×

মুক্তচিন্তা

পুলিশ যখন অপহরণকারী

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:২৯ পিএম

 
পুলিশ নিজেই অপরাধী হলে দুর্বৃত্তরা অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া অপরাধ ও দুর্নীতিকবলিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা সম্ভব নয়। সরকারের উচিত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া। যে করেই হোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া রোধ করতে হবে।
কক্সবাজারে একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে সেনাবাহিনীর একটি দল মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ গোয়েন্দা পুলিশের সাত সদস্যকে আটক করেছে। আটককৃতরা কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্য। গত মঙ্গলবার ভোরে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শাপলাপুর এলাকা থেকে ডিবির সদস্যদের আটক করা হয়। পুলিশের কিছু সদস্যের এই ধরনের অপরাধকর্মের খবর প্রায়ই আমরা দেখি। পুলিশ-গোয়েন্দাদের কাজ জননিরাপত্তা দেয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের এ ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ততা সাধারণ জনগণের আস্থায় চিড় ধরবে এটাই স্বভাবিক। খবরে প্রকাশ, টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবদুল গফুরকে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁ থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে একটি বাড়িতে জিম্মি করে রেখে রাতভর নানাভাবে নির্যাতন করে, পরে রাত আড়াইটার দিকে মেরিন ড্রাইভে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে ৫০ লাখ টাকা। অনেক দরকষাকষির পর তার স্বজনরা ১৭ লাখ টাকা ডিবির সদস্যদের হাতে তুলে দেয়। পরে আবদুল গফুরের বড় ভাই বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানান এবং তাদের সহযোগিতা চান। বুধবার ভোরে মেরিন ড্রাইভ এলাকায় গফুরকে ছেড়ে দিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয় ডিবি পুলিশের দল। পথিমধ্যে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে ডিবির গাড়িটি সঙ্কেত দিয়ে থামানো হয়। গাড়ি থেকে মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ সময় অভিযুক্ত ছয়জন ডিবি পুলিশকে আটক করা হয়। অভিযুক্ত দুই এসআই, তিন এএসআই ও দুই কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধী ডিবি সদস্যরা সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে, অপহরণকারীর টাকা উদ্ধার হয়েছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- এসব অবশ্যই ইতিবাচক ব্যাপার। উদ্দেশ্যমূলক গ্রেপ্তার, অপহরণ, নির্যাতন, খুনের মতো বড় বড় অপরাধকর্মেও এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। আবার ডিবি পোশাকে বা ডিবি পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তারের নামে অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটে চলেছে। বিভিন্ন ঘটনায় ডিবি পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের কাজ অপরাধী দমন। অথচ তারাই অপরাধ ঘটাচ্ছে, অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করছে আর নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী বানাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতিই মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। অপরাধী যেই হোক, তার শাস্তি নিশ্চিত করাই হলো অপরাধ দমনের প্রথম পদক্ষেপ। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার। দুর্ভাগ্যজনক, দেশে কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধ করলে তার উপযুক্ত শাস্তি হয় কমই। বেশিরভাগ সময় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দায়ী পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়। এর অর্থ হলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাউকে সাসপেন্ড করা। সাসপেনশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে আবার চাকরিতে বহাল করা হয়। চাকরিতে বহাল হওয়ার পর শাস্তিপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবার নতুন উদ্যমে আগের মতোই তার অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যায়। বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ এ ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অর্থলিপ্সা বাড়ছে এবং এজন্য তারা গুরুতর অপরাধ সংঘটনেও পিছপা হচ্ছে না। এটি শুধু উদ্বেগজনক নয়, অত্যন্ত বিপজ্জনকও। কারণ এ পরিস্থিতিতে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে পারে। পুলিশ নিজেই অপরাধী হলে দুর্বৃত্তরা অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া অপরাধ ও দুর্নীতিকবলিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা সম্ভব নয়। সরকারের উচিত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া। যে করেই হোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া রোধ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App