×

মুক্তচিন্তা

সিপিসি সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্বসহ তোলা হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:৪১ পিএম

আগামী ১ থেকে ৮ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) ৬৩তম সম্মেলন। এ সম্মেলন সামনে রেখে সিপিএ’র চেয়ারপারসন ও জাতীয় সংসদের স্পিকার  ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর মুখোমুখি হয়েছিল ভোরের কাগজ। সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু কতটা গুরুত্ব পাবে; সম্মেলনের নিরাপত্তা; অতিথিদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, গণতন্ত্রচর্চা এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি কীভাবে তুলে ধরা হবে; সম্মেলন থেকে আমাদের প্রাপ্তি কী হতে পারে- ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভোরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার এন রায় রাজা
ভো. কা. : আগামী ১ থেকে ৮ নভেম্বর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের ৬৩তম সম্মেলন উপলক্ষে সিপিএর চেয়ারপারসন ও হোস্ট হিসেবে আপনাদের প্রস্তুতি কী? স্পিকার : আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন আগামী ১ থেকে ৮ নভেম্বর ঢাকায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের ৬৩তম (সিপিসি) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য- ‘কন্টিনিউয়িং টু এনহান্স দ্য হাই স্ট্যান্ডার্ডস অব পারফরমেন্স অব পার্লামেন্টারিয়ানস’। সম্মেলনের বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে চলেছি। সিপিসি সম্মেলনের হোস্ট দেশ আমরা। এবারে সম্মেলনটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি বিগত ৬২তম সম্মেলন থেকে ঠিক হয়ে যায়। কমনওয়েলথভুক্ত ৫২টি দেশের ১৮০টি জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ প্রায় ৬শ’রও বেশি প্রতিনিধি এবারের সম্মেলনে যোগ দেবেন। আমরা প্রস্তুতি হিসেবে ভেন্যু, হোটেল বুকিং, যাতায়াত ব্যবস্থা, আলোচ্য বিষয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া কোথায় কোথায় সম্মেলনের সেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে সিপিএর পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকেই কার্যকরী কমিটিতে বিষয়গুলো নির্ধারণ করে তা সদস্য দেশগুলোর মতামতের জন্য পাঠানো হয়। তাদের এসব বিষয়ের ওপর মতামত ও প্রস্তুতির বিষয় থাকে। এর পরে এসব বিষয়ে সেশনভিত্তিক আলোচনা হবে এবং এ থেকে সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে। কোন কোন সেশনে কারা কারা প্রতিনিধিত্ব করবেন, এসব সেশনে কারা প্রিসাইড করবেন তাও ছোট ছোট কমিটি করে ঠিক করা হয়েছে। ভো. কা. : এবারের সম্মেলনের ভেন্যু কোথায় কোথায়? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : এবারের সম্মেলন মূলত দুটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন শুরু হচ্ছে ১ নভেম্বর। এ দিন অতিথিরা আসবেন। এ দিন স্ট্যান্ডিং কমিটি, স্টিয়ারিং কমিটি, সিডাব্লিউপির (কমনওয়েলথ ওমেন পার্লামেন্টারিয়ান) স্টিয়ারিং কমিটি, কো-অর্ডিনেটিং কমিটি, ছোট শাখা সম্মেলনের সদস্য ও ডেলিগেটরা আসবেন। তাদের অভ্যর্থনা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে। এরপরে তাদের সঙ্গে হোটেল রেডিসন ব্লুতে গ্রুপ মিটিং করব আমরা। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২ নভেম্বর সকাল ৭টা থেকে মূলত কনফারেন্সের বিষয়ভিত্তিক ৫টি সেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে হোটেল রেডিসন ব্লুতে। ১ থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত হোটেল রেডিসন ব্লুতে সম্মেলনের সেশনগুলো হবে। এর পরে ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সিপিসি সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ দিন থেকে অর্থাৎ ৫ থেকে ৮ নভেম্বর এ চারদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রায় ৩২টি সেশনে আলোচনা হবে।
সিপিসি সম্মেলন থেকে আমাদের প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক। বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চাসহ উন্নয়নের নানা বিষয়ে সিপিএভুক্ত দেশগুলো জানতে পারবে। তারা জানবেন আমাদের পার্লামেন্টে কী ধরনের কার্যক্রম হয়। সংসদে আলোচনা হয় কী কী বিষয় নিয়ে। এখানকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কতটা সুদৃঢ়। তাছাড়া আমাদের পার্লামেন্টের নারী সদস্য, তরুণ পার্লামেন্টারিয়ান, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, বাল্যবিয়ে হ্রাস, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী শিক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কে তারা জানবেন। এছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ নানাবিধ উন্নয়ন সম্পর্কে তারা ধারণা পাবেন। আমাদের সম্পর্কে অতিথি দেশগুলো আরো গুরুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক ধারণা নিয়ে যাবেন।
ভো. কা. : ৬৩তম সম্মেলনের উদ্বোধন কে করবেন? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : আসলে ৬৩তম সিপিসি সম্মেলন ১ নভেম্বর শুরু হলেও মূলত ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। পদাধিকার বলে সিপিএর চিফ পেট্রন ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ। আর ভাইস পেট্রন হলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনের রানী সম্মেলন উপলক্ষে তার শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাবেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সম্মেলনের শুভ সূচনা করবেন। ভো. কা. : আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে কী কী রয়েছে? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : এখানে সিপিএভুক্ত দেশগুলোর পার্লামেন্টে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়ানো, নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, নতুন ও যুবক সংসদ সদস্য বাড়ানো, নারী ক্ষমতায়ন, সদস্য দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যেমন- জলবায়ু অভিঘাতজনিত ক্ষতি ও প্রতিকার, জঙ্গিবাদ ও নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্রের দুর্নীতি রোধে সংসদের ভূমিকা, সুপেয় পানি ব্যবস্থায় চ্যালেন্স ও তার মোকাবেলা ইত্যাদি রয়েছে আলোচ্য বিষয়াবলিতে। এছাড়া কয়েকটি ওয়ার্কশপও অনুষ্ঠিত হবে। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। আমাদের চিরায়ত সমস্যা জলবায়ুবিষয়ক ইস্যু, নারীর ক্ষমতায়নসহ চলমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সিপিসিতে আলোচনা হবে। আর সুযোগ বুঝে আমাদের চলমান সমস্যা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও আমরা আলোচনা করতে চাই। সব সদস্য দেশকে জানাতে চাই। ভো. কা. : এবারে সিপিসিতে রোহিঙ্গা সমস্যাটি কীভাবে আপনারা উপস্থাপন করবেন? এ ধরনের বড় ফোরামে উপস্থাপনের জন্য আপনাদের প্রস্তুতি কী? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : হ্যাঁ, বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রধান ও অন্যতম সমস্যা হলো মিয়ানমার থেকে অত্যাচারিত-নিপীড়িত হয়ে রোহিঙ্গাদের এ দেশে শরণার্থী হিসেবে অনুপ্রবেশ। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে (সিপিসি) রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে নিশ্চয়ই তোলা হবে। তবে কীভাবে তোলা যায় তা আমাদের বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা, ৬৩তম সিপিসি সম্মেলনে এটি একটি নতুন ইস্যু। এ সম্মেলনের বিষয়বস্তুগুলো অনেক আগে থেকেই নির্ধারণ করা হয়ে যায়। সেগুলো সদস্য দেশগুলোকে জানানো হয় তাদের মতামত ও আলোচনার জন্য। সে কারণে রোহিঙ্গা সমস্যাটি সাম্প্রতিক ইস্যু হওয়ায় সিপিসির আলোচনার বিষয়বস্তুতে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। নতুন করে নিজেরা আলোচনা করে উত্থাপনের পথ বের করতে হবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ফোরামে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটি খুব ভালোভাবে উত্থাপন করেছেন। তিনি ৫ দফা দাবিও জানিয়েছেন। সেই আলোকে আমাদেরও এটি সিপিসিতে তুলতে হবে। আগত সিপিএর সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে এটি জানানোর সুযোগ নিতে হবে আমাদের, এ সুযোগ হাতছাড়া করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু এটি কীভাবে উত্থাপন করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে, আমি আমাদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিনিধিদলের প্রধান সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করব। কেননা, ৬৩তম সিপিসি সম্মেলনে আলোচনার ইস্যুতে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক আগে থেকেই কার্যকরী কমিটিতে বিষয়গুলো নির্ধারণ করে তা সদস্য দেশগুলোর মতামতের জন্য পাঠানো হয়। তাদের এসব বিষয়ের ওপর মতামত ও প্রস্তুতির বিষয় থাকে। তাই নতুন কোনো ইস্যু এখানে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ নেই। তবে সম্মেলনের ষষ্ঠ দিনে ওয়ার্কশপ এইচ-এ ‘হোয়াট ফ্যাক্টরস ফুয়েল দি রাইজ অব ডিফারেন্ট কাইন্ডস অব ন্যাশনালিজম’ শীর্ষক একটি বিষয়ে আলোচনা হবে। এখানে সিপিএর একটি পার্ট হিসেবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে সম্মেলনে উত্থাপন করতে পারবে। এ ওয়ার্কশপে এটি তোলা যেতে পারে। তবে কীভাবে আমরা ইস্যুটিকে তুলব তা আমাদের আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। এটি কোনো লিফলেট বা বুকলেটের মাধ্যমে আমরা উপস্থিত সদস্য দেশগুলোকে জানাতে পারি নাকি অন্য কোনো উপায়ে আমরা জানাব তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে। তবে এটি নিয়ে সিপিএভুক্ত দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। বাংলাদেশের পক্ষে ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করবেন। এর মধ্যে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ১ জন এমপি, একজন নারী সংসদ সদস্যও থাকবেন। বাংলাদেশের বিষয়টি এ দলটি দেখবে। তাই ডেপুটি স্পিকারসহ বাংলাদেশ পার্টের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বসে আলোচনা করে রোহিঙ্গা ইস্যুটি তোলা হবে। ভো. কা. : এবারে কতগুলো দেশ এখানে আসছে? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : আসলে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের মোট সদস্য হলো ৫২টি রাষ্ট্র। এই দেশগুলোকে ৯টি রিজিয়নে ভাগ করা হয়েছে। এসব দেশের একাধিক সংসদ কক্ষ নিয়ে মোট ৬৫০ জন অতিথি আসবেন। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মিলে ১৮০ জন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দেড়শ জন রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছেন। সব সদস্য দেশ এ সম্মেলনে তাদের প্রতিনিধি পাঠাবেন বলে জানিয়েছে। ভো. কা. : এবারে সিপিএ সম্মেলনের নিরাপত্তা নিয়ে কী ধরনের প্রস্তুতি আপনাদের? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : সম্মেলনে আগত অতিথিদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে সম্মেলন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ নিয়ে আমি পুলিশের আইজি, র‌্যাবের ডিজি, ডিএমপি পুলিশ কমিশনার, ডিবি, আর্মড ফোর্সসহ সবগুলো গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, সিপিসিতে কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হবে না। এছাড়া আমরা কয়েক স্তরের (চার) নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব। বিমানবন্দর থেকে হোটেল পর্যন্ত, হোটেল থেকে সম্মেলনের ভেন্যু পর্যন্ত সব স্থানে আমরা নিরাপত্তা জোরদার করব। এছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী কাজ করবে। আশা করি নির্বিঘেœ আমরা এ সম্মেলন শেষ করতে পারব। ভো. কা. : গুলশানে গত বছরের জুলাইতে হোটেল হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরে সিপিসি সম্মেলন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি, অতিথিরা নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এ দেশে আসতে রাজি না হওয়ায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এরপরে এবারে নতুন করে সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য আপনাকে (বাংলাদেশ) কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : হ্যাঁ, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান হোটেলে জঙ্গি হামলার কারণে আমরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ছিলাম। এ সময় বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলে সিপিএ সম্মেলন এখানে না করার পরামর্শ দেন। সিপিএর কার্যকরী কমিটির সভায়ও নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে অনেক দেশ আসতে অস্বীকৃতি জানায়। সে সময় সম্মেলন করলে তাতে হয়তো অনেক প্রতিনিধি অংশ নাও নিতে পারতেন। উপস্থিতি কম হতো। সে কারণে আমরাও সম্মেলন করা থেকে পিছিয়ে আসি। এরপরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাটিকে গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলা করি এবং এ ধরনের অঘটন যাতে না হয় সে বিষয়ে অধিকতর তৎপর হই। এরপরে ২০১৬ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত ১১-১৭ ডিসেম্বর ৬২তম সিপিসি সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হয় ৬৩তম সম্মেলন আগামী নভেম্বরের ১-৮ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় সিপিএর স্ট্যান্ডিং ও স্টিয়ারিং কমিটি এতে মত দেয়। তারা এ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সেখানেই ঠিক হয় এবারের সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। সদস্য দেশগুলোর বাংলাদেশের ওপর আস্থা রয়েছে বলেই এমন সিদ্ধান্তে আসা গেছে। এটি আমাদের গর্বের বিষয় বটে। ভো. কা. : বিশ্ব গণমাধ্যমকে জানাতে আপনারা কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের (সিপিসি) ৬৩তম সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। সিএনএন, বিবিসি, আলজাজিরা, এনডি টিভি, রয়টারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এছাড়া সংসদ সচিবালয় কাভার করেন এমন সিনিয়র সাংবাদিকরাও আমন্ত্রণ পাবেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করা ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সম্মেলনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার ও সংবাদ কাভারেজসহ সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়। এছাড়া এই সম্মেলনকে মিডিয়া কাভারেজের দিক থেকে সফল করতে জাতীয় সংসদের গণসংযোগ অধিশাখার মিডিয়া সংক্রান্ত উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। ভো. কা. : শুনেছি এখানে আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের (হস্তশিল্প) একটি মেলা হবে বিআইসিসির বাইরে, এটি সম্পর্কে একটু ধারণা দিন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : আসলে ৫২টি দেশের প্রায় ৬৫০ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নেবেন। তারা এ দেশের বহু ভালো মানের পণ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন এ মেলা থেকে। কেননা, আমাদের পণ্য বহু দেশে রপ্তানি হয়। তারা সেখানে বসে বাংলাদেশের পণ্য কেনেন। এখন তারা অনেকেই এ দেশে আসছেন। অনেকেই বাংলাদেশের সুদৃশ্য ও মূল্যবান হস্তশিল্পের জিনিসপত্র কিনতে চান। সে কারণে আমরা বেশ কয়েকটি হস্তশিল্প ইউনিটকে স্টল বরাদ্দ দিচ্ছি। তারা পাট, তুলা, চট, চামড়া, মৃৎশিল্পসহ নানা ধরনের সুদৃশ্য ও মূল্যবাদ জিনিসপত্র বিদেশি অতিথিদের সামনে তুলে ধরবেন। অতিথিরা জিনিসগুলো সম্পর্কে ধারণা নেয়া ছাড়াও এগুলো কিনতে পারবেন। আসলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করা কঠিন। তাই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের একই মেলায় অতিথিরা সব ধরনের জিনিস সম্পর্কে জানতে ও কিনতে পারবেন। এর ফলে আমাদের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বাড়বে অর্থাৎ তারা পরে বিদেশে রপ্তানির জন্য অর্ডারও দিতে পারেন। এ মেলার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের পণ্যের একটি সম্ভার সাজিয়ে বাংলাদেশের কারুকাজ, হস্তশিল্প, মৃৎশিল্পসহ নানাবিধ পণ্য সম্পর্কে অতিথিদের জানাতে চাই। এটিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। ভো. কা. : এবারের সিপিসি সম্মেলনের বিশেষ আকর্ষণ কী? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : সিপিসি সম্মেলনের তাৎপর্য অনেক। এবারে যেহেতু মিয়ানমার থেকে ৪-৫ লাখ রোহিঙ্গা এ দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে, এ ইস্যুটি এতগুলো দেশের সামনে উত্থাপন করা হবে। নিশ্চয়ই আমরা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হব। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ ৩০ বছর বয়সের নিচে। সিপিএ দেশগুলোর পার্লামেন্টে তাদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনা হবে। এ ছাড়া নারী এমপিদের সমস্যা ও তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর বিষয়টিও এখানে খুব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হবে। আমাদের চিরায়ত সমস্যা জলবায়ুজনিত অভিঘাত ও তার মোকাবেলা নিয়ে সদস্য দেশগুলোর কাজ ও তাদের মতামত আমরা জানতে পাব। আমরা নিজেরা কতটুকু এ বিষয়ে কাজ করছি এবং কতটা সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি তা নিয়েও আলোচনা করব। এছাড়া দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি, পার্লামেন্টে জেন্ডার ব্যালেন্স, গণতন্ত্র নিয়ে তরুণদের মতামত ও তাদের নিয়ে আমাদের কাজকর্ম ইত্যাদি বিষয়ে আমরা সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে মতামত বিনিময় করতে সক্ষম হব এ সম্মেলন থেকে। ভো. কা. : সম্মেলন থেকে আমাদের প্রাপ্তির সম্ভাবনা কী? ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : সিপিসি সম্মেলন থেকে আমাদের প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক। বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চাসহ উন্নয়নের নানা বিষয়ে সিপিএভুক্ত দেশগুলো জানতে পারবে। তারা জানবেন আমাদের পার্লামেন্টে কী ধরনের কার্যক্রম হয়। সংসদে আলোচনা হয় কী কী বিষয় নিয়ে। এখানকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কতটা সুদৃঢ়। তাছাড়া আমাদের পার্লামেন্টের নারী সদস্য, তরুণ পার্লামেন্টারিয়ান, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, বাল্যবিয়ে হ্রাস, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী শিক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কে তারা জানবেন। এছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ নানাবিধ উন্নয়ন সম্পর্কে তারা ধারণা পাবেন। আমাদের সম্পর্কে অতিথি দেশগুলো আরো গুরুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক ধারণা নিয়ে যাবেন। যাতে করে তারা জানবেন আমাদের দেশ কত দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। আর সিপিসি সম্মেলন থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আরো সুদৃঢ় হবে। আমাদের প্রতিবেশীসহ কমনওয়েলথ দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। এর ফলে প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশের যেমন সুনাম বাড়বে, তেমনি আমাদের বাণিজ্যিক সম্ভাবনারও উন্নয়ন ঘটবে। প্রসঙ্গত, ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন সংসদীয় গণতন্ত্রকে সুসংহত ও সমুন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে এই সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App