×

মুক্তচিন্তা

আয়কর প্রদান পদ্ধতি সহজ হোক

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:৩৮ পিএম

দেশের নাগরিক হিসেবে টিআইএন থাকা একটি গর্বের বিষয়। দুনিয়ার সব উন্নত দেশেই আয়কর দেয়ার সুন্দর সংস্কৃতি বিরাজমান। আয়কর দিয়ে নাগরিকরা দেশমাতৃকার সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখেন। সুনাগরিক হওয়ার পূর্বশর্ত আয়কর দেয়া এবং অন্যকে তা দিতে অনুপ্রাণিত করা। এজন্য চলমান রাজস্ব সংস্কৃতি চর্চা আরো সুসংহত করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উদ্যোগে আয়কর মেলা চলছে। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে চলবে সাতদিন। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে ১৬১টি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলাও চলছে। আশা করা যায় এই মেলা নতুন করদাতার সংখ্যা বাড়াতে ভ‚মিকা রাখবে। স্বীকার করতে হবে, নাগরিকদের মধ্যে আয়কর দেয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। তারপরও কর প্রদানের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে এখনো ভীতি কাজ করছে। আয়কর বাড়ানোর জন্য এনবিআর ও আয়করদাতার মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক জরুরি।

করদাতাদের উৎসাহিত করতে ২০১০ সাল থেকে আয়কর মেলা শুরু হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে আয়কর মেলায় সেবা নিয়েছেন ৯ লাখ ২৯ হাজার ব্যক্তি, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার বেশি। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৪ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দেয়ার বিপরীতে ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা আয়কর দিয়েছেন। নতুন ই-টিআইএন নেয়ার মাধ্যমে করের খাতায় নাম লিখিয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৫৩ জন। এবার ৫ লাখ নতুন করদাতা সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে আয়কর মেলার আয়োজন করছে এনবিআর। সারাদেশে মেলায় ১৫ লাখ করদাতাকে সেবা দেবে সংস্থাটি। অন্যান্যবারের মতো মেলায় করদাতাদের সব ধরনের তথ্যসেবা দেয়া হবে। উদ্দেশ্য মহৎ, তাতে সন্দেহ নেই। মাত্র দেড় দশক আগেও আমাদের উন্নয়ন বাজেটের আকার ছিল ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এখন তা অন্তত ১০ গুণ বেড়েছে। একইভাবে বাড়ছে রাজস্ব আয়। এ প্রশ্নও সঙ্গত যে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যেভাবে ঘটছে সে তুলনায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর আদায় হচ্ছে কিনা? আয়কর প্রদানে বাংলাদেশের বহু মানুষের অনীহা একটি সর্বজনস্বীকৃত বিষয়। এ অনীহার জন্য দায়ী কিছুটা আয়কর ব্যবস্থাও। আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানিও কম দায়ী নয়। সুনাগরিকরাও আয়কর প্রদানের বিদ্যমান পদ্ধতিতে অস্বস্তি বোধ করেন। দেখা গেছে, একজন নাগরিককে করদাতা হওয়ার জন্য কেন ৮ পৃষ্ঠার বিশাল গাইডলাইন পড়ে পূরণ করতে হয়। সেখানে নানা ইতিহাস লেখার বাধ্যবাধকতা থাকায় করদাতা ভীতসন্ত্রস্ত হবেন, তা বলাই বাহুল্য। এর পরিবর্তে সীমিত আকারে কেবল করদাতার নাম-ঠিকানা, গাড়ি-বাড়ি, আয়-ব্যয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্পদ ও আয়ের অন্যান্য উৎস জানানোই যথেষ্ট হতে পারে। একই সঙ্গে বারবার একই ফর্ম পূরণ বাধ্যতামূলক না করে একবার পূরণ করা ফর্ম প্রয়োজনে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

বর্তমান সরকারের আমলে আয়কর ব্যবস্থায় গতি আনতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও পদ্ধতিগত জটিলতা এখনো পুরোপুরি দূর করা যায়নি। আমরা মনে করি, কর দেয়ার পদ্ধতি যদি সহজ হয় এবং করদাতার কোনো ধরনের হয়রানির মুখে পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তবে অবশ্যই মানুষ কর দিতে উৎসাহী হবে। দেশের নাগরিক হিসেবে টিআইএন থাকা একটি গর্বের বিষয়। দুনিয়ার সব উন্নত দেশেই আয়কর দেয়ার সুন্দর সংস্কৃতি বিরাজমান। আয়কর দিয়ে নাগরিকরা দেশমাতৃকার সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখেন। সুনাগরিক হওয়ার পূর্বশর্ত আয়কর দেয়া এবং অন্যকে তা দিতে অনুপ্রাণিত করা। এজন্য চলমান রাজস্ব সংস্কৃতি চর্চা আরো সুসংহত করতে হবে। এতে আমাদের তরুণ সমাজ আরো এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App