×

শিক্ষা

জালিয়াতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পক্ষে অভিভাবকরাও

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:২৪ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ সেশনে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তিন লাখ টাকার বিনিময়ে প্রক্সি (নিজের পরিবর্তে অন্যেকে দিয়ে) পরীক্ষা দেয়ানোর জন্য ভর্তিচ্ছু তানসেন মিয়া তার বাবাকে রাজী করান। পরীক্ষার দিন তিনি এবং তার বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রক্সিদাতা ধরা পড়লে তানসেন মিয়া তার বড় ভাইসহ আটক হন। প্রক্টর রুমে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথা হয়। তানসেন মিয়া জানান, তার বাবা লাকড়ির ব্যবসায়ী। পড়ালেখার ফাঁকে তিনি ও তার বড় ভাই বাবাকে ব্যবসার কাজে সাহায্য করেন। প্রক্সিদাতাকে দিতে এতো টাকা তানসেন কোথায় পেতো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে তার বাবা তিন লাখ কেনো পাঁচ লাখ টাকাও দিতেন। অন্যদিকে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল যন্ত্র দিয়ে জালিয়াতি করার সময় দেশের স্বনামধন্য এক আবৃত্তি শিল্পীর মেয়ে আটক হন। আটক হওয়ার পর ওই শিল্পী মেয়েকে ছাড়ানোর জন্য সংস্কৃত জোটের এক নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশের জন্য পাঠান। গত সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি পরীক্ষার দিন জালিয়াতির দায়ে কোনো না কোনো ভর্তিচ্ছু আটক হচ্ছেন। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল যন্ত্র দিয়ে জালিয়াতি করার জন্য ১০ জন আটক হয়। তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। ডিজিটাল জালিয়াতি করে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাওয়ার জন্য জালিয়াত চক্রের সঙ্গে ভর্তিচ্ছুর চুক্তি থাকে তিন থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর অভিভাবকরাও এই টাকা দিতে সম্মত হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, এটা অসৎ সমাজের একটা ফসল। অভিভাবকরা বিশ্বাস করতে চান না যে, টাকা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়। দেশের প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতির জন্য তাদের মনে এই রকম বদ্ধমূল ধারণা জন্ম নিয়েছে। এতে তারা টাকা দিয়ে সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চাচ্ছেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ড. শাহ এহসান হাবীব বলেন, অভিভাবকরা রাজী হচ্ছেন কারণ, তারা মনে করছেন প্রশ্নপত্র যেহেতু ফাঁস হয়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে মেধা দিয়ে ভর্তির সম্ভাবনা কতটুকু থাকবে? তা ছাড়া বর্তমানে মানুষের অনেক টাকা। পাশাপাশি মানুষের নৈতিকতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় আমরা সমাজে দেখতে পাচ্ছি। সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি প্রশ্নফাঁসকারী চক্রকে আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App