনে বাংলাদেশ বা বিশ্বের কিছু আসবে যাবে না। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে। ডেমোক্রেটরা মনোবল ফিরে পাবে এবং আগামী বছর মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়ী হতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। এটা ঠিক অর্থনীতি ভালো হচ্ছে, চাকরির বাজার চাঙ্গা। মার্কিনিদের হাতে পয়সা আছে। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখন সর্বনিম্ন। কিন্তু কিছুদিন আগে এক জরিপে বলা হয়েছে যে, ট্রাম্পকে যারা ভোট দিয়েছে, তারা এখনো ট্রাম্পের পক্ষে। মিডিয়া ট্রাম্পকে স্বস্তি দিচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও প্রায়শ মিডিয়াকে ‘ফেইক মিডিয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। ২০১৬ মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে রাশিয়ান হস্তক্ষেপ তদন্তে ট্রাম্পের সাবেক নির্বাচনী প্রধান অভিযুক্ত হয়েছেন। স্পেশাল কাউন্সিলর রবার্ট মুলার তদন্তে হোয়াইট হাউস পরোক্ষ চাপের মধ্যে আছে। প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও শান্তিতে থাকতে পারেননি। তার পেছনে তার নিজের দল, বিরোধী দল এবং মিডিয়া সর্বক্ষণ লেগেই আছে।

স্মর্তব্য যে, এই স্পেশাল নির্বাচনের পর কেউ কারচুপি, ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেনি। মানি না, মানবো কেউ শোনেনি। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। পরাজিতরা পরাজয় মেনে নিয়েছেন। বিজয়ীরা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েনি। কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’-এর দাবি ওঠেনি। স্বচ্ছ, অবাধ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের আগে-পরে কোথাও মারামারি হয়নি, সংখ্যালঘুর বাড়িঘর পোড়েনি। নির্বাচনে সরকার হস্তক্ষেপ করেনি বরং নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখার জন্য যা দরকার তাই করেছে। এ দেশে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ বা ইচ্ছা সরকারের নেই? বাংলাদেশে থাকতে আমি হয়তো দুবার ভোট দিয়েছিলাম কিন্তু এ দেশে এসে ইতোমধ্যে অনেকবার ভোট দিয়েছি। কারণ ভোটের পরিবেশ আছে। আমার ভোট আমি যাকে খুশি তাকে দিতে পারি। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখিনি যে আমার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। সামনের বছর বাংলাদেশে নির্বাচন, মানুষ এখনই ভয়ে অস্থির। কি হবে? কবে আমাদের দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন একটি সাধারণ ঘটনা হবে?

নিউইয়র্ক, ৮ নভেম্বর, ২০১৭ শিতাংশু গুহ : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App