×

জাতীয়

প্রথম রাউন্ডে সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গাকে কলেরা টিকা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৪৭ পিএম

নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৯ লাখ রোহিঙ্গাকে কলেরা রোগের ভ্যাকসিন (টিকা) দেয়ার কার্যক্রম মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে। তবে প্রথম রাউন্ডে ৬ লাখ ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীকে এ টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১০ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম আউন্ডে ১৬২টি কেন্দ্রে এ টিকা দেয়া হবে। এতে উখিয়ার দুটি ক্যাম্পে ১৫৫টি ও টেকনাফে ৭টি কেন্দ্র প্রতি ৫ জন ভোলেন্টিয়ার কাজ করবে। মঙ্গলবার দুপুরে উখিয়ার বাগঘোনা এলাকায় টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চট্টগ্রামের পরিচালক ডা. এ এম মুজিবুল হক এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও এক সঙ্গে হঠাৎ বেশি সংখ্যক মানুষের অবস্থানের ফলে কলেরার ঝুঁকি দেখা দেয়। এটি পানিবাহিত রোগ হওয়ায় দ্রুত ছড়াতে পারে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কলেরার ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও আশপাশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কলেরার টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারের সিভি সার্জন ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, নিজ দেশে পাশবিক নিপীড়নের শিকার হয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ও ক্যাম্পের আশপাশের ১ বছর থেকে সব বয়সীকে কলেরার টিকার আওতায় আনা হবে। নতুন পুরাতন সব মিয়ানমার নাগরিক এ টিকা পাবে। ৫ বছর ও তার নিচের শিশু-কিশোরদের দুই ডোজ এবং এর ঊর্ধ্ব বয়সীদের এক ডোজ করে কলেরা প্রতিষেধক টিকা দেয়া হবে। রোববার সাড়ে ৬ লাখ ভ্যাকসিন (টিকা) কক্সবাজার এসে পৌঁছেছে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে উখিয়া-টেকনাফের সাড়ে ৬ লাখ এবং ৩১ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২য় পর্যায়ে আড়াই লাখ জনগোষ্ঠীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ রোগ আমরা ইতোমধ্যে বিদায় দিতে সক্ষম হয়েছি, তার অনেকই আবার ফিরে আসছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে। এটি বড় শঙ্কার বিষয়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ রোগগুলো আমরা কখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেব না। সে প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একটি জায়গায় এক সঙ্গে ঘনবসতিতে কয়েক লাখ মানুষ থাকলে যে পরিস্থিতি হয় সে তুলনায় আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। যে পরিমাণ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আসে তা স্বাভাবিকের পর্যায়ে পড়ে। তবে তা যেন কোনো ভাবেই না বাড়ে সেদিকেই আমাদের নজর রয়েছে। এইচআইভি পজেটিভ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আধিক্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চট্টগ্রামের পরিচালক ডা. এ এম মুজিবুল হক বলেন, এটি আমাদের জন্য অতি উদ্বেগের বিষয়। তবে একসঙ্গে খাবার খাওয়া, ঘুমানো বা স্বাভাবিক মেলামেশায় এইডস ছড়ায় না। শুধুমাত্র শারীরিক মিলন ও আক্রান্ত রোগীর রক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগটি ছড়ায়। তাই রোহিঙ্গা নারীদের ব্যবহারে সতর্ক হতে অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো গেলে শঙ্কা অনেকাংশে কমে যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, ঢাকার মহাখালী কলেরা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. তাজুল আসলাম বারীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক সরকারি ২০টি এবং বেসরকারি ২৫টি মেডিকেল ক্যাম্প কাজ করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মোবাইল টিমসহ সরকারিভাবে ৪০ জন ডাক্তার রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ চিকিৎসা পেয়েছে। এদিকে শিশুদের সংক্রামক রোগ ছড়ানোর আশঙ্কায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিকাদান কর্মসূচি নিয়মিত পরিচালনা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যেই ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত আশ্রিতদের হাম-রুবেলা, পোলিও এবং ভিটামিন- এ টিকা খাওয়ানো হয়েছে। উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পে থাকা সব আশ্রিতরাই এ টিকা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে বলে জানান উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও রোগ প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমের সমন্বয়কারী ডা. মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মিয়ানমারের এসব নাগরিক প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে আসছে ঠিকই কিন্তু সেই সঙ্গে তারা নিয়ে আসছে মারাত্মক সব সংক্রামক রোগ। ইতোমধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পে। অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপুষ্টিজনিত কারণে রোহিঙ্গারা সহজেই এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্যই সরকারিভাবে রোহিঙ্গাদের কলেরা টিকা দেয়ার কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App