×

মুক্তচিন্তা

অপরাধে একাকার আসল ডিবি, ভুয়া ডিবি

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:১২ পিএম

এই অপরাধী চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যায়, এই অপরাধীদের যাদের মাঝে মাঝে গ্রেফতার করা হয় তাদের বেশিরভাগই কিছুদিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে আরো দ্বিগুণ উৎসাহে অপরাধকর্মে নিয়োজিত হয়ে পড়ে। আমরা মনে করি, এই ভুয়া ডিবিদের শাস্তি প্রদানে কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপরাধ দিন দিন বেড়ে চলছে। গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে গত মাসখানেক সময়ে ডিবি পোশাকে বা ডিবি পরিচয়ে সংঘটিত বেশকিছু অপরাধকাণ্ডের উল্লেখ করা হয়েছে। ভুয়া ডিবির পাশাপাশি সত্যিকারের ডিবি সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধকর্মও এতে রয়েছে।

গত বুধবার ভোরে রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা থেকে শিল্প পুলিশের এক এএসআইসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত এএসআই মকবুল নিজেকে ডিবি পুলিশের ওসি ও তার সহযোগীরা সদস্য বলে পরিচয় দিতেন। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফে এক ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে ফেরার সময় সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ৭ সদস্য। চলতি বছরের এপ্রিলে রাজধানীর কাফরুলে একটি ক্লাবে র‌্যাব পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে ফেরার সময় ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ১১ সদস্য। ডিবি পুলিশ সেজে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গত ২৪ অক্টোবর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ পাশের গেটের সামনের রাস্তা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) একটি দল। ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে পুলিশের গোয়েন্দা (পূর্ব) বিভাগ গ্রেপ্তার করে ১২ জন ভুয়া ডিবি সদস্যকে। গত ১৯ অক্টোবর জয়পুরহাটে পাঁচ ভুয়া ডিবিকে আটক করেন জনতা। ১৬ জুন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডিবি চক্রের ৮ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব। ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রামে ডিবির আট সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন এক দোকান কর্মচারী।

দেখা যাচ্ছে, ডিবি পুলিশের পরিচয়ে গ্রেপ্তারের নামে অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেই চলছে। একদল ভুয়া ডিবি সেজে এসব করছে, আবার ডিবি পুলিশের কিছু সদস্য নিজেরাও এসব অপরাধ করছেন, বা অপরাধে সহায়তা করছেন। এটা আরো বেশি উদ্বেগের। বিভিন্ন ঘটনায় তাই ডিবি পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের কাজ অপরাধী দমন। অথচ তারাই অপরাধ ঘটাচ্ছে, অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করছে আর নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী বানাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতিই মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করে। অপরাধী যেই হোক, তার শাস্তি নিশ্চিত করাই হলো অপরাধ দমনের প্রথম পদক্ষেপ। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার। সরকারের উচিত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া। যে করেই হোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া রোধ করতে হবে। পাশাপাশি ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে যেন কেউ অপরাধ সংঘটিত করতে না পারে, সেটাও কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই অপরাধী চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যায়, এই অপরাধীদের যাদের মাঝে মাঝে গ্রেফতার করা হয় তাদের বেশিরভাগই কিছুদিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে আরো দ্বিগুণ উৎসাহে অপরাধকর্মে নিয়োজিত হয়ে পড়ে। আমরা মনে করি, এই ভুয়া ডিবিদের শাস্তি প্রদানে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। ডিবি পুলিশের ভাবমূর্তি ও পেশাদারিত্বের স্বার্থে তাদের সদস্যদের অপরাধ প্রবণতা ও ভুয়া ডিবিদের দৌরাত্ম্য দুটোই কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App