×

মুক্তচিন্তা

রোহিঙ্গাদের নিয়ে জঙ্গিবাদ বিস্তারের চক্রান্ত রুখতে হবে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:৫৯ পিএম

অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদ বিস্তারের ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলোকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া  দরকার সরকারের নীতিনির্ধারকদের। আমরা বুঝে উঠতে পারি না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর জোরালো অবস্থানের মাঝেও কী করে রোহিঙ্গাদের মাঝে জঙ্গিবাদী প্রচারণা চালানো সম্ভব হচ্ছে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার নির্লিপ্ততা বা গাফিলতি হবে আত্মঘাতী।

রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশেরও কিছু জঙ্গি সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে, দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এরা প্রচ্ছন্ন সমর্থন পেয়ে আসছে- এসব অভিযোগ পুরনো। আবার দেশের ভেতরে জঙ্গি হামলার সঙ্গেও রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে জানা গেছে। এখন রাখাইন থেকে বিতারিত যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা দেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদ বিস্তারের চেষ্টা বলে জানানো হয়েছে গতকালের ভোরের কাগজের একটি সচিত্র প্রতিবেদনে। গুরুতর এ বিষয়ে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ জরুরি।

রিপোর্টেটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যতই দিন যাচ্ছে ততই অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদ বিস্তারের ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কথিত ‘মানবিক সাহায্যে’র অন্তরালে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও এনজিওগুলো বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে। এমনিতেই কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আরাকান প্রদেশ এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম নিয়ে ‘কথিত স্বাধীন ইসলামিক আরাকান রাষ্ট্র’ গড়ার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করে আসছিল। এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্যরা মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলা চালিয়ে আসছে। এর ফলে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব জঙ্গি ইসলামি সংগঠনের সদস্যদের খুঁজতে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন পাড়ায় তল্লাশি ও অত্যাচার চালায়। আর এসব নারী-পুরুষ ও শিশুর ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নানা নির্যাতনের ছবি মুসলিম বিশ্বের কাছে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করে এসব রোহিঙ্গা ইসলামি জঙ্গি সংগঠন সহানুভূতি ও আরো বেশি করে অর্থ সাহায্য আদায়ের কৌশলে ব্যস্ত।

ভোরের কাগজের নিজস্ব অনুসন্ধান, রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে এক সময়ে জড়িত ছিলেন এমন সূত্রসহ বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রে রোহিঙ্গাদের নতুন ১৯টি জঙ্গি সংগঠনের নাম পাওয়া গেছে। এর আগে ২০০৭ পর্যন্ত আরো ১৯টি সংগঠনের নাম পাওয়া গিয়েছিল- যারা বর্তমানেও রয়েছে। রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান ও নিপীড়নের মুখে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে এদেশে আসছে। গত মাসখানেকের মাঝেই তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। তবে এ যাবৎ এদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সবাই যে স্রেফ মুসলিম, মজলুম মুসলিম তা ঠিক নয়, এর মাঝে জঙ্গি সন্ত্রাসীরাও রয়েছে। এর প্রমাণ এই জঙ্গি সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব। রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এদেশের জামায়াত-শিবিরসহ সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর- এটা ইতোমধ্যে প্রমাণিত।

ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে রোহিঙ্গা এবং এদেশীয় ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ও ব্যক্তিরা রোহিঙ্গাদের এই দুর্দশা ও ক্ষোভকে পুঁজি করে উখিয়া-টেকনাফ-কক্সবাজার-নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রকাশ্যেই জঙ্গিবাদের প্রচারণা চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসারসহ বিভিন্ন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার জোরলো অবস্থানের মধ্যেও দোর্দণ্ড প্রতাপে জঙ্গিবাদের নানা ধরনের ভিডিও-অডিওসহ নানা প্রচারণা চালানোর তথ্য জানানো হয়েছে উক্ত প্রতিবেদনে। গত বৃহস্পতিবার র‌্যাব-৭-এর একটি টিম এ ধরনের প্রচারণা চালানোর সময় এক ব্যক্তিকে উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, কক্সবাজারসহ অন্যান্য এলাকাতে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ইসলামি আন্দোলন এবং জঙ্গিবাদের দিকে টেনে নেয়ার জন্য বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মসজিদের বেশ কিছু কথিত মাওলানা প্রকাশ্যে ও গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা কৌশলে নানা ধরনের উসকানিমূলক বয়ান দিয়ে রোহিঙ্গাদের উত্তেজিত করে জঙ্গিবাদে উসকে দিচ্ছে। এসব সংগঠন রোহিঙ্গাদের দলে টেনে রাজনৈতিক শক্তি বাড়ানো ও নাশকতায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে বলে বিভিন্ন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদ বিস্তারের ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলোকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া দরকার সরকারের নীতিনির্ধারকদের। আমরা বুঝে উঠতে পারি না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর জোরালো অবস্থানের মাঝেও কী করে রোহিঙ্গাদের মাঝে জঙ্গিবাদী প্রচারণা চালানো সম্ভব হচ্ছে। এতেই বোঝা যায়, এরা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার নির্লিপ্ততা বা গাফিলতি হবে আত্মঘাতী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App