চিন্তার আরেক নাম ছন্নছাড়া বোলিং
মাসউদ
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ১১:১৪ পিএম
কিম্বার্লিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭৮ রান করেও ১০ উইকেটে হেরেছে মাশরাফি বাহিনী। কিম্বার্লির উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হবে সেটা আগেভাগেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। এই উইকেটে ২৭৮ রানের পুঁজি নিয়ে জেতার আশা করা তাই কঠিন। বড় হারের পর দলের ব্যাটসম্যানদের ওপর সব দায় চাপিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু উইকেট যেমনই হোক, পৌনে তিনশ রান নিয়েও যে বোলাররা প্রতিপক্ষের গায়ে একবারও আঁচড় ফেলতে পারবেন না, এটা আসলে চিন্তার বিষয়। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সাতজন বোলার ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিপক্ষের ব্যাটিংয়ে তেমন আতঙ্ক ছড়াতে পারেননি বোলাররা। বাংলাদেশের বোলারদের নির্বিষ হয়ে পড়া ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। কেন এমন হচ্ছে- এ নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের দায়িত্ব হাতে নেয়ার পর মাশরাফির অধীনে ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্যই বেশি। তার নেতৃত্বগুণ নিয়ে তাই প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। তবে কিম্বার্লিতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে যা হয়ে গেল, সেটা ভাবতে পারেননি কেউই। অন্ততপক্ষে মাশরাফির নেতৃত্বে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০ উইকেটের লজ্জার হারটা মানতে পারছেন না টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক নিজেও। মাশরাফি মনে করছেন, এই ম্যাচে যা হয়েছে সেটা একেবারে ভাবনার বাইরে।
টাইগার অধিনায়কও ভীষণ চিন্তিত দলের বোলারদের নিয়ে। আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক তো মনে করছেন, ভালো বোলিং করলে এই রান নিয়ে জেতাও সম্ভব ছিল, এই উইকেটে ২৭৮ রান নিয়েও জেতা সম্ভব ছিল, যদি আমরা শুরুতে উইকেট নিতে পারতাম। দুই দিক থেকেই আমরা যদি চাপ তৈরি করতে পারতাম, তাহলে হয়তো সম্ভব হতো। এমন উইকেটে জুটি গড়ে বোলিং না করলে উইকেট পাওয়া কঠিন। তবে যা হয়েছে, সেটা একেবারে ভাবনার বাইরে। আমরা একটি উইকেটও ফেলতে পারিনি।
তবে যা গেছে তা তো অতীত। অতীত নিয়ে পড়া থাকার মানুষ নন মাশরাফি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যই উজ্জীবিত করছেন টাইগার দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, আমরা যে বোলিং করেছি, আমি নিশ্চিত সব বোলার চিন্তা করবে এটা নিয়ে। অবশ্যই এই বোলিং তাদের নিজেদের পরিকল্পনায় ছিল না। এখান থেকে অবশ্যই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। গত দুই বছরে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ এগিয়েছে পেসারদের ওপর সওয়ার করে। যে পেস বোলিং বাংলাদেশ দলকে এনে দিয়েছে স্মরণীয় কিছু সাফল্য, সেটিই এখন ব্যর্থ! বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। সেখানেও দেখা গেছে বোলারদের ব্যর্থতার মিছিল। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সেরা বোলিং দেখা গেছে আরেক অনিয়মিত বোলার মোসাদ্দেকের হাত থেকে!
এ বছর ওয়ানডেতে উইকেট পাওয়ার দিক দিয়ে বাংলাদেশের বোলাররা দল হিসেবে আছেন ১২ নম্বরে। বাংলাদেশের বোলারদের চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছে এমনকি আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে বা আয়ারল্যান্ডের বোলাররাও! এ বছর বাংলাদেশের কোনো বোলার ওয়ানডেতে ইনিংসে ৫ উইকেট পাননি। এ বছর বাংলাদেশ ১২টি ওয়ানডে খেলেছে এই যুক্তিতেও সান্ত¦¦না খোঁজা যাচ্ছে না। এই ১২ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলাররা নিয়েছেন ৫৭ উইকেট। অথচ ৭ ম্যাচেই ৫৭ উইকেট আছে আরব আমিরাতের বোলারদের! আর ১২ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বোলাররা তুলে নিয়েছেন ৮৩ উইকেট। ১৩ ম্যাচে আফগানদের উইকেট ৯৪টি!
কিম্বার্লিতে প্রথম ওয়ানডেতে প্রোটিয়ারা বাংলাদেশের দেয়া ২৭৯ রানের টার্গেট পার করে কোনো উইকেট না হারিয়েই। ওয়ানডেতে বিনা উইকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড এটি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপেক্ষ দুই ম্যাচের টেস্টে সিরিজে ১৩১৬ রানে সাকুল্যে ১৩ উইকেট পান টাইগার বোলাররা। আর সফরে টাইগার বোলারদের দুর্দশা দেখে দুঃখিত স্বয়ং প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিও। এখনকার তুমুল প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ দলের জন্য সহমমির্তার অবকাশ নেই। তবে ফাফ ডু প্লেসি বলেন, আমরা সত্যিই ভালো খেলছি। দল আরো একবার দাপুটে নৈপুণ্য দেখাল। আমি এমনটাই চাইছিলাম। তবে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য আমাদের কিছুটা খারাপ লাগছে। এটা ছিল তাদের কঠিন এক সফর। তবে বাস্তবতা এমন নির্মমই।
টাইগার বোলারদের ব্যর্থতা সম্পর্কে সারোয়ার ইমরান বলেন, আমাদের বোলাররা ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে না যে একটা জোরে শর্ট বল করে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে ভড়কে দেবে। দেখলাম অনেকে গায়ের জোরে বোলিং করছে। কিন্তু ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারের ওপরে যাচ্ছে না। এই গা জোরি বোলিংয়ের কোনো মানে হয় না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা কোনো গতিই না। পেস-বাউন্সের চেয়ে আমাদের অ্যাকুরিসি ঠিক করতে হবে আগে। স্পিনে তো কিছুই নেই। কোনো টার্ন নেই। এসব উইকেটে বুদ্ধি করে বোলিং করতে হবে। লাইন-লেন্থ টাইট রেখে যদি গতিতে বৈচিত্র্য আনা যেত, ওদের প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা অবশ্যই ভুল করত।
বোলারদের দুর্দশা সম্পর্কে সাবেক অধিনায়ক ও অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে হয় আপনাকে জোরে বোলিং করতে হবে, না হলে অন্য কিছু করতে হবে। আমাদের বোলাররা ধারাবাহিক জোরে বোলিংও করতে পারছে না। স্পিনাররাও বল ঘোরাতে পারছে না। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা খুব ভালো জানে এই উইকেটে তাদের কীভাবে বোলিং করতে হবে। সেখানে আমাদের বোলাররা কিছু করতে পারছে না। কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের হতশ্রী দশাটা কাটাতে পারেনি। রোববার বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৭৮ রান করেও হেরেছে ১০ উইকেটে। ম্যাচ শেষে যখন সংবাদ সম্মেলনে আসেন টাইগার অধিনায়ক তখন স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে মোস্তাফিজের ইনজুরি প্রসঙ্গ। আর মাশরাফি তখনই জানিয়ে দেন কথাটা, যখন মোস্তাফিজ ব্যথা পেল তখন থেকেই জানি যে ওর আর খেলা হবে না। আমার অন্তত তাই মনে হয়। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে ও খেলতে পারবে না। পরে হয়তো আপনাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলবে আগামীকাল। সেই ম্যাচ খেলতে গতকাল কেপটাউন পৌঁছেছে টাইগাররা। যেখানে মোস্তাফিজের আরেকবার স্ক্যান করানো হবে। সেই স্ক্যান রিপোর্টের পরই মোস্তাফিজের ব্যপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে তার বিকল্পও ইতোমধ্যে ভাবতে শুরু করেছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট।