×

ফিচার

সুরের দীর্ঘ সংসার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০১৭, ০৫:১৮ পিএম

১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর ঘর বাঁধেন গীতিকার কবির বকুল ও কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি। ২০ বছর পূরণ হলো এই দম্পতির সংসারধর্মে দীক্ষিত হওয়ার। সঙ্গীতাঙ্গন যখন বিয়ে বিচ্ছেদের পুনঃপুনঃ খবরে মর্মাহত, তখন বকুল-মুন্নিরা টিকে থাকার দৃষ্টান্ত তৈরি করছেন। সুরের ভুবনে আরো কিছু মজবুত যুগলবন্দি রয়েছে। তেমনই কয়েকজন দম্পতির দীর্ঘ সংসারের গল্প বলছেন স্বাক্ষর শওকত
কবির বকুল ও দিনাত জাহান মুন্নি জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি ও গীতিকার কবির বকুল তারকা দম্পতি। একজন গীতিকার, অন্যজন গায়িকা। কবির বকুলের লেখা অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন দিনাত জাহান মুন্নি। গানের সূত্র ধরেই কবির বকুল ও দিনাত জাহান মুন্নি ঘর বেঁধেছেন ভালোবেসে। ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। চলতি বছর তাদের বিয়ের দুই দশক পূরণ হলো। কবির বকুল তাদের দুজনের সম্পর্কের ব্যাপারে বলেন, মুন্নিকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনতাম। আমাদের দুজনের বাড়ি চাঁদপুরে। ওর ছোট মামা ছিল আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। সেই সম্পর্কের সূত্রে আমাদের পরিচয়, কিন্তু চাঁদপুরে থাকা অবস্থায় আমি কখনো চিন্তা করিনি মুন্নির সঙ্গে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হবে। ঢাকায় আসার অনেক বছর পর মুন্নিকে একদিন হঠাৎ দেখে আমার মনে হয়েছিল, আমি মনে মনে এই মেয়েটিকে বুঝি খুঁজছি। মুন্নিও তখন স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকে। বকুল মুন্নিকে প্রেম নয়, প্রথমেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বকুল জানান, ওকে সরাসরি একদিন বলেছিলাম, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তুমি রাজি থাকলে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে চাই। মুন্নি আমাকে সে দিন ফিরিয়ে দেয়নি। প্রস্তাব দেয়ার পর পারিবারিক আয়োজনে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। কিরণচন্দ্র মজুমদার ও চন্দনা মজুমদার দুজনই কণ্ঠশিল্পী। দুজনের প্রথম পরিচয় ১৯৭৯ সালে, একটি গানের আসরে। কিন্তু তেমন কথা হয়নি সে দিন। আমরা প্রেম করে বিয়ে করিনি। কিন্তু মনের যোগাযোগটা হয়তো ছিল। চন্দনার কথার রেশ না কাটতেই কিরণচন্দ্র রায় বলা শুরু করেন, গানের জন্য আমাদের বাসায় চন্দনা মাঝেমধ্যেই আসত। আমরা তখন গুরুদুয়ারা নানকশাহীতে থাকতাম। আমার মা চন্দনার গান শুনে, ওর সঙ্গে কথা বলে ওকে পছন্দ করেন। তারপর পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়ে হয়। ১০ বছর পর ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ তাদের বিয়ে হয়। দেশ-বিদেশের মঞ্চে, বেতার-টেলিভিশন, রেকর্ডিংয়ে দিন কাটে তাদের। কিরণচন্দ্র রায় বিয়ের পর চন্দনাকে বলেছিলেন তোমাকে সংসারের কিচ্ছু দেখতে হবে না। তুমি শুধু গান গাইবে। কিন্তু গানের পাশাপাশি শক্ত হাতে সংসারকেও সামাল দিচ্ছেন চন্দনা। বিয়ের পর প্রথমদিকে একসঙ্গে রেওয়াজ করলেও এখন করেন না। দুজন লোকগানের শিল্পী হলেও গান গাওয়ার ধরন, বোধ-ভাবনায় পার্থক্য অনেক। একমাত্র মেয়ে শতাব্দী রায় পিংকি কলকাতায় বিবিএ পড়ছেন। সেই সঙ্গে শুদ্ধ সঙ্গীতের তালিমও নিচ্ছেন। পিংকি বাড়িতে থাকলে মাঝেমধ্যেই রাতের বেলা গানের আসর বসান তিনজনে। সেলিম আশরাফ ও আলম আরা মিনু জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আলম আরা মিনু। বাবার চাকরির সুবাধে একাধিক স্কুলে পড়তে হয়েছে তাকে। কখনো ঢাকায় কখনো বা আবার চট্টগ্রামে। বেশিরভাগ স্কুলেই খুব বেশিদিন স্থায়ী হতে পারতেন না। তবে আমার প্রথম বিদ্যাপীঠ ছিল জুরাইনের একটি স্কুল। মিনু বলেন, আমাদের পরিবার অনেক নিয়ম-কানুনের মধ্যে পরিচালিত হতো। এজন্য প্রেম করার সুযোগ হয়নি। এমনকি কেউ প্রেমের প্রস্তাব দেয়ারও সুযোগ পায়নি। তবে আমার ১৬ বছর বয়সে সেলিম আশরাফ বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এরপর পরিবারের সম্মতিতে তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। তার সঙ্গে সবার দোয়া ও ভালোবাসায় সুখের সংসার করছি। গত বছর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেলিম। তখন মিনু দেশবাসীর কাছে স্বামীর জন্য সহযোগিতা চেয়েছিলেন। স্বামীর পাশে থেকেছেন যোগ্য স্ত্রীর মতোই। মইনুল ইসলাম খান ও কনকচাঁপা কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপার কিশোর বয়স থেকেই সুরকার মইনুল ইসলাম খানের সঙ্গে পরিচয়। বিটিভির ‘নতুন কুঁড়ি’র শিল্পী ছিলেন কনকচাঁপা। সেখানেই দুজনের দেখাসাক্ষাৎ হতো। কনকচাঁপার প্রথম গাওয়া গানের সুরকার ছিলেন সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খান। প্রথম গাওয়া গানের সুরের প্রেমে পড়েছিলেন কনকচাঁপা। এক সময় সুর থেকে সুরকারের প্রতি ভালো লাগা স্থানান্তরিত হয়ে যায়। বছর দুয়েক যেতে না যেতেই পারিবারিকভাবে তাদের দুজনের বিয়ে হয়। দিনটা ছিল ১৯৮৪ সালের ৬ ডিসেম্বর। সেই থেকে আজো আছেন একসঙ্গে, নিরবচ্ছিন্নভাবে। প্রায় তিন দশক একসঙ্গে পার করে দিয়েছেন এই তারকা দম্পতি। রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা ১৯৭৪ সালে আবিদা সুলতানা চলচিত্রে সর্বপ্রথম প্লেব্যাক করেন। এ পর্যন্ত আবিদা ৪৫০টির বেশি চলচিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার’, ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আবিদা। ১৯৭৪ সালে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলমের প্রেমে পড়েন আবিদা। ১৯৭৫ সালে তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ফাহশিদ নামে তাদের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ফাহশিদ এখন ব্যান্ড সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সঙ্গীতাঙ্গনে সুখী দম্পতির কথা বললে অনেকের মনেই ভেসে ওঠে এই জুটির মুখ। ‘যেটুকু সময় তুমি থাক পাশে’ রোমান্টিক গানটির সঙ্গে তাদের ব্যক্তিজীবন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। খায়রুল আনাম শাকিল ও কল্পনা আনাম রবীন্দ্র গানের শিল্পী শাকিল ও কল্পনা। তাদের প্রথম দেখা ছায়ানটে। ১৯৮৬ সালের শেষদিকে। বিয়ের আগে টুকটাক কথাবার্তা হলেও, ঠিক প্রেমটা হয়ে ওঠেনি। কল্পনাকে নিয়ে আগ্রহ দেখাতেই তিনি সোজা পারিবারিকভাবে আলোচনা করার পরামর্শ দেন শাকিলকে। এরপর সময় গড়িয়েছে মাস তিনেক। আলোচনা হয়েছে পারিবারিকভাবে। বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে। গাঁটছড়া বেঁধেই শুরু প্রেমপর্ব। এখনো একই রকম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা একজনের প্রতি অন্যজনের। কে প্রথম ‘ভালোবাসি’ বলেছিল সেটা মনে না থাকলেও আগ্রহটা যে শাকিলেরই বেশি ছিল, সেটা ঠিকঠাক জানান কল্পনা। তিনি বলেন, ছায়ানটে আমাদের এক বন্ধুকে দিয়ে শাকিল আমার খোঁজ নেয়, আমি কাউকে পছন্দ করি কিনা। আমি তাকে জানিয়েছিলাম পারিবারিকভাবে কথা বলতে। সাজেদ আকবর ও সালমা আকবর সঙ্গীতশিল্পী সাজেদ আকবরের জন্ম চট্টগ্রামে। তার মা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং বাবা গোলাম আকবর চৌধুরী। সাজেদ আকবর ওস্তাদ ফজলুল হকের কাছে হিন্দুস্তানি উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এছাড়াও তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর আতিকুল ইসলাম, আবদুল আহাদ, কলিম শরাফী, অজিত রায়, সাদী মোহাম্মদসহ অনেকের কাছেই তালিম নিয়েছেন। বর্তমানে বাফার প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। সাজেদ আকবর বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং গীতাঞ্জলীর সদস্য। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী। সালমা আকবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছায়ানটে গান শিখেছেন। এছাড়াও তিনি ওস্তাদ নারায়ণ চন্দ বসাক, ওস্তাদ আজাদ রহমানের কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিখেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছেন কলিম শরাফী, সন্জীদা খাতুন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং ভারতের কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন এবং সংঘমিত্রের কাছে। সালমা আকবরও বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App