সিলেটের নাজুক সড়ক-মহাসড়ক দ্রুত সংস্কারে উদ্যোগ দিন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:২৪ পিএম
সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কগুলোর বেহাল দশার চিত্র প্রকাশিত হয়েছে গতকালের ভোরের কাগজে। অফুরন্ত সম্পদের ভাণ্ডার আর সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি সিলেট। এই বিপুল সম্পদ আহরণ ও পরিবহনের জন্য প্রতিদিন হাজারো যানবাহনের চলাচল এই অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কে। অন্যদিকে বৈচিত্র্যময় অপরূপ প্রকৃতির টানে প্রতিদিন এখানে ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক। যা সিলেটের অর্থনীতিকে সচল রাখছে, প্রতিনিয়ত করছে সমৃদ্ধ। অথচ এই অঞ্চলের সড়ক মহাসড়কগুলোর প্রায় পুরোটাই ভাঙাচোরা। পিচ উঠে গেছে। অনেক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। যানবাহন চলাচল কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। ভোরের কাগজের পৃথক চারটি সরজমিন প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর যে দুরবস্থা এবং জনভোগান্তির চিত্র উঠে এসেছে, তাতে মনে হয়, এগুলো দেখভাল করার কেউ নেই।
রাজধানীর সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের যোগাযোগের মাধ্যম সিলেট-শেরপুর-ঢাকা মহাসড়ক। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিরও ভগ্নদশা। জায়গায় জায়গায় ভাঙা। এর ফলে যাতায়াতে সময় লাগছে বেশি। ভোগান্তিতে যাত্রীরা। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ কোয়ারি ভোলাগঞ্জ থেকে সারা দেশে পাথর পরিবহন হয়। কোম্পানীগঞ্জ এবং গোয়াইনঘাট ও সদরের একাংশের লোকজনেরও সিলেট নগরীতে আসার একমাত্র রাস্তা এটি। জনযোগাযোগ ও অর্থনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির অবস্থা গত ৭/৮ বছর ধরেই নাজুক। ২০১৪ সালের মে মাসে সড়কটি পরিদর্শনে এসে এর বেহাল দশা দেখে এটিকে ‘ক্যান্সার আক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে ২০১৫ সালের এপ্রিলে একনেকে ৪৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার ও পুনর্র্নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হলেও আড়াই বছর পর মাত্র ১০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৩০ কিলোমিটার এই সড়কে কোনো পিচ ঢালাই নেই। জায়গায় জায়গায় গর্ত। বুলডোজার দিয়ে উঠানো হয় গর্তে আটকে থাকা গাড়ি। পাথর বোঝাই ট্রাকের ৩৭ কিলোমিটার যেতে সময় লাগে দু’তিনদিন। চরম ঝুঁকি নিয়েই এই সড়কে যানবাহন চলাচল করছে। পর্যটন এবং বাণিজ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-তামাবিল-জাফলং মহাসড়কেরও অনেক জায়গায় নাজুক দশা। সিলেট শহর থেকে শুরু করে জৈন্তাপুরের চাঙ্গিল বাজার হয়ে তামাবিল ও জাফলং পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া শহর থেকে জৈন্তাপুর পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০টি স্পটে দেখা গেছে রাস্তাজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এসব কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম ক্ষুব্ধ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর তামাবিল পোর্টের সামনের সড়কের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। বড় বড় যানবাহন তো দূরের কথা, ছোট ছোট যানবাহন এমনকি পায়ে হেঁটে মানুষ চলাচল করবে, তারও কোনো উপায় নেই। অথচ ভারত থেকে সিলেট ও ঢাকামুখী অনেক গাড়ি এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করছে। পর্যটকরা এই সড়ক দিয়েই জাফলংয়ে যাতায়াত করেন। তবুও এদিকে কারো দৃষ্টি নেই। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি স্থান। প্রতিদিন সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক থেকে সারীঘাট হয়ে শত শত পর্যটকবাহী গাড়ি ছুটে চলে বিছনাকান্দির পথে। অথচ সারীঘাট-বিছনাকান্দি সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগ চরমে ওঠে পর্যটকদের।
সরকার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে বলে আমরা জানছি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কথায়। আমরা এও জেনেছি যে, বৃহত্তর সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে পর্যটন সম্ভাবনায় রূপ দিতে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সংশ্লিষ্ট এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। পর্যটন খাতে বিশেষ সম্ভাবনাময় সিলেট অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার বেহাল দশা একেবারেইও সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় না। কাজেই সড়ক-মহাসড়কের নাজুক অবস্থায় নির্বিকার থাকা মেটেই বাঞ্ছনীয় নয়। এসব সড়কের ভাঙাচোরা অংশের দ্রæত সংস্কারে ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ একটি সার্বক্ষণিক তৎপরতা হিসেবে সচল রাখতে হবে। উল্লেখ্য, এবার বন্যায় সারা দেশে রাস্তাঘাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষাকালে সাধারণ বর্ষণেও ক্ষতির শিকার হয়েছে অনেক সড়ক-মহাসড়ক। এখন যেহেতু বর্ষাকাল চলে গেছে, বৃষ্টিপাত কমে আসছে, তাই এখন থেকেই সড়ক সংস্কারের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া দরকার।