×

জাতীয়

জন্মনিয়ন্ত্রণে আগ্রহী হচ্ছে রোহিঙ্গারা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:৪১ পিএম

মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তন করে আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গারা ধীরে ধীরে জন্মনিয়ন্ত্রণমুখী হচ্ছেন। খবর বাসসের।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রায় আড়াইশ’ স্বাস্থকর্মী ক্যাম্পে-ক্যাম্পে গিয়ে ইতোমধ্যে দেড় লাখ নারী-পুরুষকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন করেছেন। এ ছাড়া ১০ হাজার রোহিঙ্গা নারীকে জন্মনিরোধক ইনজেকশন, দুই হাজার পাঁচশ’ নারীকে জন্মনিরোধক ট্যাবলেট ও ৬শ’ পুরুষকে কনডম সরবরাহ করা হয়েছে।

উখিয়া ও টেকনাফের ৬টি স্থায়ী ও ৭টি অস্থায়ী কেন্দ্র থেকে সমগ্র কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু ভট্টাচার্য এসব তথ্য জানান।

ডা. পিন্টু ভট্টাচার্য বলেন, ‘রোহিঙ্গারা জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পুরোপুরি অজ্ঞ ছিলেন। এ বিষয়ে তাদের চরম অনাগ্রহ আমি দেখেছি। আমাদের কর্মীরা তাদের সাথে কথা বলে, বুঝিয়ে মনোভাব পরিবর্তন করে অনেকটা ইতিবাচক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩ হাজারের মতো পুরুষ-মহিলাকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসতে সরকার তিনটি পদ্ধতিতে এগোচ্ছে। তিন মাস মেয়াদি ইনজেকশন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ও কনডম। এ জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা প্রদানে সাতটি মোবাইল মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অলিগলিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতনা সৃষ্টি ও এ বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করছেন। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মীর একই সাথে গর্ভবতী, প্রসূতি, শিশু স্বাস্থ্য ও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা বিষয়েও বিভিন্ন পরামর্শ ও ওষুধ দিচ্ছেন।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ফাতেম খাতুন (২৫) তিন সন্তানের জননী। বাংলাদেশ সরকারের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন কি-না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- ‘আমরা তো বার্মায় এসব কখনও করিনি। আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তবে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর কথা আমার ভালো লেগেছে। আমি ৩ মাসের ইনজেকশন নিয়েছি।’

কুতুপালং ক্যাম্পের অপর রোহিঙ্গা নারী সখিনা বেগম বলেন, মিয়ানমারে জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। বিষয়টি আমরা জানি না। এ জন্য কোনও চিকিৎসা সেবাও পাইনি। কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারি। স্বাস্থ্যকর্মীদের কথামত আমি ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করেছি।

বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবক কলিম উল্লা বিয়ে করেছেন সাড়ে তিন বছর। এরই মধ্যে তার দুই সন্তান। আর সন্তান না নিয়ে এই দুই সন্তানকে ভালোভাবে মানুষ করলে কেমন হয়? এই মন্তব্যের উত্তরে কলিম বলেন, ‘আমার স্ত্রী বলে সন্তান হলে আমি না নেয়ার কে? বাংলাদেশে আসার পর থেকে অনেক ডাক্তার আমাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বলেছেন। কিন্তু আমার স্ত্রী রাজি হচ্ছে না। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।’

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী পুরুষের জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় রাখাইনে জনসংখ্যার হার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। একেকটি দম্পতির পাঁচ থেকে ১০ জন সন্তান রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে এই সংখ্যা আরো বেশি। এ কারণে বাংলাদেশে পলিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যকই শিশু। অনেক রোহিঙ্গা নারী গর্ভবতী অবস্থায় রয়েছেন। অনেকে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে সন্তানও প্রসব করেছেন। ফলে রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App