×

মুক্তচিন্তা

হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখা অমানবিক

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:২১ পিএম

বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনার জন্য গোটা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হবে কেন? এ কারণে যারা চিকিৎসা-বঞ্চিত হলেন, দুর্ভোগ পোহালেন, কষ্ট পেলেন- তাদের তো কোনো অপরাধ ছিল না, তাদের কেন জিম্মি করা হলো। এই অমানবিকতার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক সমাজের যেমন, তেমনি সেবা গ্রহীতাদের কাছেও সহিষ্ণু, দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে হাতাহাতি এবং তিন ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকার ঘটনাটি খুবই অনাকাক্সিক্ষত এবং উদ্বেগজনক। দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্লিনিক-হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসা অবহেলায় রোগী মৃত্যুর খবর এখন প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ উদ্বেগের বটে। অন্যদিকে রোগীর সংক্ষুব্ধ স্বজনদের হাতে হাসপাতাল ভাঙচুর বা চিকিৎসক লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়গুলোও কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। জানা গেছে, গত শনিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢামেক হাসপাতালের সিসিইউ-২ তে ভর্তি হন নওশাদ আহমেদ নামের এক রোগী। পরদিন রোববার সকালে তিনি মারা যান। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসকদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রোগীর স্বজনরা ডাক্তারদের ওপর চড়াও হন। এ সময় তাদের আঘাতে একজন ডাক্তার ও দুই আনসার সদস্য আহত হন। পরে হাসপাতালের ডাক্তার, স্টাফ ও আনসার সদস্যরা মিলে রোগীর স্বজনদেরও মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার এই ঘটনায় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগ বন্ধ থাকায় রোগীদের ভোগান্তি ছিল চরমে। সারাদেশ থেকে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যান অন্য হাসপাতালে। কেউ কেউ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় ছিলেন। হঠাৎ সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে হাসপাতালের ফটকে তালা দেয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছিলেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা। বিশেষ করে মুমূর্ষু, বয়স্ক ও শিশু রোগীদের দুর্ভোগ ছিল সবচেয়ে বেশি।

সত্যিই যদি কারো মনে হয় যে তার নিকটজনটি হাসপাতালে অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার শিকার, তাহলে প্রতিকার চাওয়ার অধিকার নিশ্চয়ই তার রয়েছে। তবে আদৌ অবহেলা বা ভুল চিকিৎসা হয়েছে কিনা, তা রোগীর আত্মীয়স্বজন বুঝে না বুঝে চিকিৎসকদের মারধর কিংবা হাসপাতাল ভাঙচুর চালাতে শুরু করবেন, এটা খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। রোগীর স্বজনদের কাছে এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত। অন্যদিকে, মানবসেবার মহান ব্রত পালনের পেশা ডাক্তারি। সেই সেবার শপথ গ্রহণ করেই একজন চিকিৎসক তার সনদ গ্রহণ করেন। কিন্তু মানবসেবার ব্রত নিয়ে কর্মে অবতীর্ণ হয়ে তাদের কারো কারো অনাকাক্সিক্ষত আচরণের কাছে সাধারণ মানুষ অসহায়। কারণ অসুখ-বিসুখে আমাদের তাদের কাছেই যেতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগী মারা গেলে স্বজনরা আহত হবেন সেটাই স্বাভাবিক। যদি তারা চিকিৎসকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত আচরণ বা সেবা না পান তাহলে তারা সংক্ষুব্ধও হতে পারেন। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার কাউন্সেলিংয়ের পাঠও চিকিৎসকদের দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে তারা কতটা অনুশীলন করেন তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। রোগীদের পক্ষে অভিযোগ-অনুযোগ থাকতে পারে, ডাক্তার-নার্সদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হতে পারে, কিন্তু সেটা হাতাহাতি ভাঙচুরে গিয়ে ঠেকবে কেন সেটাই প্রশ্ন? সংশ্লিষ্টরা বলেন, ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগগুলোর যথাযথ ফয়সালা না হওয়ার কারণেই আইন নিজের হাতে নেয়ার প্রবণতা দেখা যায় এ দেশে। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বা আইনি সীমাবদ্ধতা থাকলে তা দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা করা হোক।

বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনার জন্য গোটা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হবে কেন? এ কারণে যারা চিকিৎসা-বঞ্চিত হলেন, দুর্ভোগ পোহালেন, কষ্ট পেলেন- তাদের তো কোনো অপরাধ ছিল না, তাদের কেন জিম্মি করা হলো। এই অমানবিকতার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। ভুল চিকিৎসায় নওশাদ আহমেদ মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি এখন তদন্তসাপেক্ষ। আমরা আশা করব তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাতাহাতি-মারামারির সঙ্গে জড়িতদেরও উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক সমাজের যেমন, তেমনি সেবা গ্রহীতাদের কাছেও সহিষ্ণু, দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App