×

জাতীয়

স্যাটেলাইট ছবিতে ‘২৮৮ রোহিঙ্গা গ্রাম পোড়ানোর চিহ্ন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১০:৩১ পিএম

স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, গত ২৫ অগাস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওইসব গ্রামের হাজার হাজার বাড়ি আংশিক বা পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়েছে, যেগুলোর বাসিন্দা ছিলেন মূলত রোহিঙ্গা মুসলমানরা। মঙ্গলবার এইচআরডব্লিউর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে দুটি বিষয় তাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত, সেনা অভিযানের মধ্যে এই জ্বালাও-পোড়াওয়ের মূল লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের গ্রাম। স্যাটেলাইট ছবিতে এমন অনেক জায়গা দেখা গেছে, যেখানে রোহিঙ্গা গ্রামের ধ্বংসাবশেষের পাশেই রাখাইনের বৌদ্ধদের গ্রাম রয়েছে অক্ষত। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার সরকার সেনা অভিযান বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করলেও তারপরও নতুন নতুন গ্রাম জ্বলতে দেখা গেছে স্যাটেলাইট ছবিতে। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ১৮ অগাস্ট প্রথমবারের মত রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ভাষণ দিতে এসে দাবি করেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর রাখাইনে আর কোনো দমন অভিযান চালানো হয়নি। কিন্তু এইচআরডব্লিউ বলছে, ৫ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত ৬৬টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রমাণ তাদের হাতে থাকা স্যাটেলাইট ছবিতে রয়েছে। রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে সমন্বিত হামলার পর ২৫ অগাস্ট থেকে সেনাবাহিনীর এই দমন অভিযান শুরু হয়, যাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে মিয়ানমার সরকার ওই হামলার জন্য রোহিঙ্গা গেরিলাদের একটি দলকে দায়ী করে আসছে। সেনাবাহিনীর অভিযানকে তারা বলছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই’। এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের উপ পরিচালক ফিল রবার্টসন বিবৃতিতে বলেন, রাখাইনের সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কেন পালিয়ে বাংলাদেশে গেছে, ওই স্যাটেলাইট ছবিতেই তা স্পষ্ট। “বার্মিজ মিলিটারি শয়ে শয়ে রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে; হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা পালাতে বাধ্য হয়েছে।” এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনের মংডু, রাথেডং ও বুচিডং এলাকার স্যাটেলাইট ছবি থেকে ৮৬৬টি গ্রামের তথ্য তারা বিশ্লেষণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মংডু এলাকা। ওই এলাকার ৬২ শতাংশ গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়েছে অভিযানের এক মাসের মধ্যে। মংডুর দক্ষিণাঞ্চলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৯০ শতাংশ গ্রাম। কোনো কোনো স্যাটেলাইট ছবিতে বিভিন্ন এলাকায় একসঙ্গে আগুন জ্বলার চিহ্ন পাওয়া গেছে। কোনো কোনো এলাকা জ্বলতে দেখা গেছে বেশ কয়েক দিন ধরে। এইচআরডব্লিউ বলছে, মিয়ানমার সরকার গ্রামে গ্রামে এই নাশকতার জন্য বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও স্থানীয় রোহিঙ্গাদের দায়ী করে এলেও ওই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ কখনও দেখায়নি। পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শতাধিক রোহিঙ্গার সাক্ষাতকার নেওয়ার কথা জানিয়ে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের পেছনে রোহিঙ্গাদের দায়ী করেননি ওই সাক্ষাৎকারদাতাদের কেউ। এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হয়েছে, তার নিরপেক্ষ তদন্ত মিয়ানমার সরকার করেনি, কাওকে বিচারের মুখোমুখিও করা হয়নি। “এই অবস্থায় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে রাখাইনে তদন্ত করার সুযোগ দেয়। “সেই সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর অবিলম্বে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে। রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পেছনে মিয়ানমারের যে সেনা কর্মকর্তারা রয়েছে, তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের পদক্ষেপ নিতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতাও বন্ধ করতে হবে জাতিসংঘের সদস্য সব রাষ্ট্রকে।” ফিল রবার্টসন বলেন, “বার্মায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে লাখ লাখ মানুষের দুর্দশা একই মুদ্রার দুই পিঠ। রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে, সেই সঙ্গে সবার কাছে যেন জরুরি সহায়তা পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে হবে।”  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App