×

মুক্তচিন্তা

ভর্তি নৈরাজ্য ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০১৭, ০৭:১৩ পিএম

স্কুল কর্তৃপক্ষ যাতে ইচ্ছেমতো বাড়তি বেতন-ফি আদায় না করতে পারে তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে সরকার কঠোর হোক। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক। দেশের সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিধিবদ্ধভাবে পরিচালনা যে কোনোভাবেই নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

রাজধানীসহ দেশের নামি-দামি স্কুলগুলোতে নতুন বছরে ভর্তির সময়টাতে বাড়তি ফি আদায়ের নৈরাজ্য দেখা যায়। কোনো কোনো বেসরকারি স্কুল ভর্তির ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নানা ধরনের ফি আদায়েরও উদাহরণ রয়েছে। নতুন শিক্ষা বছর সামনে রেখে বেসরকারি স্কুল/স্কুল এন্ড কলেজে মাধ্যমিক-নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী ভর্তির খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। পাশাপাশি সব সরকারি হাইস্কুলে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়ে আলাদা আরেকটি ভর্তি নীতিমালার খসড়া করা হয়েছে। এই খসড়া নীতিমালায় যথারীতি কোন শ্রেণিতে কীভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে এবং কোন ক্ষেত্রে ভর্তি ফি কত হবে তা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে। ভর্তি পরীক্ষায় নৈরাজ্য বন্ধে নীতিমালাটি বাস্তবায়ন জরুরি।

আগামী ১২ নভেম্বর স্কুলের ভর্তি নীতিমালা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সভা ডেকেছে বলে গতকাল ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়। স্কুলের ভর্তি সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগামী বছর ভর্তির সময় শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেয়া যাবে ভর্তি ফি, যা একমাসের টিউশন ফির সমান। যে মাসে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে সেই মাসের বেতনসহ ভর্তি ফি, বার্ষিক সেশন চার্জ এবং বিবিধ উন্নয়ন ফি। ভর্তি ফি হিসেবে মফস্বল এলাকায় এমপিওভুক্ত স্কুল নিতে পারবে ৫শ, আংশিক এমপিওভুক্ত স্কুল ৬শ, শুধু পাঠদানের অনুমতি পাওয়া স্কুল নিতে পারবে ৭শ এবং ইংলিশ ভার্সনের স্কুল ভর্তি ফি হিসেবে নিতে পারবে ৮শ টাকা। পৌর শহর এবং উপজেলা সদর এলাকায় এমপিওভুক্ত স্কুল নিতে পারবে ১ হাজার, আংশিক এমপিওভুক্ত স্কুল ১ হাজার ৬শ, শুধু পাঠদানের অনুমতি পাওয়া স্কুল নিতে পারবে ১ হাজার ৮শ এবং ইংলিশ ভার্সনের স্কুল ভর্তি ফি হিসেবে নিতে পারবে ২ হাজার টাকা। এর আগেও আমরা দেখেছি প্রতি বছর ভর্তি ফি নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা জারি করেন। কিন্তু এই নির্দেশনা কেউ মানে না। রাজধানীর নামি-দামি স্কুল থেকে মফস্বলের স্কুল সবাই শামিল হয়ে থাকে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় ও বেতন বাড়ানোর প্রতিযোগিতায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ বাড়তি ফি আদায় নিয়ে নানা অজুহাত দাঁড় করায়। তাদের অজুহাতের কাছে অভিভাবকরা এক প্রকার অসহায়। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশের স্কুলগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এই সময় রাজধানীসহ দেশের বড় শহরে নামি-দামি স্কুলে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। জানা যায়, প্রতি বছর ঢাকায় গড়ে ২ থেকে আড়াই লাখের বেশি শিশু প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু মাত্র ৪৫-৫০ হাজার শিশু পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে পারে। অভিভাবকরা নামকরা স্কুলে নিজ সন্তানকে ভর্তি করানোর জন্য যুদ্ধ শুরু করেন। আর সুযোগটি কাজে লাগান বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

আমরা লক্ষ করেছি, নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সময় ও এসএসসির পরীক্ষার ফরম পূরণের সময়টাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি অর্থ আদায়ের একটা বড় মওকা হিসেবে নেয়। সরকারের নীতিমালা, মন্ত্রণালয়ের আদেশ-নির্দেশ কোনো কিছুই তাদের নিবৃত্ত করতে পারে না। উদ্বেগের ব্যাপার হলো- দেশে আইনকানুন আছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আইনকানুন, বিধিবিধান মেনে চলছে কিনা তা দেখার জন্যও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি সেই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা কাজ করে না। আমরা বুঝতে পারছি না অনিয়মকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতা কোথায়? এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার শক্তির উৎসই বা কোথায়? আমরা চাই, স্কুল কর্তৃপক্ষ যাতে ইচ্ছেমতো বাড়তি বেতন-ফি আদায় না করতে পারে তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে সরকার কঠোর হোক। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক। দেশের সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিধিবদ্ধভাবে পরিচালনা যে কোনোভাবেই নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App