×

মুক্তচিন্তা

খুন অগ্নিসংযোগের বিচার এক বছরেও হলো না!

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০১৭, ০৫:৪৯ পিএম

সাঁওতাল বসতিতে গুলি-অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনার অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার হওয়া উচিত। অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ডের সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচার শুরু করতে হবে। এ ব্যাপারে দীর্ঘসূত্রতা বিচার নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। সাঁওতালরা এ দেশেরই পিছিয়েপড়া বঞ্চিত একটা অংশ। তাদের অস্তিত্ব ও অধিকার রক্ষায় সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

গাইবান্ধায় আদিবাসী পল্লীতে পুলিশের গুলিতে ৩ জন সাঁওতাল খুন, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মম ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো বিচার বা সাঁওতালদের দাবি-দাওয়ার সুরাহা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের মামলা কিংবা সাঁওতালদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া খুবই হতাশাব্যঞ্জক।

গত বছর ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমি দখলকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ ঘটে। পুলিশের গুলিতে শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ নামে ৩ জন সাঁওতাল মারা যান। সাঁওতালদের দেড় হাজারের মতো বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে। উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতাল পরিবারগুলো তখন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির চিত্রই তখন উঠে আসে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে। হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি উচ্ছেদ হওয়া ও অবরুদ্ধ সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া এবং সাঁওতালদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি উঠেছিল সর্বমহলে। কিন্তু এখনো এসব দাবি পূরণ হয়নি। ঘটনার পর স্বপন মুর্মু নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। কিন্তু এরপর থেকেই সে লাপাত্তা। স্বপন মুর্মু কোথায় আছে তা তদন্ত সংস্থাও জানে না। তারপরেও ওই মামলাটিকে মূল এজাহার হিসেবে নেয়া হয়েছে। কিন্তু একই ঘটনার ব্যাপারে থমাস হেমব্রম নামের অপর এক ব্যক্তি মামলা করতে গেলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে তার মামলাটি নেয়নি। পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশে তার এজাহারটিকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে গ্রহণ করে। আদালত থমাসের ডায়েরিটি স্বপন মুর্মুর করা মামলার সঙ্গে ‘সেইম স্ট্যাটাস’ দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। তারপর এক বছর কেটে গেলেও মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, সাঁওতালরা প্রথম থেকে অভিযোগ করে আসছেন প্রশাসনের ছত্রছায়ায়ই তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় উচ্ছেদে বাধা দিতে গেলে গুলি করে তিনজন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। সাঁওতালদের দাবি, তাদের পূর্বপুরুষের ভিটে আগের জায়গা ফেরত দেয়া হোক। অথচ উচ্ছেদের পরপরই তড়িঘড়ি করে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এই সাঁওতালদের দাবি-দাওয়া সবসময়ই উপেক্ষিত থাকছে সরকারের কাছে, প্রশাসনের কাছে। একদিকে প্রশাসনের বৈরী আচরণ, অন্যদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সাঁওতালরা অনেকটা একঘরে অবস্থায় রয়েছেন। এটাও সত্যি যে, সাঁওতালরা তাদের ভ‚মির অধিকারের বিষয়ে যে দাবি তুলে আসছেন, সেই দাবি পূরণের বিষয়টি বেশ জটিল। তবে তা যত জটিলই হোক, যেহেতু তারা দেশের একটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সেহেতু তারা তাদের বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগটুকু করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব। বিশালসংখ্যক প্রান্তিক মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত এই বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্বসহ বিবেচনা করা উচিত। আলোচনার মাধ্যমে জমির অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টি ফয়সালার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারের দায়িত্বশীলদের। আমরা মনে করি, এ বিষয়টি সরকারের বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা উচিত। সাঁওতাল বসতিতে গুলি-অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনার অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার হওয়া উচিত। অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ডের সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচার শুরু করতে হবে। এ ব্যাপারে দীর্ঘসূত্রতা বিচার নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। সাঁওতালরা এ দেশেরই পিছিয়েপড়া বঞ্চিত একটা অংশ। তাদের অস্তিত্ব ও অধিকার রক্ষায় সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App