×

জাতীয়

শিক্ষার্থীদের আমিষের ঘাটতি মেটাতে মনোযোগ দিচ্ছে সরকার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০১৭, ১১:৪২ এএম

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের আমিষের ঘাটতি মেটাতে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা অনুযায়ী মানুষ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। প্রয়োজনের তুলনায় কম পুষ্টি গ্রহণকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার  ১৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এর বড় একটি অংশই শিক্ষার্থী। এই চিত্র মেধাবী জাতি গঠনের অন্তরায়। তাই শিক্ষার্থীদের আমিষের ঘাটতি মেটাতে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপ নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‌‘মিড-ডে মিলে দেওয়া একটি বিস্কুট খেয়ে শিশুদের পুষ্টি পূরণ হবে না। অভিভাবকরাও সচেতন নন। ‌সরকার এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, পুষ্টিহীন শিশুদের পড়াশুনা করালেই মেধাবী প্রজন্ম তৈরি হবে না। বিষয়টি মাথায় রেখেই মিড-ডে মিলে ভারী খাবার যুক্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছি। অভিভাবকদের সচেতন করতেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।‘ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব সালমা জাহান বলেন, ‌‘শিক্ষার্থীদের আমিষের ঘাটতি পূরণসহ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে একটি দিক নির্দেশনামূলক পরিপত্র জারি করছে সরকার। শিক্ষকদের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি পূরণের ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যেই এই পরিপত্র জারি হচ্ছে।‘ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএিস) এক জরিপ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের প্রায় তিন কোটি ১২ লাখ মানুষ প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না, যা মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ এবং মধ্য বয়সী মানুষ। পণ্যের বেশি মূল্য ও অসচেতনার কারণেও এমনটি হচ্ছে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বরাত দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৭০ শতাংশ পুরুষ এবং ৭৫ শতাংশ নারী আয়রন স্বল্পতায় ভুগছে। ভিটামিন ‘এ‌’ এর ঘাটতি ৮৮ শতাংশ পরিবারে এবং ভিটামিন ‘সি’ এর ঘাটতি ৯০ শতাংশ পরিবারে বিদ্যমান। নারীদের মধ্যে জিংক স্বল্পতা ৫৭ দশমিক তিন শতাংশ এবং পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ৪৪ শতাংশ। ন্যূনতম খাদ্যশক্তির চেয়ে কম পরিমাণে গ্রহণকারী জনসংখ্যার হার ১৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এর মধ্যে বড় একটি অংশই শিক্ষার্থী।‘ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকসহ জনসাধারণকে সচেতন করে শিক্ষার্থীদের আমিষের ঘাটতি দূর করতে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের  ডিম ও দুধসহ পুষ্টিকর খাবার দিতে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে শিক্ষকদের । প্রয়োজনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষিত লোকজনকে এ পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিগগিরই পরিপত্র জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া (ড্রপ আউট) রোধে মন্ত্রণালয় সারাদেশে মিড-মে মিল চালুর উদ্যোগ নেয় ২০১০ সালে। এরপর ঝরে পড়া কমলেও পুষ্টি পূরণ জরুরি হয়ে পড়ে। মেধা বিকাশে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ভারী মিড-ডে মিল চালুর জন্য জেলা প্রশাসকদের সহায়তা চায় মন্ত্রণালয়। শিশুদের মেধাবী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আমিষযুক্ত খাবার দিতে অভিভাকদের সচেতন করার নির্দেশনা দেওয়া হয় শিক্ষকদের। এছাড়া, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য সারাদেশে মিড-ডে মিল চালুর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অন্যদিকে, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয় সরকারের দুই মন্ত্রণালয়। বিদ্যালয়গুলোতে নির্ধারিত সময়ে ক্রিমির ওষুধ খাওয়ানোর বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর একটি নির্দেশনা জারি করে। স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার শেষ দিনে ক্রিমির ওষুধ খাওয়ানো বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App