×

মুক্তচিন্তা

সিপিএ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:৪৬ পিএম

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ এখন খুবই জরুরি। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই যৌক্তিক বিষয়টি সিপিএ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

ঢাকায় চলমান কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসেসিয়েশন-সিপিএ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারকে চাপ দিতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সিপিএ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান গুরুত্বসহ বিবেচনা করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং তাদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করে দেয়া শুধু এ অঞ্চলে নয়, এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করেছে। স¤প্রতি মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনমূলক আচরণের কারণে সেখান থেকে ৬ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি অধিবাসী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মিয়ানমারের এই বর্বরতা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচিত হচ্ছে। সিপিএতেও প্রসঙ্গটি উপস্থাপন খুবই যুক্তিযুক্ত।

পহেলা নভেম্বর থেকে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন-সিপিএর ৬৩তম সম্মেলন শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। আট দিনব্যাপী এই সম্মেলন চলবে। এবার সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘কনটিনিউনিং টু এনহান্স দ্য হাই স্ট্যান্ডার্ড অব পারফরম্যান্স অব পার্লামেন্টারিয়ানস অর্থাৎ সংসদ সদস্যদের উচ্চমানের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি অটুট রাখা।’ কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) এ সম্মেলনে ৫২টি দেশের ১৮০টি জাতীয় এবং প্রাদেশিক সংসদের সংসদ সদস্যসহ প্রায় সাড়ে পাঁচশর বেশি প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৫৬ জন স্পিকার এবং ২৩ জন ডেপুটি স্পিকার রয়েছেন। প্রসঙ্গত, কমনওয়েলথভুক্ত ৫২টি রাষ্ট্রের জাতীয় পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক পার্লামেন্টসহ মোট ১৮০টি ব্রাঞ্চ সমন্বিত একটি ঐতিহ্যবাহী এসোসিয়েশন সিপিএ। যার সদস্য ১৭ হাজার আইনপ্রণেতা। সংস্থাটি সংসদীয় গণতন্ত্রকে সুসংহত করা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জনগণের ক্ষমতায়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ২০১৪ সালে সিপিএর ৬০তম সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সিপিএর চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। শিরীন শারমিন চৌধুরী অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারের সম্মেলনে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। আশা করছি, নতুন যিনি আসবেন তিনিও মানবতার কল্যাণে কাজ করবেন।

সিপিএ সম্মেলনের এ সময়ে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা সংকট। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সেনা অভিযানকে জাতিগত উচ্ছেদ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করছে জাতিসংঘ। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের সদিচ্ছার তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বরং অব্যাহত রয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। এ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ এখন খুবই জরুরি। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই যৌক্তিক বিষয়টি সিপিএ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে সিপিএ সম্মেলনের গুরুত্ব রয়েছে। স্থিতিশীল বিশ্ব পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে এই সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আসা জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App