×

মুক্তচিন্তা

আসা-যাওয়ার পথের ধারে এত অনাচার কেন?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:১৬ পিএম

তিনি ফিরেছেন। তিনি কেন ফিরবেন না? বা ফিরতে আপত্তি কোথায়? বিএনপির যেসব উগ্র ও কট্টর লোকেরা এতদিন বলছিলেন তাকে ফিরতে দেয়া হবে না তারা এখন কী বলবেন? জানি অবশ্য তারা বলবেন, সরকার বাধ্য হয়েছে ফিরতে দিতে। এই এক স্বভাব আমাদের। সব সময় নিজের পাতে ঝোল টানা। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া এ দেশের গণমানুষের নেত্রী কি না এ নিয়ে আওয়ামী লীগাররা বাহাস করলেও মানতে হবে তার একটা ভালো শক্ত জায়গা আছে মানুষের মনে। এটার পেছনে যত নেগেটিভ কারণই থাকুক তিনি ছিলেন এ দেশের কয়েক দফার প্রধানমন্ত্রী। তাকে সামনে রেখে যারা দেশ চালিয়েছিল তারা কী, কেন, কোন উদ্দেশ্যে তা করেছিল আমরা জানি। তারপরও জেনারেল জিয়া আর খালেদা জিয়ার প্রতি সাধারণ জনতা বিশেষত লেখাপড়া না জানা ভারতবিরোধী আর পাকি-প্রেমী মানুষের মনে একটা ভালো শক্ত জায়গা আছে। শুধু তা বললে চলবে না মধ্যবিত্ত বাংলাদেশিদের ককটেল নীতিতে বিশ্বাসী করে তোলা রাজনীতিতে তার দলের অবদান অনেক বেশি। আমি নিশ্চিত এই মুহূর্তে তাকে সুযোগ দেয়া হলে তিনি প্রমাণ করতে পারবেন কতটা জনপ্রিয়তা আছে তার। যারা মনে করেন আমরা ঢালাওভাবে তার বিরোধী তাদের বলি, একটা দেশে বিরোধী দল না থাকলে কী হয় সেটা আমরা সবাই জানি। তাদের গঠনমূলক ভ‚মিকা না থাকলে কী হয় তাও আমরা দেখছি। ফলে তার ফিরে আসার যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু আপনারা মানেন সরকার বা প্রশাসন আপনাদের কিছুই করতে দিচ্ছে না। অথচ কাল যে আপনারা দলে দলে হাজারে হাজারে লাখে লাখে গিয়ে তাকে সংবর্ধনা দিলেন সেটা কীভাবে সম্ভব হলো? কেউ কি আটকালো আপনাদের? না আপনারাই স্বাভাবিক জীবনযাপন আটকে দিলেন প্রিয় নেত্রীকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য?

এ এক অদ্ভুত সংস্কৃতি আমাদের। আমার বেলায় ঠিক আছে। অন্যের বেলায় না। মাত্র ক’দিন আগে আমি একটা লেখার শিরোনাম দিয়েছিলেম, গণসংবর্ধনা চাই না শেখ হাসিনাকে চাই। আজ যদি এমন কোনো কথা আপনাদের বলি আপনারা তেড়ে আসবেন। আমার জন্মগত পরিচয় নিয়ে গালমন্দ করবেন। এটা মানি বিএনপি অনেক দিন থেকে নানামুখী চাপে কিছু করতে পারছে না। তাদের ওপর সরকারি চাপ বা প্রশাসনের চাপ আছে। কিন্তু আপনারা এটা পারলে আন্দোলন পারেন না কেন? পারেন না কারণ মানুষকে মাঠে নামানো সহজ না। প্রশ্ন করবেন খালেদা জিয়া ফেরার সময় কীভাবে হলো তাহলে? সেটা একটা আলাদা অনুভ‚তি হয়তো। সঙ্গে তাকে দেখার বিষয়টাও থাকতে পারে। তাছাড়া কে না জানে শোডাউনের পেছনে থাকে অর্থ প্রলোভন বা প্রচার। সেটা আওয়ামী লীগের বেলায়ও একশ পার্সেন্ট সত্য। মানুষ কীভাবে কেন যায় সেটা আমরা কি কম জানি? আমার জীবনে প্রথম মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়ার ঘটনা এমনই। স্কুল থেকে অভুক্ত ছাত্রদের দলে আমাকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আইয়ুব খান দর্শনে। জেনারেল আইয়ুব ও তার সফরসঙ্গী বা নেতারা তো খেয়ে দেয়ে ভালো গাড়িতে চড়ে এলেন আর আমরা? তপ্ত রোদে খালি রাস্তায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে এক সময় মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়ার দশা। কে কার খবর রাখে বলুন। আমরা ভেবেছিলাম এই পরিবেশ বা এই কালচার এক সময় আর থাকবে না।

আমরা যত সভ্য হচ্ছি, দুনিয়া দেখছি তত দেখছি কোনো উন্নত দেশে এমনকি পাশের দেশেও এসব করে না। তাদের প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী নেতারা কখন আসে কখন যায়, মিডিয়াও বলে না। একজন মানুষের প্রাইভেসি বলেও একটা ব্যাপার থাকে। খালেদা ম্যাডাম ছিলেন অসুস্থ। ফিরে তিনি বলেছেন, এখন ভালো আছেন। তার তো দরকার শান্তি আর নীরবতা। সেটা না করে তাকে এভাবে হৈ হৈ করে বরণ করার কারণ কী? তারচেয়ে কি ঢের ভালো না নিজেদের দল ও দলের নির্বাচনমুখী কাজগুলো ঠিক করা? সাধারণত সংবর্ধনা বিষয়টা হয় কেউ বিজয়ী হয়ে ফিরলে। যেমন বঙ্গবন্ধু ফিরেছিলেন পাকিস্তান থেকে। যেমন নোবেল নিয়ে ফিরেছিলেন ড. ইউনূস। কিন্তু খালেদা জিয়ার অর্জন কী? এবার তো তিনি ব্যক্তিগত কাজে বিদেশে গিয়েছিলেন। বিলেতে থাকা ছেলে ও পরিবারের সঙ্গে একান্ত সময় কাটিয়ে ফিরলেন সেখানে সংবর্ধনার যুক্তিটা কোথায়? এক কথা সরকারি দলের বেলায়ও। নিজেদের পায়ের তলার মাটি ঠিক না করে এমন সংবর্ধনার নামে জনগণকে অশান্তিতে রাখার দায় কে নেবে? একটা কথা মনে রাখা দরকার জনগণ মুখে কিছু না বললেও তারা জানে কখন কী করতে হয়।

এই কালচার বা সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কী অসাধারণ মিল। জেনারেল এরশাদ, জেনারেল পত্নী খালেদা জিয়া, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সবার ব্যাপারে আমরা এ কাজে সমান উৎসাহী। যেসব বিএনপি সমর্থক ও দলের লোকেরা বলছেন এতে মনোবল চাঙ্গা হয়েছে তাদের কাছে জানতে চাই, আজ আপনারা কোথায়? আজ আবার আসবেন পথে অন্য কোনো কারণে? আসবেন না। কারণ সুষ্ঠু রাজনীতি এভাবে হয় না। এভাবে কেউ তা করতে পারে না। আবারো বলি, হয়তো আপনাদের ঝিমিয়ে পড়া মনোবলের জন্য এই কোরামিনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বহুবিধ প্রশ্ন রেখে যাওয়াÑ যানজট, মানুষের দুর্ভোগ, রোগীর অসহায় চেহারা, কারো কাজে যেতে না পারা, কারো অসুস্থতার দায় কোনোদিনও ছেড়ে কথা বলবে না। একটা বিষয় কিছুতেই মাথায় ঢোকে না কোনো নেতা-নেত্রী কোনোদিন কেন বললেন না, এসব করবেন না। এসব কাজে আমি বিব্রত হই। বরং দেখলাম সবাই কোনো না কোনোভাবে এই সংবর্ধনা বিষয়টা উপভোগ করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেক বিষফোঁড়া কথিত সুশীলরা।

এদের কাণ্ড দেখুন। যখন শেখ হাসিনার জন্য এমন কিছু করা হয় তারা প্রতিবাদে অভিমানে দেশের মানুষের জন্য বুক ভাসিয়ে ফেলেন। অথচ এখন তারা চুপ। জানি এর উত্তর আছে কিন্তু বলা যাবে না। কারণ মূলত এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এটাই আমাদের বাস্তবতা। ওই যে বললাম আমাদের ককটেল মন। সেখানে পুরো মুক্তিযুদ্ধ বা উদারতার জায়গা নেই। আছে একমুঠো মুক্তিযুদ্ধ, এক চিমটি প্রগতিশীলতা, এক খাবলা রাজাকারী আর বেশ কিছু অন্ধকার। তবেই না আমরা বাঙালি। যাক ভালোর ভালো তিনি ফিরেছেন, বিদেশে কী করেছিলেন বা কেন করেছিলেন সে কাহিনী এখনো অপ্রকাশ্য। আর এদিকে তার মাথার ওপর ঝুলছে আইনের খড়গ। বিচার যদি সত্যি স্বাধীন হয় বিভাগ যদি সত্যি নিজেদের কথা মেনে চলে তবে আমরা চাই নৈতিক বিচার। আর এটা মনে রাখতে হবে তার বয়স হয়েছে। তাকে যেমন অকারণে অপমান না করা উচিত, তেমনি কৃতকর্ম বা বিএনপির মারমুখী নৃশংস রাজনীতিরও বিহিত চাই বৈকি। এ বিষয়ে সরকারি দলের নেতাদের বলি আয়নায় আপন চেহারা দেখুন। তারপর আঙুল তুলুন। আঙুল তোলার অধিকার আছে কেবল আমজনতার। যারা রাজপথে নৃশংসতার শিকার। যারা হরতাল আন্দোলনে মার খায়। যারা অফিসে যেতে পারে না। যারা চোখ হারায়। যারা প্রাণ হারায়। যারা মির্জা ফখরুল বা কাদের ভাইয়ের কথা আর প্রতিশ্রæতি শুনতে শুনতে ক্লান্ত। কেবল তারাই বলবে এই গণসংবর্ধনার নামে হয়রানি কতটা জরুরি। যত দিন স্তাবক ও মূর্খের হাতে রাজনীতি তত দিন নিস্তার নেই। দুর্ভাগ্য এই দেশ এই মাটির বিজয়ী সন্তান তাজউদ্দীন বা সৈয়দ নজরুল কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ স্বাধীন দেশে গণসংবর্ধনা দেয়নি। তাদের সংবর্ধনা দিয়েছিল মা মাটি আর পতাকা। সে দেশে আজ রাজনীতির নামে নীতিহীনতা আর জনদুর্ভোগ বুঝতে না পারা নেতানেত্রীরা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় স্তাবকতা বন্দি। আমরা কি এ থেকে কোনো দিন মুক্তি পাব না?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App